ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ওমানের প্রতিদ্বন্দ্বী বৃষ্টি!

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশ-ওমানের প্রতিদ্বন্দ্বী বৃষ্টি!

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ দুইবছর আগের টি২০ বিশ্বকাপে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ধুকতে ধুকতে বাছাইপর্ব পেরিয়েছিল। এবারও বাংলাদেশের সামনে সেই অবস্থাই কি দাঁড়িয়ে গেল না? গত বিশ্বকাপে রানরেটে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের ‘সুপার টেনে’ খেলতে হয়েছে। এবারও কি তাই হবে? ধর্মশালার আবহাওয়া বার্তা যা আভাস দিচ্ছে, তাতে রবিবারও ম্যাচের ‘দিন-রাতে’ বৃষ্টি পড়বে। সেই বৃষ্টিতে বাংলাদেশ-ওমান ম্যাচও ভেস্তে যেতে পারে। তাতে করে ওমানের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েও বাংলাদেশ ‘সুপার টেনে’ খেলা নিশ্চিত করবে ঠিক, কিন্তু তাতে রানরেটে এগিয়ে থাকার আশীর্বাদপুষ্টই হবে বাংলাদেশ। আর যদি ম্যাচটি হয়, তাহলে কি হবে? বাংলাদেশকে জেতা ছাড়া কোন পথই নেই। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই পড়ে গেছে মাশরাফি বাহিনী। কোনভাবে ওমানের কাছে যদি হেরে যায় বাংলাদেশ, তাহলে সব স্বপ্ন, আশা এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে! বাংলাদেশ কি তা হতে দেবে? এখানেও সেই ২০১৪ সালের স্মৃতিই সবার চোখের সামনে ভাসছে। টুর্নামেন্টে সেবার বাংলাদেশ ছিল স্বাগতিক। বাছাইপর্বের গ্রুপে সবচেয়ে শক্তিশালী দলও ছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান, নেপালকে উড়িয়ে দিতে পারলেও শেষ ম্যাচে গিয়ে হংকংয়ের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ! এমন অবস্থা হয়, একটু পিছলে গেলেই নিজ দেশের বিশ্বকাপে ‘সুপার টেনে’ খেলতে পারত না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ১০৮ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল। যদি হংকং ১৩.২ ওভারের আগে টার্গেট অতিক্রম করতে পারত, তাহলেই বাংলাদেশের বিদায় ঘণ্টা বাজত। নেপাল চলে যেত ‘সুপার টেনে’। কিন্তু হংকং তা করতে পারেনি। ২ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে। হারেতো লজ্জা মিলেছেই তখন। এর সঙ্গে এভাবে ধুকতে থেকে ‘সুপার টেনে’ খেলাতে দলের আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি দেখা গেছে। ‘সুপার টেনে’ একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। আজ যখন ওমানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ, তখন সেই ম্যাচই যেন বাংলাদেশ শিবিরের আশপাশে ‘প্রেতাত্মা’র মত ঘুরছে! সেবার হংকং প্রথমবারের মতো স্বল্পওভারের বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। প্রথমবারেই বাজিমাত করেছে। টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারিয়ে দিয়েছে। এবার বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত হংকং শুধু টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষেই খেলেছিল। জয়ও তুলে নিয়েছিল। এবার ওমানকে নিয়েও সেই ভয়ই আছে। প্রথমবারের মতো খেলছে দলটি। প্রথমবারেই আয়ারল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশকেও হারানোর স্বপ্ন দেখছে। ওমান অধিনায়ক সুলতান আহমেদ তো বলেই দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশকে হারাতে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ সেই স্বপ্ন যে ওমানের সফল হবে না, তা কে বলতে পারে? টি২০ যে দুই তিনটি ওভার ও দুই তিনটি ওভারে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের খেলা। মুহূর্তেই খেলা শেষ হয়ে যায়। সেই মুহূর্তে যে দলটি বাজিমাত করে তাদেরই জয় মিলে। বাংলাদেশ আবার ওমান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে ওমানের জ্ঞান বিস্তর। বাংলাদেশ যেসব স্থানেই এখন দাপটের সঙ্গে বিচরণ করছে। ঠিক যেমনটি হংকং সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না বাংলাদেশের এবং হেরেছিল। এবারও যে সেইরকম অঘটনের সম্মুখীন হবে না মাশরাফিরা, তা কে বলতে পারে? বাংলাদেশ এখন টি২০তেও শক্তিশালী দল হয়ে ওঠেছে। তা ঠিক। কিন্তু আনকোরা একটি দল যে কোন দলের বিপক্ষে যে কোন মুহূর্তে বিপদ হয়ে উঠতে পারে। ওমান যদি আজ সেইরকমই হয়ে ওঠে? তাই বাংলাদেশকে খুব সতর্ক হয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কোন ভুল করা যাবে না। যতই ওমান দুর্বল দল হোক, নিজেদের সবটুকু উজাড় করেই খেলতে হবে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য বলেছেন, ‘দুই দলের জন্যে চাপ তৈরি হয়ে গেছে। দুই দলেরই তিন পয়েন্ট। তবে রান রেটে আমরা এগিয়ে আছি। কিন্তু আমরা যেভাবে খেলে আসছি, সেভাবে খেলতে পারলে আমরা ভাল করব। অন্য ম্যাচগুলোকে যেভাবে দেখেছি, খেলেছি; কোন কিছু না ভেবে সেভাবেই খেলতে হবে।’ বাংলাদেশ এখন তা করতে পারলেই হয়ে যায়। অপরাজিত থেকেই তাহলে ‘সুপার টেনে’ খেলা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। হল্যান্ডকে হারানোর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার বৃষ্টি বাধা পেরিয়ে ম্যাচটি হলে এবং ওমানকে হারিয়ে দিলে অপরাজিত থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ‘সুপার টেনে’র মিশনে নামতে পারবে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান খুব কঠিন আবার সহজও হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজ হিসেব হচ্ছেÑ বাংলাদেশ না হারলেই হয় আজ। ওমানের বিপক্ষে হার ছাড়া যে কোন রেজাল্ট মিলুক, বাংলাদেশ চলে যাবে ‘সুপার টেনে’। সেরা ১০ দলের একটি হয়ে যাবে। এরপর শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশের ‘সুপার টেন’ মিশন। যেখানে ১৬ মার্চ পাকিস্তান, ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়া, ২৩ মার্চ ভারত ও ২৬ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। ঠিক তার উল্টে হয়ে যাবে, শুধু একটি অঘটন ঘটলেই। পরিসংখ্যানও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যদি বাংলাদেশ হেরে যায়। বাছাইপর্ব থেকেই তখন ছিটকে পড়বে বাংলাদেশ। এমন ম্যাচের আগে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ যতটানা, তারচেয়েও বেশি সিরিয়াস ওমান। দলটিকে ‘ছোট্ট’ করে দেখার কোন সুযোগই নাই। ওমান যতই প্রথমবারের মত টি২০ বিশ্বকাপে খেলুক, দলটি কিন্তু নিজেদের এরই মধ্যে প্রমাণ করেছে। তাই বাংলাদেশকে সাবধান হয়েই খেলতে হবে। সেই সাবধানী পথের সামনে বাংলাদেশের সামনে যেন হংকংয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হারের ‘প্রেতাত্মা’ই ঘুরছে!
×