ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সদস্যকে গলাকেটে হত্যা, ১১০ নারী-পুরুষকে পুলিশের উদ্ধার ;###;৫০ পুলিশসহ আহত দেড় শ’

গ্রামবাসী-হিযবুত সংঘর্ষে নোয়াখালী রণক্ষেত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ মার্চ ২০১৬

গ্রামবাসী-হিযবুত সংঘর্ষে নোয়াখালী রণক্ষেত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ১৪ মার্চ ॥ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামে হিযবুত তাওহীদ ও গ্রামবাসীর মধ্যে সোমবার দিনব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হিযবুত তাওহীদের দুই কর্মীকে গলা ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে গ্রামবাসীরা। সংঘর্ষ চলাকালে হিযবুত তাওহীদ কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একই সময় স্থানীয় চাষীরহাট বাজারের দোকানপাট, ব্যাংকে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাঁচশতাধিক রবার বুলেট ও অসংখ্য টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রামবাসীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল ও গুলিবর্ষণ করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান ও পুলিশ সদস্য আবদুর রহিম গুলিবিদ্ধসহ ৫০ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়াও হিযবুত তাওহীদ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে আরও দেড়শতাধিক আহত হয়। সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রামবাসীদের কবল থেকে হিযবুত তাওহীদের অনুসারী নারী-পুরুষসহ ১১০জনকে উদ্ধার করে এবং নিহত দুইজনের মরদেহও উদ্ধার করে সোনাইমুড়ী থানায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপক সংঘর্ষ থামাতে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ ইলিয়াছ শরীফের নেতৃত্বে জেলার পুলিশ ছাড়াও লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এবং র‌্যাব ও বিবিজি মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস। এ ঘটনা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান জানান, নিহত দুই ব্যক্তি হিযবুত তাওহীদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাদের নাম ও পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। গুলিবিদ্ধ ও আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, গত কয়েক বছর ধরে ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামে হুমায়ুন খান পন্নীর অনুসারী হিযবুত তাওহীদের কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় মুসল্লিদের নানা বিষয়ে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় মুসল্লিদের অভিযোগ, হিযবুত তাওহীদের কর্মীরা এলাকায় ইসলামবিরোধী নানা কর্মকা- চালিয়ে আসছে। দুই বছর আগে স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে তারা এলাকাছাড়া হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চাষীরহাটে সমাবেশ করে তারা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ করে স্থানীয় মুসল্লিরা। এতে লোকজন আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গতকাল স্থানীয় কয়েকশত এলাকাবাসী সকাল ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেয়। পরে তারা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুনরায় বিক্ষোভ মিছিল করে যাওয়ার সময় চাষীরহাটে মিছিলে বাঁধা দেয় তাওহীদের সদস্যরা। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গ্রামবাসীরা বাজারে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও ব্যাংকে ভাংচুর ও লুটপাট করে। সূত্র জানায়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে সংঘর্ষ পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরে উত্তেজিত জনতা পুনরায় বিক্ষোভ মিছিল করতে করতে হিযবুত তাওহীদের কর্মী-সমর্থক নুরুল হক মেম্বারের বাড়িসহ দুইটি বাড়ির ১০-১২টি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হিযবুত তাওহীদের অনুসারী দুইজনকে গলা ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। এ ছাড়া বেদম মারধর করলে অন্তত ৫০জন আহত হয়। খবর পেয়ে দুপুরে প্রথমে সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতর বয়াবহতা দেখে জেলা সদর দফতরে খবর পৌঁছানো হয়। পরে বিকেলের দিকে পুলিশ সুপার মোঃ ইলিয়াছ শরীফ পিপিএম’র নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরে পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচ শতাধিক রবার বুলেট এবং বেশ কিছু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ গ্রামবাসীদের ধাওয়া দিয়ে তাদের কবল থেকে ১১০জন হিযবুত তাওহীদের অনুসারী নারী-পুরুষকে উদ্ধার করে। পরে গ্রামবাসীরা পুলিশের উপরও চড়াও হয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও গুলিবর্ষণ করে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতির অবনতি হলে পার্শ¦বর্তী লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলা থেকেও পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৭টা) থেমে থেমে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলছিল। এসব ঘটনায় পুলিশ, হিযবুত তাওহীদ ও গ্রামবাসীসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। হিযবুত তওহীদের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর দুই জেলার সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, তাদের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের অন্তত ৫০জন আহত হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান জানান, দিনব্যাপী এ সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপে তিনি ও এক গুলিবিদ্ধ পুলিশ সদস্যসহ ৫০ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচ শতাধিক রবার বুলেট ও অসংখ্য টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বর্তমানে (সন্ধ্যা ৭টা) পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত রয়েছে। তারপরও ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে।
×