ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আচরণবিধি লঙ্ঘনে গৃহীত ব্যবস্থা জানানোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ মার্চ ২০১৬

আচরণবিধি লঙ্ঘনে গৃহীত ব্যবস্থা জানানোর নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে জানাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এতে বলা হয়েছে, ছয়ধাপের ইউপি নির্বাচনের জন্য পর্যায়ক্রমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারা প্রার্থী বা সমর্থকদের কেউ আচরণবিধি মেনে চলছে কিনা সেদিকে কঠোরভাবে নজর রাখবেন। কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা সঙ্গে সঙ্গে ইসিকে জানাতে হবে। ইসির আইন শাখার উপসচিব মহসিনুল হক স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ আর যেসব বিষয় প্রার্থী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে সে বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে। এ জন্য আগের দিনের প্রতিবেদন পরেরদিন সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পাঠানো পাশাপাশি গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য আচরণবিধি লঙ্ঘনরোধে গত ৩ মার্চ থেকে প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরপরও প্রায় সব ইউপিতে প্রার্থী বা তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রায় প্রত্যেকদিনই নির্বাচনী প্রচার প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে চলছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান গোলযোগ-সংঘর্ষ সামাল দিতেও স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসি শাহনেওয়াজ বলেন, কিছু কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে সংঘর্ষ হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার জন্যে বলেছি। কেউ যেন কারও ওপর চড়াও হতে না পারে সে জন্যে পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইউপি নির্বাচনের প্রথম দফায় প্রার্থীরা গত ৩ মার্চ থেকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। ইসির নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার শুরুর দিন থেকেই প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তারা প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি দেখভাল করবেন। এছাড়াও নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ভোটগ্রহণের আগে পরে চারদিনের জন্য ৩ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করার বথা বলা হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে উপজেলায় প্রতি ১ জন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকবে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের আগে পরে তিনদিনের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আদেশও জারি করে। আগামী ২২ মার্চ নির্বাচন ঘিরে রবিশাল বিভাগে ৭৮ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩৫ জন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ২০ থেকে ২৩ মার্চ নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। এসব ম্যাজিস্ট্রেটকে আগামী ১৯ মার্চ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। ইউপি নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে আট বিভাগের ৩৭ জেলার ১০১ উপজেলার ৭৩২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত আসনের সদস্য এবং সাধারণ আসনের সদস্য নির্বাচনে ভোট হবে। তবে এসব উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারের শুরু দিন থেকে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন আচরণবিধি দেখভালের জন্য। এদিকে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীরা সোমবার থেকে মাঠে নেমেছেন। তারা ইসির আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা শুরু করেছেন। ইসি জানায়, দ্বিতীয় দফার প্রার্থীদের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে সোমবার তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারের আর কোন নিষেধাজ্ঞা নেইÑ তবে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার চালাতে হবে অবশ্যই আচরণবিধি মেনেই। সব প্রার্থীকে ইসি প্রণীত আচরণবিধির কপিও দেয়া হয়েছে। এবং তা কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের আচরণবিধি দেখভালের জন্য প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট সোমবার থেকেই দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, প্রথম ধাপের ভোটের জন্য তাদের ইসির সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের কাজ শেষ হয়েছে। তবে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার অবহেলা দেখলেও ছাড় দেয়া হবে না। কারও গাফিলতির কারণে নির্বাচন নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। এজন্যে সব রকম সতর্কতার সঙ্গেই কাজ করবে ইসি। কোন ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। যেখানে অনিয়মের জিরো টলারেন্স দেখাতে বলা হয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সে যে পর্যায়ের হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কাউকে ছাড় না দেয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনের আর বাকি রয়েছে মাত্র ১ সপ্তাহ। আইন অনুযায়ী নির্বাচনে ৩২ ঘণ্টা আগের সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ। এ হিসেবে প্রার্থীরা নির্বচনী প্রচারের জন্য ৫ দিন সময় হাতে পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে। ইসি জানিয়েছে শুধুমাত্র ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতয়েন থাকবে। কেন্দ্র নিরাপত্তার পাশাপাশি মোবাইল ও স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। প্রথম ধাপে নির্বাচনের জন্য প্রায় ৭ হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৭ জন করে পুলিশ ও আনসার এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন করে ফোর্স মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে ১টি করে মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
×