ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরোহিত হত্যার দায় স্বীকার করে জেএমবি সদস্য রমজানের জবানবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ মার্চ ২০১৬

পুরোহিত হত্যার দায় স্বীকার করে জেএমবি সদস্য রমজানের জবানবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ দেবীগঞ্জের শ্রী শ্রী গৌড়ীয় মঠ মন্দিরের পুরোহিত মহারাজ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে মূল খুনী রমজান আলী। তিন মামলায় রিমান্ডে থাকা জামা’আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) সদস্য রমজান আলী আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি-মূলক জবানবন্দী দেয়। সোমবার বিকেলে কঠোর গোপনীয়তা রেখে পুলিশ তাকে দেবীগঞ্জ আমলী আদালতে হাজির করে। এ সময় আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ মার্জিয়া খাতুনের খাস কামরায় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ওই জেএমবি সদস্য কিভাবে পুরোহিতকে নিজে গলা কেটে হত্যা করেছে, এ হত্যাকা-ের উদ্দেশ্য কি ছিল, কেন হত্যাকা- ঘটানো হয়, হত্যাকা-ের ঘটনায় কতজন জড়িত ছিল, মূল পরিকল্পনাকারী ছাড়াও হত্যাকা-ের আগে ও পরে তারা কে কোথায় অবস্থান নেয় ও অস্ত্র-চাপাতি-বিস্ফোরকদ্রব্য কার বাড়িতে কিভাবে লুকিয়ে রাখা হয় পুরো ঘটনার বর্ণনা করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। বিচারক ওই জঙ্গীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন। পুরোহিত হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে এ পর্যন্ত তিন জেএমবি সদস্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করল। জবানবন্দী শেষে রমজান আলীকে বিচারক জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। পরে সন্ধ্যায় কড়া পুলিশ প্রহরায় তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তবে দেবীগঞ্জে পুরোহিত হত্যাকা-ের ঘটনার মামলা ছাড়াও জঙ্গী নেতা রমজান আলীর বিরুদ্ধে নীলফামারী, গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলায় দায়েরকৃত মামলাগুলোতেও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ফলে দিনাজপুর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পঞ্চগড় জেলা কারাগার থেকে সোমবার রাতেই দিনাজপুর নিয়ে যাওয়ার কথা। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জঙ্গী নেতা রমজান আলী বলেছে, পুরোহিত হত্যাকা-ের সঙ্গে ১০ জন জড়িত ছিল এবং নিজেকে মূল হত্যাকারী বলেও স্বীকার করে। জবানবন্দীতে ওই জঙ্গী নেতা জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে গৌড়ীয় মঠ মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যার কোন পরিকল্পনা তাদের ছিল না। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য পঞ্চগড়ের মতো শান্তিপ্রিয় জেলাতে বড় ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ও সজাগ থাকায় সেই পরিকল্পনা তাদের ভেস্তে যায়। কিন্তু জঙ্গীদের উচ্চ পর্যায় থেকে যে কোন ঘটনা ঘটানোর ক্রমাগত চাপে শেষ পর্যন্ত তারা পুরোহিতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে জেএমবি সদস্য আলমগীর হোসেনের বাড়িতে গোপন বৈঠক করে আলমগীরের পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পুরোহিত হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত আরও ৩/৪ জন জেএমবি সদস্যকে পুলিশ খুঁজছে। পুলিশ সুপার মোঃ গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ বলেছেন, পুরোহিত হত্যার রহস্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে উদঘাটিত হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৩ জন আদালতে হত্যাকা-ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় বলে তিনি জানান।
×