ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এখন কোন খাদ্যে আর ফরমালিন নেই ॥ সেমিনারে অভিমত

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৬ মার্চ ২০১৬

এখন কোন খাদ্যে আর ফরমালিন নেই ॥ সেমিনারে অভিমত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোক্তার অধিকার রক্ষায় বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সরকার গৃহীত নানা কার্যক্রমের কারণে ইতোমধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে ভেজালমুক্ত খাদ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। ‘ফরমালিনযুক্ত খাবার’ শব্দটি প্রায় বিলুপ্তির পথে, এখন কোন খাদ্যে আর ফরমালিন নেই। দেশের বাজার ব্যবস্থাও সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ভেজালমুক্ত খাদ্য পেতে হলে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধে গণমাধ্যমকেও হতে হবে সোচ্চার। মঙ্গলবার রাজধানীর টিসিবি অডিটরিয়ামে ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস-২০১৬’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও কনজুমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘এ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত খাদ্যকে না বলুন।’ বক্তারা এ সময় এ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত খাদ্যকে বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে এ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিল করার পরামর্শও দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোক্তার অধিকার রক্ষায় বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সরকার গৃহীত নানা কার্যক্রমের কারণে ইতোমধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে ভেজালমুক্ত খাদ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। সরকার ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন পাস করে। এরই মধ্যে এ অধিদফতর অনেক ঐতিহাসিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খাদ্যের ভেজাল নির্মূলে কাজ করায় আজ দেশের মানুষ ফরমালিন মুক্ত খাদ্য খাচ্ছে। ‘ফরমালিনযুক্ত খাবার’ শব্দটি প্রায় বিলুপ্তির পথে, এখন কোন খাদ্যে আর ফরমালিন নেই। ফরমালিন নিয়েও কেউ আর কিছু বলে না, বলতে হয় না। ভোক্তার অধিকার রক্ষায় এটি সরকারের সফলতা। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অগ্রগতিও অব্যাহত রয়েছে। সেমিনারে ‘এ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত খাদ্যকে না বলুন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। প্রাণিখাবারে এ্যান্টিবায়োটিক মেশানোর ফলে প্রাণীর শরীরে এ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট জীবাণু জন্মাচ্ছে উল্লেখ করে আ ব ম ফারুক বলেন, ‘এ্যান্টিবায়োটিক কখনই কোন রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না, রোগ হয়ে গেলে সেই জীবাণুকে মারতে পারে। অথচ আামদের দেশে ও বিদেশে ক্যাটল ফিড, পোল্ট্রি ফিড ও ফিস ফিডের অনেক কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ফিডগুলোতে অনাবশ্যকভাবে প্রাণীদেহ ও মানবদেহে ব্যবহার্য উভয় ধরণেনর এ্যান্টিবায়োটিক মেশাচ্ছে। অসুখ ছাড়া সামান্য পরিমাণে এ্যান্টিবায়োটিক প্রাণী খাবারে মিশিয়ে দেয়ার ফলে প্রাণীর শরীরে এ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট জীবাণু জন্মাচ্ছে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপের তথ্য উল্লেখ করে মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে সারা পৃথিবীতে ৬৩ হাজার ২০০ টন এ্যান্টিবায়োটিক প্রাণীদেহে ব্যবহৃত হয়েছে। এই হারে চললে ২০৩০ সালে যা ১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টনে গিয়ে দাঁড়াবে। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ লোক এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং এদের মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার লোক রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর সংক্রমণে মারা যায়। রেজিস্ট্যান্টের কারণে এ্যান্টিবায়োটিকগুলো ক্রমাগত তাদের কার্যকারিতা হারাচ্ছে বলেই এমনটি ঘটছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল এক হিসেবে জানিয়েছে, জীবাণুর এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্টের কারণে এখন যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে তা কমানো বা বন্ধ করা না গেলে ২০৫০ সালে এশিয়া মহাদেশে ৪৭ লাখ ৩০ হাজার, আফ্রিকাতে ৪১ লাখ ৫০ হাজার, দক্ষিণ আমেরিকাতে ৩ লাখ ৯২ হাজার, ইউরোপে ৩ লাখ ৯০ হাজার, উত্তর আমেরিকাতে ৩ লাখ ১৭ হাজার এবং ওসেনিয়াতে ২২ হাজার মানুষের এই কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। এদের মধ্যে আবার অধিকাংশই হলো শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত রোগী।’
×