ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে শাহজালালের দায়িত্বে ব্রিটিশ সিকিউরিটি কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৫ মার্চ ২০১৬

অবশেষে শাহজালালের দায়িত্বে ব্রিটিশ সিকিউরিটি কোম্পানি

আজাদ সুলায়মান ॥ অবশেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে একটি ব্রিটিশ সিকিউরিটি কোম্পানিকে। ব্রিটিশ সার্ভিস কন্ট্রাক্টরের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতাও হয়ে গেছে। আগামীকাল (বুধবার) এ বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতার পর ২০ মার্চ থেকে তাদের দায়িত্বভার দেয়া হতে পারে। এদিকে ডেভিড ক্যামেরনের চিঠির জবাবও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার দুপুরে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে এই চিঠি হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে গাফিলতির কারণে এবার বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব খুরশিদ আলম চৌধুরীকে অপসারণ করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে সরানোর পরের দিনেই সচিবকে অপসারণ করা হলো। সোমবার সচিবালয়ের ক্যাবিনেট ভবনে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির প্রধান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর তাৎক্ষণিকভাবে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সরিয়ে দেয়া হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ৩১ মার্চের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা শুরুর ডেডলাইন নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেক সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার অজুহাতে যুক্তরাজ্য কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সরকার উদ্বিগ্ন। ব্যবসায়ীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কিভাবে আরও জোরদার করা যায় এ ব্যাপারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। আশাকরি এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের আর কোন উদ্বেগ থাকবে না। এ সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিকমানের নয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সব ধরনের সহায়তা দিতে আশ্বাস দিয়েছি। একটি সূত্র জানায়, ব্রিটিশ তিনটি সিকিউরিটি কোম্পানির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসবেন বিমানমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছে ওয়েস্ট মিনিস্টার গ্রুপ, রেসটাটা ও রেডলাইন। এগুলো থেকে একটিকে চূড়ান্ত করে চুক্তি করা হবে। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি দিয়ে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যুক্তরাজ্যের এ্যাকশন প্ল্যান কার্যকর শুরুর কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহন বন্ধ করার ঘোষণা দেন ক্যামেরন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ৩১ মার্চের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা কার্যকর শুরু না করলে বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যাত্রীবাহী বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় সরকারের টনক নড়ে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে সরকার। এর আগে অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সোমবার বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ধরনের নিয়োগের জন্যে আইনী প্রক্রিয়া এবং ক্রয় সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন চূড়ান্ত করার পর যুক্তরাজ্যের দেয়া সময়সীমার পূর্বেই সব সম্পন্ন হবে। বিদেশী কোন কোম্পানিকে পরামর্শকের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটা এখনও ঠিক হয়নি। আমরা ৪/৫ কোম্পানির নাম পেয়েছি। এগুলো থেকে বাছাই করা হবে। এদিকে গতকাল ডেভিড ক্যামেরনের চিঠির জবাব পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকালই এ চিঠি পৌঁছে দেয়া হয় ডেভিড ক্যামেরনের দফতরে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করায় ধন্যবাদ জানানো হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে। তবে চিঠিতে নিরাপত্তার বিষয়ে সময়সীমা বাড়ানোর কোন অনুরোধ করেননি। কেননা প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোন অনুরোধ জানালে তা নাকচ হলে আরও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে ক্যামেরনের চিঠির জবাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ক্যামরনের চিঠির জবাব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি চিঠির খসড়া দেখেছি। চিঠিতে তিনি বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা চান বলে উল্লেখ করবেন। যুক্তরাজ্য যেসব সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো মেনে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ থাকবে। জানা যায়, মিসরে বিমানে জঙ্গী হামলাসহ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপানসহ অনেক দেশই ঢাকায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা প্রকাশ করে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা বারবার বিমানবন্দর পরিদর্শন করে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও একাধিক বিশেষজ্ঞ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। এখনও জন লভসে নামে এক ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ সার্বক্ষণিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার খুঁটিনাটি দেখছেন। বিদেশীরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় দু’টি বিষয়ে ঘাটতি দেখছেন। এক. নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের অভাব। দুই. বিমানবন্দরে অবকাঠামো বিশেষ করে স্ক্রিনার পরিচালনার অভাব। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থা তদারকির জন্যে বিমানবন্দরে একটি অস্থায়ী অফিস চালু করেন। সেখানে তিনি নিয়মিত হাজির হন। তার নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের যে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে; ওই কমিটি আগামী ২০ মার্চ সার্বিক প্রস্তুতির অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। এই কমিটির পর্যালোচনা বৈঠকের পূর্বেই বিদেশী পরামর্শক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে। পরামর্শক কোম্পানি বিশেষজ্ঞ দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করবে। প্রাথমিকভাবে জি-৪ নামের একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে এই দায়িত্ব দেয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সরকার খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে, জি-৪ কোম্পানির এ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে অন্য কোম্পানির নাম সংগ্রহ করা হয়। তখনই প্রস্তাব আসে ব্রিটিশ সার্ভিস কন্ট্রাক্টরের। সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে পণ্য স্ক্রিনিং করার মেশিনেরও স্বল্পতা রয়েছে। এসব মেশিন ক্রয় কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এদিকে, বিমানের নিরাপত্তার মান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমান মানদ-ে আছে কিনা তা পর্যালোচনা করে সনদ দেয়ার জন্যে ডেভিস ও সুলিভান নামে এক ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ বিমানবন্দরে কাজ করছেন। বুধবার তিনি কার্গো হাউসের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাজকর্ম তদারকি করেন। গত ৮ মার্চ ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য। ওইদিন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে আন্তর্জাতিক মানদ- নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সেখানে পূরণ করা হয়নি।
×