ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশেই কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৫ মার্চ ২০১৬

স্বদেশেই কর্মসংস্থান

বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত ঘোষণা করেছে মালয়েশিয়া। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের সমঝোতা স্মারকে সই করেছিলেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী। পরদিনই দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য সবাইকে বিস্মিত করে। তিনি ঘোষণা দেন যে, আপাতত কোন দেশ থেকেই কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না। এর কয়েকদিন পরই দেশটির মন্ত্রিসভা একই সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে চুক্তিটির ভবিষ্যত অন্ধকারেই বিলীন হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, বর্তমানে দেশটির যেসব প্রতিষ্ঠানে অনুমতিপত্র ছাড়া বিদেশী কর্মী কাজ করছেন, তাদের ব্যাপারে কঠোরতা ও নানা শর্ত আরোপ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে। সে অনুযায়ী শুধু সরকারীভাবে মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন খাতে কর্মী পাঠানো হচ্ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় পাঁচটি খাতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিতে এই চুক্তি হয়। যা এবার স্থগিত হয়ে গেল। সংবাদটি উদ্বেগজনক। এতে যে কেউ বিচলিত হবেন এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ৭০ শতাংশের মতো হলেও মোট জনশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বেকার। যাদের অধিকাংশই শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, কিংবা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে লক্ষাধিক, যাদের বেশিরভাগের কর্মসংস্থান হয় না। ফলে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এমনিতেই বিশ্ব মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার প্রেক্ষাপটে সারাবিশ্বেই কর্মসংস্থান সঙ্কুুচিত হচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থান যে হারে বাড়ছিল তা হ্রাস পেয়েছে নানা কারণে। তাই অনেকে শ্রম বেচতে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা অস্থিরতার কুফল যেসব দেশ ভোগ করছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। সারাবিশ্বে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশী নাগরিক কর্মসংস্থানের কারণে বসবাস করছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায়ই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। তাই বলা যায়, সার্বিক পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়। পরিস্থিতির অবনতি রোধে সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগ কোনটাই মূলত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী সম্পদ নয়, রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবেই ভাবা হচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সঠিক হবে না। আজ মালয়েশিয়া কাল হয়ত অন্য দেশ একই সিদ্ধান্ত নেবে। তাই অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশেই কর্মসংস্থানের পথ খুঁজতে হবে। সময়টা তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে এদেশের যুবকরা। অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে সমাজে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আসলে যুব সমাজই হচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের ভবিষ্যত গড়তে দেশের এই বিশাল শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার হওয়া দরকার। এরাই নিজেদের মেধা ও মনন শক্তি ব্যবহার করে নির্ধারণ করবে দেশের আগামী দিনের চলার পথ। তাই সমাজের এই সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী অংশকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। এজন্য যুব সমাজের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কর্মের জোগান দিতে হবে। যুব সমাজের অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই প্রবাসে নয়, স্বদেশেই কর্মসংস্থান নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।
×