ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু মূল পর্বের লড়াই

ভারত-নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি আজ

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৫ মার্চ ২০১৬

ভারত-নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ প্রথম পর্বের খেলা শেষ। স্বাগতিক ভারত ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু টি২০ বিশ্বকাপের ‘আসল’ লড়াই। কাগজে-কলমে যেটি ‘সুপার টেন’ নামে পরিচিত। ঘরের মাটিতে ভারত এবার হট-ফেবারিট। শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে ভাল অবস্থায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি সিরিজ জয়ের পর এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলে আত্মবিশ্বাসী তারা। দলটিতে রয়েছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান ও যুবরাজ সিংয়ের মতো তুখোড় সব ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ে দারুণ করছেন অভিজ্ঞ পেসার আশিষ নেহরা ও স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সঙ্গে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্ষুরধার নেতৃত্ব তো আছেই। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড অবশ্য এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। নাগপুরে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিয়ে জয় দিয়ে শুরু করতে চায় কেন উইলিয়ামসনের দল। দলীয় কম্বিনেশন, সম্প্রতি সাফল্যে শিরোপার অন্যতম দাবিদার ভারতের প্রস্তুতিটা মন্দ হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৫ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হারলেও ধোনিদের পারফর্মেন্স যথেষ্ট উজ্জ্বল। যেখানে বোলিং-ব্যাটিং দুই বিভাগেই দলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মূলত সবাইকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ করে দিতেই অল্পের জন্য হারতে হয় স্বাগতিকদের। ফেবারিট হয়েও তাই সতর্ক ভারত অধিনায়ক,‘ ফরমেটটা যেহেতু টি২০, তাই দুই-তিনটা ওভার খারাপ খেললেই সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে নকআউট পর্বে। সামান্য দু-একটা ভুলই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিতে পারে। ক্ষুদ্র পরিসরে এই ধরনের টুর্নামেন্টে খারাপ দিন বলে কিছু থাকতে পারবে না। তাই বিশ্বকাপটাকে আমরা মোটেই সহজভাবে নিচ্ছি না। আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচের জন্য আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামব।’ ভারতের ব্যাটিং সবসময় বিশ্বসেরা। তাতে যেন বাড়তি মাত্রা যোগ করেছেন রোহিত ও কোহলি। সমস্যা ছিল বোলিং নিয়ে, বিশেষ করে পেস আক্রমণে, সেটিও কেটে গেছে। অভিজ্ঞ অশিষ নেহরার সঙ্গে জাসপ্রিত বুমরা ও হারদিক পান্ডিয়াকে নিয়ে পেস আক্রমণ এখন চমৎকার। স্পিনে সময়ের সেরা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে আছেন রবিন্দ্র জাদেজা। ‘টি২০ বিশ্বকাপে যেটি নিয়ে আমি সবচেয়ে খুশি তা হলো, প্রথম ওভার থেকেই জানি ডেথওভারে কাকে দিয়ে বল করাব। এটা বড় স্বস্তির বিষয়। ৯৯ শতাংশ সময়েই জানা ডেথ বোলিংয়ে কাকে বেছে নেয়া হবে। চমৎকার বিশেষজ্ঞ বোলার থাকায় কাজটা সহজ হয়ে গেছে।’ বলেন ধোনি। প্রতিপক্ষকে সম্মান করছেন টি২০ ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়নাও, ‘নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী দল। কাজটা সহজ নয়। জিততে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। অবশ্যই আমরা এই ম্যাচে জিততে চাই। শুরুটা ভাল হলে পরের ম্যাচগুলোতে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে।’ ২০০৭- প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। এরপর ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতলেও মাঝে তিন-তিনটি টি২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ধোনিদের। গতবার ফাইনালে গিয়েও শিরোপা পুনরুদ্ধার হয়নি, হারতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার কাছে। এবার ঘরের মাটিতে ষষ্ঠ আয়োজনে ফেবারিট ভারতের সামনে বড় সুযোগ। সুপার টেনে শক্তিধর ভারতকে মোকাবেলার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। দারুণ নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭ রানের জয় পেলেও ইংল্যান্ডের কাছে ৬ উইকেটে হারতে হয় উইলিয়ামসনদের। ভারতের মাটিতে ভারতকে হারাতে হলে সামর্থ্যরে পুরোটা ঢেলে দিতে হবে মনে করেন কিউই সেনাপতি, ‘আমাদের অবশ্যই প্রস্তুতি ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ভারতকে হারাতে হলে নিজেদের সামর্থ্যরে পুরোটা দিতে হবে। ভাল খেলার সামর্থ্য আছে সেটি প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ করতে চাই। কারণ এটা গুরুত্বপূর্ণ।’ এ বছর শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সঙ্গে দুটি টি২০ সিরিজেই জিতেছে নিউজিল্যান্ড। তবে সেটি নিজেদের মাটিতে। ভারতের কন্ডিশনে ভাল করাটা তাদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ। ছোট্ট ফরমেটের লড়াইয়ে কিউইদের পারফর্মেন্স খুব বেশি সুখকর নয়। টি২০ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য চতুর্থ হওয়া, সেটি সেই ২০০৭Ñ এর প্রথম আসরে। পরের চারবারই দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হয়। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড কিংবদন্তি মার্টিন ক্রোর মৃত্যু এবং বড় তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের অবসর ব্ল্যাক ক্যাপসদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক চাপ হিসেবে কাজ করবে। প্রথম বল থেকেই চালিয়ে ব্যাটিংয়ের যে ফর্মুলা ম্যাককুলাম আবিষ্কার করেছিলেন, সেটি বয়ে নেয়ার মতো ব্যাটসম্যান দলটিতে কম নেই। যে কোন বোলিং তছনছ করে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন মার্টিন গাপটিল, লুক রনকি, কলিন মুনরো ও কোরি এ্যান্ডারসনরা। মুনরো সম্পর্কে ম্যাককুলাম যেমন বলেছিলেন, ‘মাথা ঠিক রাখলে ছেলেটা ডি ভিলিয়ার্সের ৩১ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু সমস্যা হলো ও প্রতি বলেই ছক্কা মারতে চায়!’ ভারতের পিচে রান আছে। নিউজিল্যন্ড দলে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই, নেই ভারতেরও। তবে ভারতের ব্যাটিংয়ের সামনে বড় পরীক্ষাটা হবে কিউই বোলারদের। অধিনায়ক উইলিয়ামসন যেমন বলেন, ‘পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারের মধ্যে অবশ্যই ওদের দুটি উইকেট তুলে নিতে হবে। এই কাজটা করতে হবে ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদিকে। রোহিত-কোহলিদের বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়া যাবে না।’ কিউইদের অনুপ্রেরণা হতে পারে পরিসংখ্যান। ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত টি২০তে চার দেখায় একবারও ভারতের কাছে হারেনি উইলিয়ামসনরা!
×