ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ ২৮ নৌ-রুট ॥ তিনটি বন্ধের পথে

দক্ষিণাঞ্চলে নৌপথে নাব্য সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৫ মার্চ ২০১৬

দক্ষিণাঞ্চলে নৌপথে নাব্য সঙ্কট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের ১৪শ’ কিলোমিটার নৌপথ নাব্য হারিয়ে নৌযান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অভ্যন্তরীণ ২৮ নৌ-রুট। আরও তিনটি রুট বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। বিভাগের ছয়টি জেলা ও ৪১টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষকে যাতায়াত করতে হয় নৌপথের ওপর ভরসা করে। নৌ-রুট রয়েছে ৮৮টি। এর মধ্যে শীত ও শুষ্ক মৌসুমে ২৮টি রুটে লঞ্চ চলাচল করতে পারে না। ৪৩টি রুটে দোতলা লঞ্চ চলাচল করে। বাকি অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলাচল করে এমএল টাইপের লঞ্চ। বিআইডব্লিউটিএ’র হিসেবে প্রতিদিন গড়ে লক্ষাধিক লোক এসব রুটে যাতায়াত করে থাকেন। প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে ১৪শ’ কিলোমিটার নৌপথই থাকে চলাচলের অনুপযোগী। নাব্য সঙ্কটের কারণে এবারও পাঁচটি নদীর প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় নৌ-চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, এমএল টাইপের লঞ্চ চলাচলের জন্য কমপক্ষে ৮/৯ ফুট পানি প্রয়োজন। ডবল ডেকার লঞ্চের জন্য প্রয়োজন ১৪ ফুট পানি। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস থেকে অব্যাহতভাবে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি কমতে থাকে। ফলে কীর্তনখোলা, লোহালিয়া, বিষখালী, পায়রা, নিশিন্দা, ইলিশা, কালাবদর, তেঁতুলিয়া, গণেষপুরা, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ, ঝুনাহার, ধানসিঁড়ি, আগুনমুখা ও পালরদী নদীর পানি কমে গেছে। এসব নদীতে জেগে উঠেছে একাধিক চর। বরিশাল থেকে ঢাকাগামী ভাষাণচর ও চরনাইন্দাসহ মেহেন্দিগঞ্জের কয়েকটি চ্যানেলের অবস্থা খুবই নাজুক। বন্ধ হওয়ার উপক্রম বরিশাল-ভোলা নৌ-রুট। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে নৌযানগুলো বিকল্প পথে যাতায়াত করে কোনো রকমে সার্ভিস টিকিয়ে রেখেছে। আরও জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল রুট কিংবা বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের জন্য নেই কোনো বিকল্প চ্যানেল। এসব রুটের বড় নৌযানকে জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করেই যাতায়াত করতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএ’র এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, শুধু দক্ষিণাঞ্চলের ১৪শ’ কিলোমিটার নয়, বর্তমানে সারাদেশের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার নৌপথ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ৫ বছর পূর্বেও বিআইডব্লিউটিএ’র অধীনে ড্রেজার ছিল মাত্র সাতটি। বর্তমানে ড্রেজারের সংখ্যা ২৩টি। বেসরকারী ড্রেজারের সংখ্যা ২৯টি। তবুও নাব্য সঙ্কট মোকাবেলা করে নদীর গভীরতা টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। পাঁচ বছর আগেও সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে মোট ড্রেজার ছিল ১৯টি। তখনও নদীর এমন বেহালদশা ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারী কোম্পানি ড্রেজিং করে নাব্য ফেরানোর জন্য ঠিকাদার হিসাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও ড্রেজিং করা হয় কাগজে কলমে। যে কারণে যে সব নদী ভরাট হচ্ছে তা আর প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না। অপরদিকে বরিশাল বন্দরঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর প্রায় অর্ধ কিলোমিটারজুড়ে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলে বিঘœ ঘটছে।
×