ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নৌ-পথে নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৪ মার্চ ২০১৬

নৌ-পথে নিরাপত্তা

প্রতিবছরই দুর্ঘটনার পর নতুন নতুন পরিকল্পনার উদ্ভাবন হবে, আসবে সুপারিশ, নেয়া হবে সিদ্ধান্তও। চিরায়ত এই পন্থা থেকে সরে এসে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ অতি। বলা যায় সেই ট্রাডিশন চলছে সমানে। কত সুন্দর মধুময় প্রস্তাব থেকে যায় শুধু কাগজেই লিপিবদ্ধ। কত যে তার বাকভঙ্গি। কিন্তু বাস্তবে দৃশ্যমান হয় না বলে স্পষ্ট হয় না সিদ্ধান্তগুলো কতটা সঠিক, কতটা সময়োপযোগী। বলা হচ্ছে নৌ-পথে নিরাপত্তার কথা। দেখা যায় প্রতিবছর ৪ মে থেকে শুরু হয় নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ। কাগুজে এই সপ্তাহ পালনকালে নৌ-নিরাপত্তা নিয়ে অনেক সারগর্ভ ভাষ্য মেলে। কিন্তু নিরাপত্তা যেন আর আসে না নৌ-চলাচলে। অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলতে থাকে সব প্রস্তাব। যাত্রী ও পণ্যের গন্তব্যে পৌঁছা তথাপি থেকে যায় অনিশ্চয়তায়। নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ চলাকালে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে লঞ্চডুবির ঘটনা নিকট অতীতেও কয়েকবার ঘটেছে। স্বজনহারার আর্তি, চরাচরজুড়ে মানুষের আহাজারি, ডুবন্ত নৌ-যান উদ্ধার করতে না পারার ঘটনা সর্ববিদিত। এসব ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে বড় হেডলাইন ও টিভির স্ক্রিনজুড়ে প্রচার হয়। তারপর সেই একই দৃশ্যÑ লাশের সারি, অসহায় স্বজনের প্রলাপ-বিলাপ, নৌ-পথের বাতাস ভারী হয়ে উঠা। প্রতিবছর এমনটাই দেখে আসছে দেশবাসী। কালবৈশাখীর মৌসুমে ঝুঁকি বাড়ে নৌ-পথে। ঝড়ের কবলে পড়ে যাত্রীবাহী, এমনকি পণ্যবাহী লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান ডুবির ঘটনা আকছার ঘটেই চলে। এই সময়কালে নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের দীর্ঘ নৌ-পথ সুরক্ষিত না থাকায় নৌ-দুর্ঘটনা বাড়ে। সেইসঙ্গে বাড়ে যাত্রীর প্রাণহানির সংখ্যা। হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলো এক সময় ফিকে হয়ে আসে। বছর বছর এই ঘটনা ঘটে আর সারাদেশ মুখর হয় নদীমাতৃক এদেশের নৌ-পথের নিরাপত্তা নিয়ে। তারপর বৈশাখ গত হয়। বর্ষা পার হয়ে যায়। শেষ হয় কালবৈশাখী আর মৌসুমী ঝড়ের দিন। বেমালুম সব কিছু ভুলে যাওয়া তারপর। দেশের পরিবহন খাতে সব সময়ই নৌ-পথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরেই। নদীমাতৃক দেশে নৌযানই চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম আজও। দেশের মোট যাত্রীসংখ্যার ৩৫ শতাংশ নৌ-পথে চলাচল করে। মোট পণ্যের ৭০ ও তেলজাত দ্রব্যের ৯০ শতাংশ নৌ-পথে পরিবহন করা হয়। প্রতিবছর প্রায় ৯ কোটি মানুষ দেশের নৌ-পথে যাতায়াত করে। যৌক্তিক কারণেই নৌ-পথ জনপ্রিয়, সহজলভ্য এবং আরামদায়ক ভ্রমণ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত অথচ এ নৌ-পথ কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিয়মিত প্রাণহানিরও। প্রতিবছর এপ্রিল, মে, জুন ও অক্টোবরে নৌ-দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি। কালবৈশাখীর মৌসুমেও মেঘনার বিপজ্জনক এলাকাসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী নৌ-যানগুলো চলাচল করে অনেকটা বেপরোয়াভাবে। এরা কোন নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান মেনে চলতে অভ্যস্ত নয়। ডেঞ্জার জোনে ১৫ মার্চ থেকে নৌ-চলাচল বন্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও অতীতে দেখা গেছে তা কেউ মানে না। এই সময়টায় নদ-নদী হয়ে ওঠে উত্তাল। ঝুঁকিপূর্ণ রুটগুলোতে ট্রলার, একতলা লঞ্চ চলাচল করে ঝুঁকি নিয়ে অথচ এসবের পরিবর্তে এই সময়টায় সী-ট্রাকসহ বর্ষাকালীন নৌ-যান ব্যবহারে কারও কোন আগ্রহ নেই। অবৈধ নৌ-যানগুলো তথা ফিটনেসবিহীন যানগুলো দুর্যোগের আশঙ্কাকবলিত সময়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিকে ঘুম পাড়িয়ে চলাচল করে। ঘটে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি। অবৈধ নৌ-যানগুলো যেমন বন্ধ হয় না তেমনি নদীপথ সুরক্ষারও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। নৌ-পথ যত চলাচল উপযোগী হবে ততই হ্রাস পাবে প্রাণহানি। আসন্ন কালবৈশাখী মৌসুমে নৌ-দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রোধে এখনই নেয়া হোক সমন্বিত পরিকল্পনা এবং তা কার্যকর করার জন্য জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়াই হচ্ছে এই সময়ের সবচেয়ে জরুরী পদক্ষেপ।
×