ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গীতিকার মাসুদ করিম সম্মাননা পেলেন ৩৩ গুণী ব্যক্তি

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৪ মার্চ ২০১৬

গীতিকার মাসুদ করিম সম্মাননা  পেলেন ৩৩ গুণী ব্যক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন যে কয়জন গুণী মানুষের স্পর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম গীতিকার মাসুদ করিম। অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার মাসুদ করিম। তার লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘তন্দ্রাহারা নয়ন আমার’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘শিল্পী আমি তোমাদের গান শোনাব’, ‘আমি সুজন দেখে ভাব করেছি’, ‘এ কি বাঁধনে বলো জড়ালে আমায়’, ‘সন্ধ্যারও ছায়া নামে’, ‘মন তো নয় আর আয়না’, ‘ওগো চাঁদ তুমি কি জানো না’, ‘তুমি যে আমার ভালবাসা’ প্রভৃতি। দেরিতে হলেও গীতিকার মাসুদ করিমকে স্মরণ করল ‘গীতিকার মাসুদ করিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’। তার স্মরণে এ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শনিবার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় পরপর ৩ বছরের গুণীজন সম্মাননা দেয়া হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গুণীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমি সাবেক মহাপরিচালক মোবাররক হোসেন খান। উপস্থিত ছিলেন মাসুদ করিমের সহধর্মিণী দিলারা আলো, শেখ সাদী খান, আবদুল হাদী, মোঃ খুরশীদ আলম, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, তিমির নন্দী, শুভ্রদেব, রোমানা ইসলাম, হাসিনা মমতাজ প্রমুখ। পুরস্কার প্রদান শেষে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে মাসুদ করিম সম্মাননা পেয়েছেন ২০১৪ সালে সঙ্গীতে ফেরদৌসী রহমান, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদী, মোঃ আবদুল জব্বার, মোঃ খুরশীদ আলম, মাকসুদ, রুমানা ইসলাম শ্রাবণী, সুরকার-সুবল দাস, আলাউদ্দিন আলী, আলম খান, গীতিকার খন্দকার নুরুল আলম, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, এস এম হেদায়েত, চলচ্চিত্রে চাষী নজরুল ইসলাম ও লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন। ২০১৫ সালে এ সম্মাননা পেয়েছেন কাদেরী কিবরিয়া, এম এ শোয়েব ও শ্রীকান্ত আচার্য। ২০১৬ সালে সুবীর নন্দী, কুমার বিশ্বজিৎ, তিমির নন্দী, শুভ্রদেব, ফওজিয়া খান, ফরিদা পারভীন, শাহীন সামাদ, শাকিলা জাফর, ডলি ইকবাল (নৃত্যে), সুরকার শেখ সাদী খান, গীতিকার হাসান মতিউর রহমান, শাফাত খৈয়াম, সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল (ডকুমেন্টারি)। মাসুদ করিমের লেখা ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’ এই কালজয়ী গানটি গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমার কোন ভাই ছিলেন না। মাসুদ ভাইকে আমার মা নিজের ছেলে মনে করতেন। আমিও তাকে বড় ভাই জ্ঞান করতাম। আমাদের বাসায় তার নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। মাসুদ ভাই আমাকে কখনও সাবিনা বলে ডাকতেন না। ডাকতেন আমার ডাকনাম রোজী বলে। সাবিনা আরও বলেন, মাসুদ করিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন তাকে স্মরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা খুব ভাল ব্যাপার। আমাদের সবার উচিত এই উদ্যোগের সঙ্গে থাকা। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ফাউন্ডেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই। অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মাসুদ করিম সম্পর্কে এটুকুই বলব, তিনি পোশাকে-আশাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মানুষ ছিলেন। গীতিকার হিসেবে তিনি কত বড় ছিলেন সেটা আমি বলছি না। মানুষ হিসেবে তিনি বড় মনের অধিকারী ছিলেন। একটি চলচ্চিত্রে তার লেখা গান গাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ‘লালু ভুলু’ চলচ্চিত্রের সব গান লিখেছিলেন মাসুদ করিম। সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, মাসুদ করিম আমার বন্ধু-ভাই ছিলেন। এখন সময় এসেছে তার কাজ নিয়ে মূল্যায়ন করার। কবিদের বাইরে রোমান্টিক ধারার গান রচনায় তিনি ছিলেন সফল। ব্যক্তিজীবনে তাকে কখনও পরিচর্যা করতে দেখিনি। এমন মানুষ সত্যিই বিরল। সঙ্গীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ বলেন, যখনই আমি উনার গান গাইতাম, লক্ষ্য করতাম খুব চুপচাপ একজন মানুষ। কিন্তু মুখে একটা হাসি লেগেই থাকত। আমার মনে হয় না তিনি কোনদিন কারও সঙ্গে ঝগড়া করেছেন। প্রখ্যাত গজল সম্রাট মেহেদি হাসান, শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকাসহ অনেক শিল্পীই মাসুদ করিমের লেখা গান গেয়েছেন। মাসুদ করিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এখন থেকে প্রতি বছর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করবে।
×