ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চুয়েটের তৃতীয় সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান ভিত্তিক দেশ গঠন করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৫ মার্চ ২০১৬

তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান ভিত্তিক দেশ গঠন করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করা হয়। বন্ধ হয় মানুষের বাক, মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠনে ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছেন। এই রূপকল্প বাস্তবায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সোমবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। এ দেশের রয়েছে বিপুল মানবসম্পদ, উর্বর কৃষিভূমি এবং সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ। জনবহুল এ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। আগামী ২০৫০ সালে বা ২১০০ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত বা বাংলাদেশের অবস্থান কোন স্তরে পৌঁছাবে তা বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেও যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকা আবশ্যক। শিক্ষকদের হতে হবে স্নেহপ্রবণ ও অভিভাবকতুল্য। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এবং একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখবে। গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জীবন চলার পথে তোমরা আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ সোপান অতিক্রম করলে। জীবনের আাসল সংগ্রাম এখন থেকে শুরু হবে। আজকের এ সনদ প্রাপ্তি সেই সংগ্রামে অবতীর্ণ হবার স্বীকৃতিপত্র। মনে রাখতে হবে, তোমাদের এ অর্জনে দেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। তোমরা তোমাদের সেবা, সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দিয়ে এ সনদের মান সমুজ্জ্বল রাখবে। কর্মক্ষেত্রে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেন, মাতৃভূমি এবং এ দেশের জনগণের কথা কখনও ভুলবে না। অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথানত করবে না। সোমবার বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল আলম। সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে আমাদের ‘বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র মহাপরিকল্পনা’ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে অতিসত্তর আমাদের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। ঘন ঘন ভূমিকম্পের আঘাত হানার ঘটনায় প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে করণীয় ঠিক করতে ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আমি আশা করব এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে এবং বাস্তবায়নে চুয়েট এবং এর স্নাতক প্রকৌশলী ও স্থপতিরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে আমার প্রণীত দেশের জন্য প্রথম সেসমিক জোনিং ম্যাপ ও আর্থকোয়াক রেসিটেন্ট ডিজাইন গাইডলাইনে চট্টগ্রামকে মধ্যম ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় বিল্ডিং কোড হালনাগাদ করার সময় নতুন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রামকে উচ্চ ঝুঁকির অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলে ইমারত, সেতু বা অন্য স্থাপনার নকশা ও নির্মাণকে ভূমিকম্পে সহনীয় করার লক্ষ্যে তুলনামূলকভাবে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ভূমিকম্পের আঘাতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে ভয়াবহ। গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ তিনি বলেন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্র্যাজুয়েটদের জ্ঞান ভা-ার সবসময় হালনাগাদ করবে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে শিক্ষার উচ্চমান নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের অর্থনীতি দৃঢ় জ্ঞানভিত্তির ওপর এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়। শিক্ষার যথোপযুক্ত উন্নয়নের জন্য আমাদের গবেষকদের মানোন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের কাজে আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুচিন্তিত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। এর আগে দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে হেলিকপ্টার ক্যাম্পাসে অবতরণ করে। পরে শোভাযাত্রাযোগে দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মঞ্চে আসেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় মঞ্চে অন্যদের মধ্যে ছিলেন চুয়েটের পুরকৌশল অনুষদের ডিন ড. মোঃ হজরত আলী, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ড. আশুতোষ সাহা, যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. মোঃ মাহবুবুল আলম, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন ড. মোস্তাফা কামাল এবং রেজিস্ট্রার ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রী প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ ডিগ্রী প্রদানকারীদের উপস্থাপন করেন। প্রসঙ্গত, এবার সমাবর্তনে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৬০৩ জনকে প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে স্নাতকে ১ হাজার ৫৬৪ জন, স্নাতকোত্তরে ৩২ জন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা চারজন এবং পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে তিনজনকে। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য রাষ্ট্রপতি চারজনকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। সমাবর্তনে এবারই প্রথম পেট্রোলিয়াম এ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগ থেকে প্রকৌশল ডিগ্রী দেয়া হবে। এর আগে বিআইটি পর্যায়ে ১৯৯৮ ও ২০০৩ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২০০৮ ও ২০১২ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
×