ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাব্য হারাচ্ছে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৪ মার্চ ২০১৬

নাব্য হারাচ্ছে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১৩ মার্চ ॥ পার্বত্য জেলার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী নাব্য হারাচ্ছে, ফলে নৌচলাচল বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি খাওয়ার পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী আরকান পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে সরাসরি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী। দুই নদীর মাঝখানে জেগে উঠেছে ছোটবড় অসংখ্য চর। পলি জমে নদী দুটি ভরাট হওয়ায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য সম্পদ, ফলে বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয় জেলেরা। স্থানীয় জেলে বিন্দুবালা জানান, ৩০-৪০ বছর ধরে নদীর মাছ ধরে বিক্রির টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন, কিন্তু নদীতে চলতি মৌসুমে বড় বড় চর জেগে ওঠায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না। এক সময় সাঙ্গু নদী দিয়ে রুমা, থানচি এবং মাতামুহুরী নদীপথ দিয়ে আলীকদম ও লামার বিভিন দুর্গম এলাকায় যাতায়াত করত স্থানীয়রা। বর্তমানে উপজেলাগুলোতে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলেও এখনও রুমা, থানচির রেমাক্রি, ছোট মদক, বড় মদকসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকা এবং আলীকদম উপজেলার দুর্গম পোয়ামুহুরি, কুরুকপাতাসহ বিভিন্ন এলাকা যেতে হয় নৌকাযোগে। কিন্তু বর্তমানে ভরাট হয়ে নদী দুটি শুকিয়ে যাওয়ায় সংকুচিত হয়ে এসেছে নৌচলাচল। স্থানীয় পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ক্যা হ্লা চিং মার্মা বলেন, নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড় করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ঝিরি থেকে পাথর আহরণ করা হচ্ছে, যার ফলে নদীতে পানি নেই। জেলায় ওয়াসা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হওয়ায় জেলার ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। শহরের পৌর পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও সরাসরি সাঙ্গু নদীর ওপর নির্ভরশীল। সাঙ্গু নদী থেকেই পাইপের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে পরিশোধিত করার পর জেলা শহরে খাওয়ার পানির সরবরাহ করা হয়। শুস্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ার কারণে জেলা শহরের পানি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মাহাবুবুল ইসলাম জানান, বনাঞ্চল উজাড়, পাহাড় কর্তন, নির্বিচারে পাথর উত্তোলন, পাহাড়ে জুম চাষের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, নদীর নাব্য হারানোর প্রভাব বান্দরবানের কৃষি উৎপাদনেও পড়ছে এবং পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
×