ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রূপসী বাংলা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৭ গুণীজন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৩ মার্চ ২০১৬

রূপসী বাংলা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৭ গুণীজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ গুণীজনকে প্রদান করা হলো আন্তর্জাতিক রূপসী বাংলা সাহিত্য পুরস্কার। লোকসাহিত্য গবেষণা, কবিতা, নাটক ও গানের জন্য তাঁদের এই সম্মাননা জানানো হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজনরা হলেন লোকসাহিত্য ও গবেষণায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান, কবিতায় কবি নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, রবিউল হুসাইন, তপংকর চক্রবর্তী এবং কবিতা, নাটক ও গানে সহিদ রাহমান ও সমাজসেবায় অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম। জীবনানন্দ উৎসব কমিটির উদ্যোগে শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের ভিআইপি কক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় এক আনন্দঘন পরিবেশে তাঁদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কাজী রোজী এমপি, আসীম সাহা, আসলাম সানী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন ‘আন্তর্জাতিক রূপসী বাংলা সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তক ও জীবনানন্দ উৎসব কমিটির সভাপতি ভারতের বিশিষ্ট কবি অমৃত মাইতি। শুরুতে সদ্য প্রয়াত কবি রফিক আজাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি মিতালী হোসেন। কবি অমৃত মাইতির জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর শুরু হয় আলোচনা। এতে বক্তারা বলেন, আজ দিনটির শুরুটা যত আনন্দের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল, মধ্যাহ্নের পরে সে আনন্দ দুঃখে ভারাক্রান্ত হলো। আমাদের কাছের মানুষ কবি রফিক আজাদ চিরকালের জন্য আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয়ায় আমরা খুবই মর্মাহত। তিনি বেঁচে থাকলে কোন না কোন একদিন এ পুরস্কারও লাভ করতেন। রফিক ভাই নেই কিন্তু আছে তাঁর কবিতা। এই কবিতার মাধ্যমেই তিনি আমাদের কাছে অমর হয়ে থাকবেন। রূপসী বাংলা সাহিত্য পুরস্কার প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর থেকে প্রতিবার ছুটে এসে এই পুরস্কার প্রদান করে যান আমাদের কাছের মানুষ কবি অমৃত মাইতি। তিনি যেভাবে বাংলাদেশের কবি, সহিত্যিকদের এভাবে সম্মানিত করেন, আমরা তাঁকে ঠিক সেভাবে মূল্যায়ন করতে পারি নাই এটা আমাদের এক প্রকার ব্যর্থতা। তাঁর প্রতি আমাদের শুভ কামনা রইল। পরে পুরস্কৃতদের উত্তরীয় পরানো এবং সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুভূতি প্রকাশ করে পুরস্কৃতরা বলেন, আমরা কবি রফিক আজাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি, পাশাপাশি জীবনানন্দ দাশের নামে এই পুরস্কার প্রথম বারের মতো পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করছি। চারুকলায় খালিদ মাহমুদ মিঠুর স্মরণসভা ॥ অদৃষ্টের কবলে পড়ে গাছচাপায় সম্প্রতি নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রশিল্পী ও আলোকচিত্রী খালিদ মাহমুদ মিঠু। তাঁর স্মরণে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শোক ও স্মরণসভা। চারুকলা অনুষদ আয়োজিত শোকসভায় স্মৃতিচারণ করেন নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠুর বন্ধু-আত্মীয়, শিক্ষক ও গুণগ্রাহীরা। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি, চিত্রশিল্পী মোখলেসুর রহমান, শিল্প সংগ্রাহক সালাহউদ্দীন আহমদ, ফজলে আলী কচি, আতিয়া ইসলাম এ্যানি, নাসিম আহমেদ নাদভী, শিশির কুমার ভট্টাচার্য, শহীদ কবীর, মোহাম্মদ ইউনুস প্রমুখ। পিতৃ স্মৃতিচারণ করেন খালিদ মাহমুদ মিঠুর কন্যা শিরোপা। দীপু মনি বলেন, মিঠুর সাথে আমার ব্যক্তিগত ভাবে গভীর পরিচয় ছিল। তার সাথে আমার পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। নানা জায়গায় তার সাথে দেখা হয়ে যেত। বয়সের ব্যবধান থাকলেও দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক ছিল। সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, মিঠু শুধু একজন সাধারণ শিল্পী নন। শিল্পকলার সব মাধ্যমে তার বিচরণ ছিল এবং সব মাধ্যমেই তিনি সাফল্য লাভ করেছেন। এই বহুমুখী প্রতিভা সম্পর্কে আগামী প্রজš§কে জানতে হবে, এর দ্বারা নতুন প্রজš§ অনুপ্রেরণা লাভ করবে। খালিদ মাহমুদ মিঠুর কন্যা শিরোপা পিতৃ স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাবা অনেক কাজ করে গেছেন। সমাজকে তিনি দিয়ে গেছেন প্রচুর। তার শিক্ষায় আমরা বড় হয়েছি। তিনি আরও কাজ করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি আমাদের যে আদর্শ শিখিয়ে গেছেন, আমরা যেন তা মেনে চলতে পারি। তার অসমাপ্ত কাজগুলো যেন আমরা চালিয়ে যেতে পারি। অপূর্ণ স্বপ্নগুলো আমাদেরই পূরণ করতে হবে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলাম। খালিদ মাহমুদ মিঠু গত ৭ মার্চ ঢাকার ধানম-িতে গাছচাপা পড়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানের ৪৬ বছর পূর্তি ॥ বিশিষ্ট গীতিকার গাজী মাযহারুল আনোয়ার লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের রণসঙ্গীত ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি। কালজয়ী এ গানটি রচনার ৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় গাজী মাযহারুল আনোয়ারকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও তাঁর লেখা গান নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আমরা সূর্যমুখী’। সুধীজনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন শেষে অনুষ্ঠানে গাজী মাযহারুলের লেখা গান শোনান তিন কণ্ঠশিল্পী রুখসানা মুমতাজ, দিঠি আনোয়ার ও সাবিনা লাকী । জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। সভাপতিত্ব করেন লে. জে. (অব) হারুনুর রশিদ বীরপ্রতীক। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী তিমির নন্দী, গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী, কবির বকুল, কুমার বিশ্বজিৎ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আমরা সূর্যমুখী সংগঠনের কর্ণধার শফিকুল ইসলাম সেলিম। তিন শিল্পীর কণ্ঠে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। মানপত্র পাঠ করেন আবৃত্তিকার রফিকুল ইসলাম। গাজী মাযহারুলের হাতে মানপত্র ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তুলে দেন অতিথিরা। গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী বলেন, গাজী মাযহারুল আনোয়ার হাজারো গান লেখে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করেছেন। জয় বাংলা বাংলার জয় গানটি মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই লেখা। অর্থাৎ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তিনি তার লেখনীতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছেন। স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের রণসঙ্গীত হিসেবে কেন এই গানটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না? তিমির নন্দী বলেন, গাজী মাযহারুল আনোয়ার এদেশের নক্ষত্র, জীবন্ত কিংবদন্তি গীতিকবি তিনি। ১৯৭০ সালে তিনি জয় বাংলা গানটি লেখেন। আমার কৈশোরকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল এই গান। সত্তরের সমকালীন প্রেক্ষাপট চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে এই গানে। শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের পর ছিল তিন কন্যার গানের পালা। গাজী মাযহারুলের লেখা জনপ্রিয় ১৫টি গান পরিবেশন করেন তারা। রুখসানা মুমতাজ শোনান ‘আমায় যদি প্রশ্ন করো’, ‘নজর লাগলো বলে’, ‘তুমি কখন এসে’, ‘ইচ্ছে তোমার মনের নদী’ এবং ‘কালো জলে কুজলা তলে’। দিঠি আনোয়ার শোনান ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি’, ‘আমার রসিয়া বন্ধুরে’ এবং ‘আমার আছেন মোক্তার’। সাবিনা লাকী শোনান ‘ফুলের কাছে ভ্রমর এসে’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘বিমূর্ত এ রাতটি আমার’, ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে’ এবং ‘সোনাদানা দামী গহনা’। শেষ হলো ক্যানভাস আর্ট ক্যাম্প ॥ আগামী ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও শিশু দিবসে পল্লবীতে অনুষ্ঠিত হবে চিল্ড্রেন আর্ট ফেস্ট। ওই উৎসবের আর্ট ক্যাম্পে শিশুদের সৃজিত শতাধিক শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে। এ উপলক্ষে সেন্টার ফর এডভান্স নার্চারিং এ্যান্ড ভিজ্যুয়াল আর্ট স্টাডিজ (ক্যানভাস) এবং নেসন হাট লিমিটেডের উদ্যোগে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ক্যানভাস আর্ট ক্যাম্প। খুদে শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত এ শিল্প কর্মশালার শেষ দিন ছিল শনিবার। সমাপনী দিনে ক্ষুদে শিল্পীদের শিল্পকর্ম সৃজন বিষয়ক নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রশিক্ষকরা। প্রশিক্ষকরা কখনও বলে বুঝিয়ে কাজ না হলে প্রয়োজনে হাত লাগিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে কি করতে হবে। গুরু-শিষ্যদের যৌথ প্রচেষ্টায় কর্মশালার শেষ দিনেও তৈরি হয়েছে বেশ কিছু শিল্পকর্ম।
×