ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের উস্কানিই দায়ী ॥ নির্বাচনী প্রচারে সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৪ মার্চ ২০১৬

ট্রাম্পের উস্কানিই দায়ী ॥ নির্বাচনী প্রচারে সংঘর্ষ

গত বছর রাজনৈতিক অঙ্গনে কথোপকথনের লক্ষণ দেখে দুই পক্ষই সমস্বরে হুঁশিয়ার করেছিল যে, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারিভযান সহিংস রূপ নিতে পারে। রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের সমর্থকরা ভয় পাচ্ছেন যে, তাদের দেশ অন্যের দখলে চলে যাচ্ছে। অপরদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা ভয় পাচ্ছেন যে, তিনি জাতিকে ঘৃণার অন্ধকার পথে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিহাসবিদ হিথার কক্স রিচার্ডসন কয়েক সপ্তাহ আগেও বলেছিলেন, সহিংসতা ছাড়া এই ক্রোধের শেষ আমি দেখতে পাচ্ছি না। অবশেষে সপ্তাহান্তে এমন ঘটনাই ঘটল। এদিকে ট্রাম্প আয়োজিত বিভিন্ন সভায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তার সমর্থকদের হাতাহাতির পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সমাজে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে এমন কাজ না করতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীদের সতর্ক করে দেন তিনি। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। অপরদিকে শিকাগোর শুক্রবারের ঘটনায় সমাবেশ ভ-ুল হওয়ার একদিন পর শনিবার ওহাইওতেও সমাবেশে বিঘœ ঘটিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা। ওহাইওর ডেটন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সমাবেশে এক প্রতিবাদকারী নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙ্গে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলে ট্রাম্প কিছুক্ষণের জন্য ডায়াসের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। এ সময় সিক্রেট সার্ভিসের চার এজেন্ট তড়িঘড়ি করে ট্রাম্পকে ঘিরে দাঁড়িয়ে যান। মঞ্চে পৌঁছানোর আগেই সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তারা কালো টিশার্ট ও জিন্স পরা ওই প্রতিবাদকারীকে ধরে ফেলেন এবং সমাবেশস্থল থেকে সরিয়ে নেন। কানসাস অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটিতে ট্রাম্পের র‌্যালির বাইরে সংঘর্ষের সময় পুলিশ জনতার ওপর মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে। শিকাগোর ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পের সমর্থকদের সঙ্গে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। এতে তিনজন আহত হয়েছে এবং চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক উভয় দলই তার প্রার্থিতার নিন্দা করেছে। রিপাবলিকান দলের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী ওহাইওর গবর্নর জন ক্যাসিক বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের ভয়ের সুবিধা নেবে এমন জাতীয় নেতার কোন স্থান নেই। রিপাবলিকান দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সিনেটর মার্কো রুবিও কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্পের। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ এনে ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ থেকে আমরা যে কদর্য ও বিভেদ সৃষ্টিকারী তর্জন-গর্জন শুনছি তা সহিংসতা ও বিবাদ উস্কে দিচ্ছে, যা বিপজ্জনক। মার্কিন নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে সাধারণত আক্রমণাত্মক শব্দের খুনসুটি হয়ে থাকে। তবে এবারের নির্বাচনী প্রচার ট্রাম্পের নেতৃত্বে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মাধ্যমে স্পষ্টভাবেই আলাদা হয়ে আছে। শিকাগোর প্রখ্যাত মেয়র রিচার্ড ডালেইয়ের পুত্র উইলিয়াম এম ডালেই বলেছেন, আমার বিশ্বাস পরিস্থিতি শুধু খারাপের দিকেই যাচ্ছে। উভয়পক্ষই উত্তেজনা সৃষ্টিতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। এদিকে ওবামা প্রার্থীদের সতর্ক করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যারা লড়ছেন তারা যেন অন্য নাগরিকদের অপমান না করেন এবং সহিংসতা উস্কে দেয় এমন মন্তব্য না করেন। ডালাসে শনিবার ডেমোক্র্যাটিক দলের এক ফান্ড রাইজিং ক্যাম্পেনে ওবামা বলেন, ধর্ম ও বর্ণ নিয়ে অবজ্ঞা, সহিংসতা ছড়াতে পারে এমন বিষয়গুলো প্রার্থীদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিজেদের আচরণে শালীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। অপরদিকে ডেটনের ঘটনার পর এক সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আমি সেখানে প্রস্তুত ছিলাম। আমি ভাল করতে পারতাম কি-না জানি না, তবে সেখানে মারামারির জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম। মঞ্চের দিকে তেড়ে যাওয়া ওই প্রতিবাদকারী তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল বলে দাবি করেন তিনি। শিকাগোর ঘটনার জন্য ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডারসের সমর্থকদের দায়ী করেছেন ট্রাম্প। ভারমন্টের সিনেটর স্যান্ডারসকে ‘আমাদের কমিউনিস্ট বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প।
×