ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চট্টগ্রামের শিল্পীদের ক্যানভাসে প্রকৃতি ও জীবনের আখ্যান

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৪ মার্চ ২০১৬

চট্টগ্রামের শিল্পীদের ক্যানভাসে প্রকৃতি ও জীবনের আখ্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাদা-কালো চিত্রপটটিতে নেই রঙের বৈভব। তবে কালি-কলমে আঁকা ছবিটিতে আছে জীবনের কথা। কাজের অপেক্ষায় কোন এক সড়কের পাশে সারি বেঁধে আছে একদল শ্রমজীবী মানুষ। পাশের চিত্রকর্মে দৃশ্যমান হয়েছে নদীর পাড় ঘেঁষে জাল টেনে এগিয়ে যাওয়া এক জেলের জীবন। শঙ্খ মানবী নামের চিত্রকর্মে দেখা মেলে নিসর্গের সঙ্গে নারীর সংযোগ। জীবন ও প্রকৃতির এমন দৃশ্যকাব্যময় নানা চিত্রকর্ম এখন শোভা পাচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায়। এখানে চলছে চট্টগ্রামের শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। শিল্পীদের শেকড়ের শহরে সমাপ্ত হওয়া প্রদর্শনীটি এখন হাজির হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আয়োজক চট্টগ্রাম চারুশিল্পী পর্ষদ-ঢাকা। রবিবার থেকে শুরু হলো ছয় দিনের এ বিশেষ প্রদর্শনী। চট্টগ্রামের ৯২ জন শিল্পীর ১৫২টি শিল্পকর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। রবিবার বসন্ত বিকেলে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। পর্ষদের সভাপতি শিল্পী আবুল কাশেম ইকবালের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন প্রদর্শনী উদ্্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক স্বপন আচার্য্য ও পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী বসিরুল আলম ঝিলন। উদ্বোধনী বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যে কোন দেশের শিল্পচর্চাই একজন বা দুইজন মানুষের অবদানে হয় না। বহু ধরনের মানুষের নানাবিধ শিল্পের সম্পৃক্ততায় রচিত হয় এই ভিত্তিভূমি। তাই তো শহরের বাইরে গ্রামে বসেও অনেকে অসাধারণ শিল্প সৃজন করে চলেছেন হাজার বছর ধরে। অক্ষরজ্ঞান না থাকলেও বহু গায়ক-গীতিকার সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সব গান। এই সবার কাজ মিলে দেশের সংস্কৃতি তৈরি হয়। এসবের মধ্য দিয়েই দেশের সংস্কৃতি এগিয়ে চলছে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ কে আজাদ বলেন, শিল্পীরা ব্যতিক্রম মানুষ। তারা উদার, আবেগপ্রবণ ও সৃষ্টিশীল মানুষ। ছবির মধ্য দিয়ে তাঁরা সমাজের চিত্র তুলে ধরেন। সমাজের দুঃখ, বঞ্চনা, প্রকৃতি, সম্ভাবনা তুলে ধরেন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে অতিথিসহ দর্শনার্থীরা ঢুকে পড়ে গ্যালারিতে। বহুমাত্রিক শিল্পকর্মের আভায় প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে শিল্পরসিকদের অন্তরে। নাসিমা মাসুদ রুমীর ’সময়ের আবর্তে’ শীর্ষক ছবিটি অরণ্যে মাঝে চারপাশ ঘিরে থাকা অশুভ শক্তির সামনে এক নারীর শান্তির প্রতীক পায়রাকে আঁকড়ে ধরা রাখা, যেন বর্তমান অস্থির সময়ের কথাই বলছে। সামিনা নাফিজের পল্লী স্মৃতি শিরোনামের ছবিতে রঙিন হাতপাখা, ফুলেভরা ফুলদানি, মাটির পাত্রে রাখা রকমারি ফলের দৃশ্য যেন বলে বলে যায় সহজিয়া জীবনের কথা। রফিক সিদ্দিকীর ‘রংয়ের নাচন’ ছবিতে প্রজাপতির রঙ-বেরঙের পাখা, দর্শকের চোখকে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া। বৃষ্টির মাঝে কলাপাতা মাথা নারী-পুরুষের উচ্ছ্বাস উঠে এসেছে আমেনা আক্তারের ‘আনন্দধারা’ ছবিতে। সঞ্জয় সরকারের ‘সময়ের শিকার’ ছবিতে চারপাশে সাতটি বড় মাছের আক্রমণে মৃতপ্রায় ছোট মাছের আর্তনাদ পরোক্ষভাবে মেলে ধরেছে শোষিতের প্রতি শাসকের নিষ্ঠুরতা। চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চারুশিল্পী পর্ষদের এ আয়োজন চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ফনিন্দ্র সরকারের কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা ॥ মানুষের জীবনবোধকে প্রখর করে তোলে কবিতা। কাব্যবীজের স্ফূরণে সত্য ও ন্যায়ের ধাবিত হয় মানব জীবন। সভ্যতা ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাতেও রয়েছে কবিতার অসীম অবদান। আর এই কবিতার স্রষ্টা সকল কবিদের প্রতি ভালবাসা জানিয়ে প্রকাশিত হলো কবি ফনিন্দ্র সরকারের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। মৈত্রী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থটির শিরোনাম ‘সাগর জয় ও ভালবাসা’। রবিবার বিকেলে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কবি সোহরাব হাসান, কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু ও রোকনউদ্দিন আহমেদ। তারেক মাসুদ উৎসবে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ও পুরস্কার ॥ দুই দিনব্যাপী তৃতীয় তারেক মাসুদ উৎসব শেষ হলো রবিবার। সমাপনী দিনের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে তারেক মাসুদ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার নির্বাচিত ১০টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর হয় এবং ৬টি চলচ্চিত্রকে পুরস্কৃত করা হয়। তারেক মাসুদ মেমোরিয়ার ট্রাস্ট আয়োজিত এ উৎসবের সহযোগিতায় ছিল ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
×