ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হলুদ আর সবুজের মহামিলন

রাজশাহীর গাছে গাছে আম-লিচুর গুটি বাতাসে সুবাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৫ মার্চ ২০১৬

রাজশাহীর গাছে গাছে আম-লিচুর গুটি বাতাসে সুবাস

মামুন-অর-রশিদ ॥ বাতাসের সঙ্গে মুকুলের সুবাসিত গন্ধ, সবুজ গুটিতে ভরেছে গাছ। দিনে দিনে বেড়ে উঠছে আমের গুটি। পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিতে শুরু করেছে আম-কড়ালি। আর কিছুদিনের মধ্যে থোকা থোকা আম ঝুলতে দেখা যাবে রাজশাহী অঞ্চলের গাছে গাছে। একইসঙ্গে লিচু গাছেও এখন মুকুলের সুবাসিত মিষ্টি গন্ধ। পরে মুকুল হলেও লিচুর দেখা মিলবে সবার আগে। তাই রাজশাহী অঞ্চলের চাষীরা এখন রীতিমতো পরিচর্যায় ব্যস্ত আম-লিচুর বাগানে। দেশের উত্তরে আম-লিচুর প্রসিদ্ধ জেলা রাজশাহী। ‘আমের রাজ্য’ হিসেবে খ্যাত রাজশাহীতে এখন গাছে গাছে দৃশ্যমান আমের গুটি। এক আম-কড়ালি বলা হয় স্থানীয় ভাষায়। কদিন আগেও যেসব গাছ মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল সে গাছে এখন দৃশ্যমান হয়েছে আমের গুটি। এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য! মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত প্রস্ফুটিত মুকুল ভেদ করে আসা সবুজ আমের গুটি, আর লিচুর মুকুলের ঘ্রাণে আনন্দে নাচতে শুরু করে চাষীর মন। তাই সোনালি স্বপ্নে বিভোর এখন রাজশাহী অঞ্চলের আম ও লিচু চাষী আর বাগান মালিকরা। গাছে দৃষ্টি দিলেই চোখে পড়ে মুকুল ভেদ করা সবুজ আমের গুটি। ইতোমধ্যে আম-কড়ালির ভারে ক্রমেই নুয়ে যেতে শুরু করেছে বাগানের যত আমগাছ। আর নতুন করে মুকুল দেখা দিয়েছে লিচুর বাগানেও। একদিকে আমের গুটি অন্যদিকে লিচুর মুকুলের সুবাসিত গন্ধ যেন মাতাল করছে হৃদয় মন। মৌসুমের এই সময়ে রাজশাহীতে পা রাখলেই প্রথমে নাসিকায় অনুভূত হবে বাতাসের সঙ্গে সুবাসিত কড়া মিষ্টি গন্ধ। পাগলকরা সুবাস, গাছে গাছে ফোটা ছোট ছোট আম আর লিচু সমারোহ। শহর ছেড়ে গ্রামের পথে পা বাড়ালেই এমন দৃশ্যে বিমোহিত হতে হয়। আর লিচুর মুকুলিত বাগানে অন্য এক ঘ্রাণ। বলা হয়, ‘আমের দেশ’ রাজশাহী। তাই গোটা দেশ জুড়ে রয়েছে এখানকার আমের সুখ্যাতি। রাজশাহী অঞ্চলের সারি সারি আম বাগানে পুরো ফাল্গুন মাস ছিল মুকুলের সমারোহ। আর চৈত্রের শুরুতেই দেখা দিয়েছে গুটি গুটি আম। গাছে গাছে এখন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। রাজশাহী অঞ্চলের কমবেশি প্রায় শতভাগ গাছেই মুকুলের পর এসেছে আমের গুটি। ইতোমধ্যে মুকুল প্রস্ফুটিত হয়ে আগাম জাতের কিছু গাছে আমের সবুজ গুটি হয়ে গেছে। এ বছর আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে রাজশাহী কৃষি বিভাগ। আর কৃষকরা বলছেন গাছে গাছে প্রস্ফুটিত আমগুটি দেখে মনে হচ্ছে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে এ অঞ্চলে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীতে বাড়ছে আমের আবাদ। একইসঙ্গে বাড়ছে উৎপাদনও। গত ৮ বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলন ও লাভ দুই-ই ভাল হওয়াতে অনেকেই এখন আম আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। সুমিষ্ট ও রসালো আমের জন্য সারাদেশ খ্যাত ও বিশেষভাবে পরিচিত ‘আমের রাজধানী’ রাজশাহী। রাজশাহীর ফজলি, গোপালভোগ, খিরসাপাত, রানী পছন্দ, ল্যাংড়া, বারি-৩ (আম্রপলি) ও আশ্বিনা জাতের আম দেশসেরা। এছাড়াও রয়েছে গুটি জাতের বেশ কিছু আম। রাজশাহীর প্রায় এলাকাতেই আমের আবাদ হয়। এর মধ্যে বাঘা, চারঘাট ও পবায় আবাদ হয় বেশি। ফলন ও লাভ বেশি হওয়াতে অনেকেই এখন আম আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। অনেকে অন্য ফসলের জমিতে এবং অন্য ফসলের সঙ্গেও আমের আবাদ করছেন। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সূত্র মতে, এবার মৌসুম শুরুতেই গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। রোগ-বালাইও খুব একটা দেখা যায়নি। আবহাওয়া বিশেষ করে কুয়াশা এবার কম থাকায় মুকুলের খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, আগাম জাতের গাছে ইতোমধ্যে গুটি তৈরি হয়ে গেছে। বাকিগুলোতে এ মাসের মধ্যেই গুটি চলে আসবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত আমগাছে মুকুল আসার পর হপার পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী পোকামারা কীট ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেছেন আমচাষীরা। তাঁর মতে, এখন আর অফ ইয়ার বা অন ইয়ার বলে কিছু নেই। পরিচর্যার কারণে মুছে যাচ্ছে অফ ইয়ার- অন ইয়ার, বাড়ছে ফলন। সার, পানি, সেচ, পোকামাকড়, রোগবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যার মাধমে আমের ফলন বাড়ানো সম্ভব। এদিকে রাজশাহীর প্রতিটি লিচু বাগানে ছেয়ে গেছে মুকুলে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলনেরও আশা করছেন চাষীরা। ফলন ভাল পেতে লিচু বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। রাজশাহী নগরীর রায়পাড়া, বুলনপুর, চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে লিচুর বাগানে মুকুলের সমরোহ। এরইমধ্যে গুটি ধরে রাখতে চাষীরা বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ স্প্রেসহ পরিচর্যার কোন ত্রুটিই রাখছেন না। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চায়না-৩, বোম্বাই, কাঠিলাল ও বেদানা জাতসহ বিভিন্ন জাতের লিচুর বাগানগুলোর ৮০ থেকে ৯০ ভাগ গাছেই মুকুল এসেছে। দুর্গাপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামের লিচুচাষী আলমগীর হোসেন জানান, এই উপজেলা থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে লাখ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়েও এ বছর লিচুগাছে ব্যাপক মুকুল এসেছে। চলতি মৌসুমে লিচুর ফলনও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
×