(১৩ মার্চের পর)
কবির বললেন, একমত আমি। মতি, আপনি? মতি বললেন, আমিও।
জিজ্ঞেস করলাম, কাগজের কী নাম হবে?
কবির বললেন, আপনি বলুন।
এক লহমা চুপ থেকে বললাম : স্বাধীনতা।
কবিরের আর মতির চোখ জ্বলে উঠেছে : স্বাধীনতা। শব্দ : জীবনের স্বপ্নের অধীশ্বর; বুকের মধ্যে বৃক্ষের মতন স্বাভাবিক উৎসাহ বেড়ে চলে; চোখে ফুটিয়ে তোলে স্বপ্নের মেঘ; ইচ্ছে করে দুহাত ধরে আদর করতে: শব্দে গড়ে উঠুক স্বাধীনতা।
কবির ফের বললেন, “কাগজটা পাক্ষিক হবে। দুদিনের মধ্যে লেখা তৈরি করে দেবেন।” (পৃ. ৫১)
খোদাদাদ জানালেন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ওপর পত্রিকার দায়িত্ব দেয়া হলো। তিনি কপি জোগাড় করতেন, নিজেও লিখতেন, বিভিন্ন সূত্রের লেখা এনে তা ঠিকঠাক করে কুতুবুর রহমানকে দিতেন। পত্রিকা কখনও চার, কখনও ছয় পাতা বের হতো। ফুলস্কেপ সাইজের কাগজে সাইক্লোস্টাইলের জন্য লিখে দিতেন পরাগের বাবা আলী আক্কাস। গ্রীন রোডের ৩৭, আল আমীন রোডে একটি মাজারে বসে তা লিখতেন। লেখা হয়ে গেলে তা দেয়া হতো আমিনুল ইসলামকে। তিনি ওয়াপদায় কাজ করতেন। সেখানে একটি সাইক্লোস্টাইল মেশিনে ৫০০ কপি ছাপতেন। এই ৫০০ কপি ছাপতে সময় লাগত সাতদিন।
খোদাদাদ জানিয়েছেন সেগুলো ছাপা হলে সচিবালয়, বায়তুল মোকাররমের দোকান, নারায়ণগঞ্জ, দোহার, রায়পুরা, জয়দেবপুর, সাভার, মানিকগঞ্জে বিভিন্নভাবে বিলি করা হতো।
স্বাধীনতা বেরুলো। সময়টি কেউ উল্লেখ করেন নি। আমার কাছে তৃতীয় সংখ্যাটি আছে। তার তারিখ ১৫ আশ্বিন, ১৩৭৮। তা’হলে, ধরে নিচ্ছি ভাদ্র ১৩৭৮ সনে প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল। চার পাতার ফুলস্কেপ আকার। শিরোনাম ‘পাক্ষিক স্বাধীনতা’-স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখপত্র। মূল্য : শুভেচ্ছা মূল্য। কোন কোন সংখ্যায় লেখা ছিল-‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখপত্র’- স্বাধীনতা সম্পাদকম-লী কর্তৃক প্রকাশিত।’
স্বাভাবিকভাবেই সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষপাতী ছিলেন তারা। পত্রিকার লক্ষ্য নিয়ে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও কুতুবুর রহমান আলোচনা করে যে লক্ষ্য স্থির করলেন সে সম্পর্কে লিখেছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর- “আমরা আরো একমত: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক নিয়ামকের মধ্যেকার গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই কটি : মুক্তিযোদ্ধারা পেশাদার সেনাবাহিনীর নয়। মুক্তিযোদ্ধারা জনসাধারণের সন্তান, দেশপ্রেমে উদ্দীপিত, সমাজব্যবস্থায় রূপান্তর আনয়নে উৎসর্গকৃত। মুক্তিযোদ্ধার সারিতে আছেন ছাত্র, মজুর, কৃষক, বিভিন্ন পেশাভুক্ত লোকজন। দ্বিতীয়ত যুদ্ধের নিয়মেই দেশের অভ্যন্তরে মুক্তাঞ্চল প্রসারণের দরুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা। তৃতীয়ত বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যেকার বৈপ্লবিক সখ্যতা ও বন্ধুত্ব। চতুর্থত কোনো একটি পার্টির নয়, মুক্তি আন্দোলন সারাদেশ ও সমগ্র জাতির সম্পদ। পঞ্চমত, মুক্তির লড়াই একই সঙ্গে শ্রেণীযুদ্ধ ও বিপ্লব। ঐ সব নিয়মের তাৎপর্য হচ্ছে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা এবং ঐ প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যেকার বৈপ্লবিক সখ্যতা ও বন্ধুত্ব। যেহেতু ঐ সহযোগিতার সামাজিক ভিত্তির প্রসারণের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি ও ভূমি দৃঢ় মজবুত ও সুদূরপ্রসারী, সেজন্য বাংলাদেশের বিপ্লব সমগ্র জাতির এবং বিপ্লবীদের, মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে মুক্তাঞ্চলে সমাজতান্ত্রিক প্রশাসন নির্মিত করে ঐ আদর্শের অঙ্কুর বুনে যাওয়া।”
তিনি আরো লিখেছেন- “তিনদিন বাদে আমাদের কাগজের প্রথম সংখ্যা বেরোল : স্বাধীনতা। প্রথম সংখ্যাতে আছে : সম্পাদকীয় নিবন্ধ : বক্তব্য একটাই; বিশেষ নিবন্ধ : বঙ্গবন্ধুর বিচার; খবর চারটি : কনসেনট্রেশন ক্যাম্প; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাচার; মুক্তিবাহিনী সমাচার।
সম্পাদকীয় নিবন্ধের শেষ লাইন : স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক।”
॥ চার ॥
যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, তখন সবাই নিজেকে যুক্ত ভেবেছেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। যে যেভাবে পেরেছেন, যার অবস্থান যেখানে ছিল সেখান থেকেই কাজ করেছেন। এইসব যুক্ততার ফলে আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম।
বিজয়ের পরপরই চাপা দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন তারা সব মানুষেরই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। কিন্তু, ১৬ ডিসেম্বরের পরে অনেকের হাতে অস্ত্র দেখেছি, এবং ঘোষণা করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, ভাই বেরাদার, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন হিসেবে। এদের আমরা বলতাম ষোড়শ বাহিনী। তারপর সার্টিফিকেট বিলি হতে লাগল, সুযোগ সুবিধাও। তাতে কারো আপত্তি ছিল না। ছিল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। শুধু মুক্তিফৌজের সদস্যরা নয়, যারা পাড়ি দিয়েছিলেন ভারতে বিভিন্ন কারণে, মূলত জান বাঁচাবার জন্য, তারা ফিরে এসে এমন সব কথাবার্তা বলতে লাগলেন যে, দেশে যারা ছিলেন তারা অপরাধ করেছেন। কিন্তু, ঐ যে আগে লিখেছি, প্রায় ২৫টি গ্রুপ দেশে থেকে যুদ্ধ করেছে। তারা কি মুক্তিযোদ্ধা? তাদের সাহস, বীর্য কি অন্যদের থেকে কম? আবার যখন যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন তাদেরই মুক্তিযোদ্ধা অভিধা দেয়া হচ্ছে তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম বা তাজউদ্দীন আহমদের অবস্থান কোথায় দাঁড়ায়? অবরুদ্ধ দেশে নানা গ্রুপ তৈরি হয়েছিল গেরিলাদের সাহায্য করার জন্য, শহীদ পরিবারগুলোর জন্য আশ্রয় ও বাঁচার উপায় তৈরি করার জন্য, মনোবল জাগিয়ে রাখার জন্য। তারা না থাকলে যুদ্ধটা কোথায় হতো? অবরুদ্ধ দেশে যারা কাজ করেছেন তাদের সাহস, ঝুঁকি অন্যদের থেকে কম ছিল না। এবং তারা কী করেছেন সে কথাও কখনও বলেননি। আমি তো এখানে একটি গ্রুপের কথা বলছি মাত্র।
আমার বড় চাচা বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বা আমার শিক্ষক গিয়াসউদ্দিন আহমদ ও তাদের সঙ্গে আরো অনেকে যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন সে সম্পর্কে আমিও তেমন জানি না। আমার চাচাও কখনও বলেন নি।
৯ জানুয়ারি [২০১৬] অধ্যাপক জাহাঙ্গীরের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন না। তবে, যারা বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাদের কথায় অনেক প্রসঙ্গ এসেছিল।
শাহরিয়ার জানান, মার্চে রানার নামে একটি সাপ্তাহিকের প্রকাশনা শুরু হয়। আমাদের বন্ধু বেনজীর আহমদ যিনি ভোরের কাগজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। আমরা অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বেবী মওদুদ, শাহরিয়ার কবির আরো অনেকে। সবাই ছিলাম আমরা ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং, ধরে নেয়া যায় ছাত্র ইউনিয়ন-ই রানার প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল। সে পত্রিকায় আমার মনে আছে মুর্তজা বশীরের একটি ড্রইং ছাপা হয়েছিল। খুব সম্ভব বেয়নেট হাতে একজন যোদ্ধার। শাহরিয়ার জানালেন, ঐ সংখ্যায় বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ছোট একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন যার প্রথম লাইন ছিল-এখন একটিই দাবি স্বাধীনতা।
শামসুজ্জামান খান জানালেন, ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমিতে একটি সভা হয়েছিল। সেখানেও যে নিবন্ধটি পাঠ করেছিলেন ড. জাহাঙ্গীর তার মূল বক্তব্যই ছিল প্রয়োজন এখন স্বাধীনতার।
এরকম একজন ব্যক্তির ঢাকা শহরে তখন প্রকাশ্যে থাকাটাই ছিল দুঃসাহস। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জানালেন, বোরহান ও তার বন্ধুরা মিলে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। অসহায় পরিবারগুলোর জন্য তারা দ্বারে দ্বারে গিয়ে ঐ সময় টাকা-পয়সা তুলেছেন। কাপড়-চোপড়, ওষুধপত্র জোগাড় করেছেন। রীতিমতো দুঃসাহসী ছিলেন তারা।
তারপর তিনি তার বন্ধু অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদের কথা বললেন যিনি ঐ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘গিয়াস’, বললেন তিনি, ‘অনেক সময় লুঙ্গিটা খাটো করে পরে, গেঞ্জি গায়ে, মাথায় গামছা বেঁধে, হাতে ঝুড়ি নিয়ে শ্রমিকের বেশে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেছেন।’ আগেই উল্লেখ করেছি, মাঝে মাঝে অনেক রাতে গিয়াস স্যার আসতেন আমাদের ধানম-ির বাসায়। তিনি আর চাচা মিলে কোথায় কী সাহায্য পাওয়া যাবে, কিভাবে বিতরণ করা হবে তা আলাপ করতেন। এর কিছু কিছু পরে আমি উল্লেখ করেছি।
৯ তারিখের অনুষ্ঠান শেষে চা খেতে খেতে কবি, স্থপতি রবিউল হুসাইন বললেন, ‘একটি ঘটনার কথা বলি। একদিন তিনি আমার অফিসে এসে বললেন, রবিউল, এই হলো এয়ারপোর্টের স্থাপনা ও ভূগর্ভস্থ পাইপের নকশা। এগুলো কপি করে আগামীকাল গুলিস্তানে এক মুদি দোকানে পৌঁছে দেবেন। কোত্থেকে তিনি এইসব নকশা জোগাড় করেছিলেন তিনিই জানেন। আমি আর স্থপতি শামসুল ওয়ারেস রাত জেগে সেইসব নকশা নকল করলাম। সকাল ১০টার দিকে, হাতে নকশাগুলো গোল করে রাবার ব্যান্ড দিয়ে পেঁচিয়ে বেবি ট্যাক্সির খোঁজ করছি। পেয়ে গেলাম একটা। ভয়ও লাগছে, বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্ট পাকিস্তানী সৈন্যদের। ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনে আসতেই দুজন সৈন্য ইশারা করে ট্যাক্সি থামালো। আমার অবস্থা বোঝেন তখন। কোনো কথা না বলে সৈন্য দুজন আমার দু’পাশে বসল। জিজ্ঞেস করল, কাহা যাতা হ্যায়। বললাম, অফিস। হাতে তখন নকশার বান্ডিল। হাত ঘামছে। পল্টনের সামনে এসে তারা নেমে গেল। লিফট নিল আর কী! ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ল। গুলিস্তানে সেই দোকান খুঁজে নকশা দিয়ে তখন শান্তি।’
রবিউল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ৪৫ বছরের, কখনও এ কথা বলেন নি। শামসুল ওয়ারেসের ছোট বোন আজমিরি ওয়ারেস ছিলেন আমাদের সহপাঠিনী। তাকে প্রেগন্যান্ট সাজিয়ে ড. জাহাঙ্গীর তার ছোট ফিয়াটে করে একবার অস্ত্র দিয়ে এসেছিলেন গাবতলী পেরিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপের কাছে। এমনি ছোট ছোট কত ঘটনা।
সুস্মিতা ইসলাম তার আত্মজীবনীতে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ১৯৭১ সালে ওয়াপদার পাওয়ার প্ল্যানিংয়ের পরিচালক ছিলেন এ.এস.এম নুরুল্লাহ। সুস্মিতা কন্যাসহ তার ফ্ল্যাটেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর ভাষায় “মুক্তিযোদ্ধারা যত ইলেকট্রিকের ংধনড়ঃধমব করত, তার পেছনে নুরুর হাত থাকত। নুরুই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সঠিক ড্রইং দিয়ে দিত, ... নুরুর ড্রাইভার মুশতাক ছিল বিহারি। তার সাহায্যে কত হিন্দু পরিবারকেই যে নুরু ওপারে যেতে সাহায্য করত তার ঠিক নেই। সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যার পর ঘর ভরে যেত ভীতসন্ত্রস্ত লোকের ভিড়ে। সবাই একদম চুপ, একটি আওয়াজ নেই। সুলতানা [নুরুল্লাহর স্ত্রী] সবাইকে খাইয়ে তারপর ধীরে ধীরে কিভাবে যে বাড়ির বাইরে পার করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করত, তা আমরা অত কাছে থেকেও জানতে পারতাম না...’।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ষোড়শ বাহিনীর এক সদস্য নুরুকে এই বলে চার্জ করে যে, ‘নুরুল্লাহ সাহেব, আপনি তো ঢাকায় বসে অফিস করেন, পুরো নয় মাস ধরেই পাক বাহিনীর মদদ দিয়ে গেলেন। আপনার মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা মানায় না।’ এইটুকু শুনেই রাগে অপমানে নুরু স্টেজের ওপরই অজ্ঞান হয়ে যায়Ñতারপর ওর আর জ্ঞান ফেরেনি।”
[সুস্মিতা ইসলাম, আমার দিনগুলি, ঢাকা, ২০১৬]
কয়েকদিন আগে এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আচ্ছা ১৯৭১ সালে শাহরিয়ার কবির সাহেব কী করতেন?’
‘তিনি সীমান্ত পেরিয়ে গেছিলেন,’ জানালাম আমি, ‘যাবার আগের রাতে আমাকে নিতে এসেছিলেন। আমি যেতে পারি নি। সেখানে তিনি কালচারাল স্কোয়াডের সঙ্গে ছিলেন, জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে স্টপ জেনোসাইডে কাজ করেছেন। বই লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা শাহরিয়ারের পূর্বের সূর্য বোধহয় প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস যা ১৯৭১ সালে বেরিয়েছিল কলকাতা থেকে।
‘তিনি কোথাও কিছু সাপ্লাই করতেন নাকি?’
এবার আমি বুঝি কেন তিনি প্রশ্নটি করেছেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, একজন বলেছেন আমাকে, টেলিভিশনের টকশোতে নাকি বলেছিলেন, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন? আজকাল এতো বড় বড় কথা বলেন। শাহরিয়ার তো ক্যান্টনমেন্টে মুরগি সাপ্লাই করত। আমার সম্পর্কে অবশ্য এ ধরনের অপবাদ দেননি। আমি দেশেই ছিলাম এবং এ জন্য আমার কোনো গ্লানি বোধ নেই। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষ মিথ্যা বলতে পারেন এটা তো সাধারণের মনে আসে না। যেহেতু ডা. জাফরুল্লাহ এখন খালেদা জিয়ার পক্ষে আর শাহরিয়ার এর বিপক্ষে তাই এই মিথ্যাচার। সাধারণ মানুষ তাতে খানিকটা তো বিভ্রান্ত হতেই পারে। যা হোক, আমি বললাম, ‘কলকাতা থেকে কি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মুরগি সাপ্লাই দেয়া সম্ভব?’ তিনি আর কিছু বলেননি।
ছোট একটি প্রসঙ্গ দিয়ে এ পর্ব শেষ করছি। একদিন সকালে ঘরে বসে প্রতিরোধের জন্য একটি সংবাদ অনুবাদ করছি। জানালার সামনে টেবিল, জানালা খোলা। হঠাৎ দেখি, জানালার ওপারে এক পাকিস্তানী সৈন্য দাঁড়িয়ে। চোখাচোখি হতে আমাকে ঘর থেকে বেরুতে বলল। ঘরে তখন আমার চাচি তার দু’বছরের পুত্র জ্বরাক্রান্ত নাদিমকে নিয়ে ব্যস্ত। তাকে না জানিয়ে আমি বেরুলাম। রাস্তায় ইতোমধ্যে সাত আটজন তরুণ ও পথচারীকে লাইন ধরে দাঁড় করানো হয়েছে। চলবে...
শীর্ষ সংবাদ: