ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

আধুনিকায়ন করা হচ্ছে ছাতক সিমেন্ট কারখানা

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৪ মার্চ ২০১৬

আধুনিকায়ন করা হচ্ছে ছাতক সিমেন্ট কারখানা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত দেশের প্রাচীন সার কারখানা ছাতক সিমেন্ট কারখানার আধুনিকায়নে ৬৬৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠকে এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিডেটের উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। কারখানাটি আধুনিক হলে উৎপাদন বাড়বে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে। ছাতক সিমেন্ট কারখানা সূত্রে জানা যায়, এই কারখানার বর্তমান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দৈনিক ৫০০ টন। এর বিপরীতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শ’ টন উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে লোকসান গুনছে কারখানাটি। ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাতক সিমেন্ট কারখানার সব যন্ত্রপাতি পুরনো ও অনেকগুলো নষ্ট হয়ে পড়ায় বছর বছর কমছে উৎপাদন। কারখানার আধুনিকায়ন ছাড়া লাভের মুখ দেখা সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কারখানাটির আধুনিকায়নে ২০১১ সালে ব্যালেন্সিং মর্ডানাইজেশন রেনোভেশন এ্যান্ড এক্সপেনশন (বিএমআরই) করার প্রকল্প গ্রহণ করে বিসিআইসি। নতুন এ প্রকল্পে ড্রাই প্রসেসে বছরে ৩ লাখ মেট্রিক টন ক্লিঙ্কার উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি আধুনিক যন্ত্র স্থাপন এবং ক্লিঙ্কার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, চুনাপাথর অধিক হারে বহনের উপযোগী করতে বর্তমান রজ্জুপথ সংস্কারের কথাও উল্লেখ করা হয়। গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে অন্তত ৭৬ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির কর্মকর্তারা। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের গত তিন বছরের উৎপাদন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত তিন বছরে কোম্পানিটি লোকসান করেছে প্রায় ৪৮ কোটি। এরমধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে লোকসান হয় ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে লোকসান হয় ১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লোকসান হয় প্রায় ২১ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ৫৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৫৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৩-০৪ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয় ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। এরপর থেকেই কমতে শুরু করে কারখানাটির উৎপাদন। গুনতে শুরু করে লোকসান। অথচ ছাতক সিমেন্ট কারখানার পাশেই বহুজাতিক বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানি প্রতিবছরই বিশাল অঙ্কের মুনাফা গুনছে। বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সিমেন্ট কারখানা হিসেবে বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন ছাতক সিমেন্ট কারখানা ১৯৩৭ সালে যাত্রা শুরু করে। এই কারখানায় উৎপাদন ডায়মন্ড ব্র্যান্ডের সিমেন্টের চাহিদা দেশের বাইরেও রয়েছে। কিন্তু কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। অতীতে কারখানা আধুনিকায়নের উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো কারখানাটি বেসরকারীকরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, বিএনপি জামায়াতের আমলে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। ছাতকেও অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। তখন লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে। এই সরকারের আমলে শিল্প কারখানাগুলো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এই কারখানা আধুনিকায়নের জন্য অর্থ প্রদানের কথা শুনে শিল্প এলাকাতে আনন্দ মিছিল করছে। সরকারের এসব উন্নয়ন দেখে বোঝা যায় শেখ হাসিনা এবং তার সরকার শুধু ছাতক তথা সুনামগঞ্জ নয়, সারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাথে কমিটমেন্ট রক্ষা করছেন বলে জানান তিনি।
×