ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাইক্রো থেকে ছুড়ে ফেলা নবজাতক এখন ঢামেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ মার্চ ২০১৬

মাইক্রো থেকে ছুড়ে ফেলা নবজাতক এখন ঢামেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ জন্মই আজন্ম পাপ! মাইক্রোবাস থেকে ছুড়ে ফেলা নবজাতক শিশুটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। রাজধানীর শাহবাগের পরীবাগে কুড়িয়ে পাওয়া ওই নবজাতককে কোলে নিয়ে তাসলিমা নামে এক মহিলা ভিক্ষাবৃত্তি করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলকার নাইন নামে এক ছাত্রের নজরে পড়ে। কঙ্কাল আকৃতির নবজাতককে কোলে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ওই ছাত্রের কাছে অর্থের সাহায্য চায় তাসলিমা। জুলকারনাইন বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। নবজাতককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হবে। এই কথা বলার পর ওই মহিলা নবজাতককে নিয়ে সরে পড়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিধি বাম ওই মহিলাকে অবশেষে নবজাতকসহ হাসপাতালে আসতে হলো। কয়েক সপ্তাহ বয়সী বাচ্চাটিকে দেখে বড্ড মায়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজুল হক হলের ছাত্র জুলকার নাইনের। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তাসলিমাকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তাকেসহ বাচ্চাটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরী বিভাগে আনেন। কিন্তু ভর্তি করতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশি অভিভাবক ছাড়া বেওয়ারিশ শিশুটিকে তারা ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন রাতে জরুরী বিভাগের দুই নম্বর গেটে দায়িত্ব পালনরত শাহবাগ থানার উপ-পরির্দশক মাহবুব হোসেন। তাৎক্ষণিকভাবে শাহবাগ থানার উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশি অভিভাবকত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর নবজাতকটিকে ঢাকা মেডিক্যালের পুরাতন ভবনের ২০৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল পরিচালকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে বাচ্চাটির চিকিৎসা সেবাসহ তার ব্যাপারে পরবর্তী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। পরে তা মিডিয়ার সামনে তুলে ধরা হবে নবজাতকের সার্বিক পরিস্থিতি। ভিক্ষুক তাসলিমা নামে ওই মহিলাটি নবজাতকটিকে কুড়িয়ে পাওয়া গল্পটি শুনে সিনেমার কাহিনীকে হার মানায়। ৪ নম্বর বেডে নবজাতকের শিয়রে বসে তাসলিমা জানান, মঙ্গলবার রাতে অন্য আর দশ দিনের মতো ভিক্ষে করে ঘরে ফিরছিলেন তিনি। পরিবাগ পৌঁছানোর পর হঠাৎ দেখেন, একটি মাইক্রোবাস ভেতর থেকে কে বা কারা একটি বাচ্চা ফুটপথে ফেলে রেখে দ্রুত সেখান থেকে হাওয়া হয়ে যায়। মাইক্রোবাসটি এত দ্রুত চালাচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল ওরা পালাতে পারলেই বাঁচে। পরে হতভাগ্য ওই শিশুটিকে বাঁচাতেই কোলে তুলে নেন তাসলিমা। তাকে খাইয়ে-পরিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে শিশুটিকে তিনি সুস্থ করে তুলতে পারেননি। তাই প্রতিদিনের মতো নবজাতকে কোলে নিয়ে শুক্রবারও ভিক্ষা করতে নামতে হয় তাকে। কিন্তু শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মাহবুব হোসেন জানান, মানবতা বা মমতা থেকে নয়। শিশুটিকে কুড়িয়ে পাওয়ার পরই তাকে ব্যবহার করে ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে পকেটে টাকা নেয়ার ফন্দি ছিল তাসলিমার। তা না হলে ওনিতো হাসপাতালে এনে শিশুটি চিকিৎসা করাতে পারতেন। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুলকার নাইনের হাতে পড়ে যাওয়ায় শিশুটির স্থান হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর শিশুটিকে আপাতত দেখে-শুনে রাখার জন্যই তাসলিমাকে ওর সঙ্গে রেখে দেয়া হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পর অভিভাবকের সন্ধান মিললে ফিরিয়ে দেয়া হবে। নইলে সমাজ সেবা অধিদফরের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতক ওই শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। অপুষ্টির কারণে তার শরীর কঙ্কালে রূপ নিয়েছে। সবাই ওই নবজাতককে বাঁচানো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন, জন্মের পর পরই কেনই বা এই নবজাতকে রাস্তায় ঠাঁই নিতে হলো। কারা তাকে ফেলে গেল। এই অবুঝ শিশুটির মা-ই বা কে? হায়রে জন্মই যে ওর আজন্ম পাপ!
×