ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘের গর্জনে ইডেনে কাঁপছে পাকিস্তান!

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৫ মার্চ ২০১৬

বাঘের গর্জনে ইডেনে কাঁপছে পাকিস্তান!

মিথুন আশরাফ, ভারত থেকে ॥ কত স্বপ্ন, কত আশা; বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। সেই স্বপ্ন, আশা, মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিরকালীন বন্ধু জগমোহন ডালমিয়ার। হঠাৎ করেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। তিনি বিসিসিআইয়ের সভাপতি থাকাকালেই ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সিদ্ধান্ত হয় ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে ডালমিয়ার শহর কলকাতায়, ইডেন গার্ডেনে। নিজেও দেখবেন খেলা। সেই স্বপ্নও মনের ভেতরে লুকানো ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরেই পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন ডালমিয়া। ডালমিয়াহীন ফাইনালই এখন হবে টি২০ বিশ্বকাপে, ইডেন গার্ডেনে। ডালমিয়া না থাকলেও আরেকজন আছেন, যিনিও বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভালবাসেন। তিনি কলকাতার মহারাজ খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুলী। যিনি এখন কলকাতা ক্রিকেটের ‘হর্তা-কর্তা’। ডালমিয়ার স্থানেই তিনি আসীন। ডালমিয়ার স্বপ্নকে তিনিই এখন সফল করবেন। একে তো, বাঙালী। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতি চান গাঙ্গুলীও। তাই ভারত ক্রিকেট দলের সাবেক এ অধিনায়কও বাংলাদেশের বন্ধুই হলেন। ডালমিয়ার স্বপ্ন এখন সফল করবেন গাঙ্গুলী। বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল করবেন কে? কোন স্বপ্ন? টি২০ বিশ্বকাপের ‘সুপার টেন’ পেরিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সফল করতেই ডালমিয়া, গাঙ্গুলীর কলকাতায় এখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। এখান থেকেই ‘সুপার টেনে’র মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। বুধবার পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ দিয়েই সেই মিশন শুরু হবে। এমন একটি জায়গায় আবার খেলবে বাংলাদেশ দল, যেখানে ১৫ বছর আগে খেলেছে। তাও আবার ইডেন গার্ডেনে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর আর কখনই ইডেন গার্ডেনে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। ভারত কখনই বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে খেলার আমন্ত্রণ জানায়নি। তাই সেই ইডেন গার্ডেনে খেলার সুযোগও আর হয়নি। তবে ভারতের মাটিতে ১৯৯০ সালেই এশিয়া কাপে ভারতের সঙ্গে চ-িগড়ে, ১৯৯৮ সালে মোহালি ও মুম্বাইয়ে ভারত, বাংলাদেশ ও কেনিয়াসহ তিনজাতি সিরিজে খেলেছে বাংলাদেশ। এর বাইরে ২০০৬ সালে জয়পুরেও খেলেছে। কিন্তু ইডেন গার্ডেনে আর খেলা হয়নি। এ বছরই ইডেন গার্ডেনে খেলার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে ধরা দেবে। সেটি আগস্টে হতে পারে। প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে ইডেন গার্ডেনে খেলার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। যদি ভারত শেষপর্যন্ত টেস্টে খেলার আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশকে। যতদূর শোনা যাচ্ছে, আগস্টে টেস্টের সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজও হতে পারে। তবে আপাতত বাংলাদেশকে আগস্টের টেস্ট নিয়ে নয়, টি২০ বিশ্বকাপের ‘সুপার টেন’ নিয়েই ভাবতে হবে। যে মিশন শুরু হয়ে যাচ্ছে বুধবারই। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে ‘সুপার টেনে’ খেলা শুরু করার পর ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়া, ২৩ মার্চ স্বাগতিক ভারত ও ২৬ মার্চ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ। এরপরই ‘সুপার টেনে’র মিশন শেষ হবে বাংলাদেশের। যদি সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ, তাহলে পথ আরও বাড়বে। যে পথ ইতিহাসই তৈরি করে দেবে। স্বপ্ন সফল করে দেবে। পারবে বাংলাদেশ তা করতে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘এখন বড় চার ম্যাচের দিকেই নজর দিচ্ছি।’ সেই নজর দিতে ধর্মশালা পর্ব শেষে কলকাতায় চলে এসেছে বাংলাদেশ দল। সোমবার দুপুরে ধর্মশালা থেকে ফ্লাইট ধরে দিল্লী হয়ে কলকাতায় পৌঁছেছে মাশরাফিরা। সোমবার সকালে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা হন তাসকিন আহমেদ। চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা দেন। আজ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তাসকিন। বাংলাদেশ দলের সব ক্রিকেটাররা আজ থেকে ‘সুপার টেনে’র প্রস্তুতিও শুরু করে দেবে। প্রস্তুতি শুরু হবে ইডেন গার্ডেনে। যে স্টেডিয়ামে বর্তমান দলের শুধু সাকিব আল হাসান খেলেছেন। আইপিএলের সুবাদে সাকিব সেই সুযোগটি পেয়েছেন। ভারতে যে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে জিতেছে বাছাইপর্বের দুটি ম্যাচসহ চার ম্যাচে। হেরেছে ৭ ম্যাচে। বাছাইপর্বে খেলতে নামার আগে ভারতের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাছাইপর্ব খেলার সুবাদে মাশরাফিও ভারতের মাটিতে খেলেছেন। সেই টুর্নামেন্টে সাকিবও ছিলেন। এছাড়া বর্তমান দলের আর কেউই ভারতের মাটিতে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলারও সুযোগ পাননি। এবার ধর্মশালা দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। সেই সুবাদে সব ক্রিকেটারই ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। যদিও ‘এ’ দলের হয়ে অনেকেই ভারতের মাটিতে খেলেছেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি। এবার খেলছেন। তবে সর্বশেষ প্রায় তিনবছর আগে ২০১৩ সালে ইডেন গার্ডেনে খেলা হয়েছে। এরপর আর ইডেন গার্ডেনে খেলাই হয়নি। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়েই আবার প্রায় তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের খেলা হবে ইডেন গার্ডেনে। বাংলাদেশকে প্রথমে পাকিস্তানের দিকেই নজর দিতে হচ্ছে। ‘সুপার টেনে’ যে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এশিয়া কাপ শেষে একদিন অনুশীলন করেই ধর্মশালায় খেলতে নামতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এবার ইডেন গার্ডেনে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, এর আগেও আজ একদিনের অনুশীলন শেষেই ম্যাচ খেলতে নামতে হবে মাশরাফিদের। সর্বশেষ লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে জিতেছে। এবার টি২০ বিশ্বকাপেও জেতার আশা আছে। ডালমিয়া, গাঙ্গুলীর কলকাতায় ‘সুপার টেনে’র মিশন শুরু হওয়ার প্রথম ম্যাচেই জিতে যাক বাংলাদেশ, এখন সেই স্বপ্নই আঁকা। তা যদি হয়, তাহলে পরকালে থেকেও নিশ্চয়ই খুশি হবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিরকালীন বন্ধু ডালমিয়া! বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানকে হারিয়ে ‘সুপার টেনে’ দুর্দান্ত শুরু করতে পারে, তাহলে গাঙ্গুলীও তো মহাখুশি হবেন নিশ্চয়ই!
×