ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনে কাল থেকে দ্বিতীয় দফা প্রচার শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ মার্চ ২০১৬

ইউপি নির্বাচনে কাল থেকে দ্বিতীয় দফা প্রচার শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামীকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারে নামছেন দ্বিতীয় দফার ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও যারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চান তাদের আজকের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কমিশন জানিয়েছে প্রত্যাহার শেষে বৈধ প্রার্থী হিসেবে যারা থাকবেন তাদের সোমবার ১৪ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের প্রতীক নির্দিষ্ট থাকায় তারা দলের প্রতীক নিয়েই প্রচারে নামছেন। অবশিষ্ট চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদস্য ও মহিলা সদস্য প্রার্থীদের মধ্যেই তাদের পছন্দ অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে কোন প্রতীকের দাবিদার দুজন প্রার্থী থাকলে সেক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে প্রতীক দেয়া হবে। এদিকে ইসি জানিয়েছে প্রতীক বরাদ্দ নিয়েই প্রার্থীরা প্রচারের নামতে পারবেন। তবে অন্য প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের আগে কোন দলীয় প্রার্থী প্রচারের নামতে পারবেন না। প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারের ক্ষেত্রে যাতে কোন বৈষম্য সৃষ্টি না হয় সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২ মার্চ ছিল দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা শেষ দিন। জমার শেষ দিনে দ্বিতীয় দফায় ৬৪৭ ইউপিতে নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট ৩৩ হাজার ২৮৭ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ৩ হাজার ১১১, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬ হাজার ৭৯৯ এবং সদস্য পদে ২৩ হাজার ৩৭৭ প্রার্থীর তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। চেয়ারম্যান পদে ১৫ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মিলে ১ হাজার ৫৫৫ এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে ১ হাজার ৫৫৩ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপির প্রার্থী ৫৮৭, আওয়ামী লীগের ৬৪৫ ও জাতীয় পার্টির মোট ১৭৫ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। ইসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে মোট ১৩ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে ফেনীর পরশুরাম উপজেলা তিন ইউপিতে নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে কমিশন। এর বাইরে বাকি ১০ ইউপিতে যারা একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আজ ১৩ মার্চ রবিবার প্রত্যাহার শেষে এসব প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে প্রথম দ্বিতীয় দফায় ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারের নামার অপেক্ষায় রয়েছেন। অপর দিকে প্রথম দফার প্রার্থীর রয়েছে নির্বাচনের প্রতীক্ষায়। গত ৩ মার্চ থেকে তারা ভোট প্রার্থনা করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সকাল-সন্ধ্যা ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। প্রার্থনা করছেন একটি মাত্র ভোটের। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে নির্বাচনে জিততে পারলে সবরকম সমস্যার সমাধান করা হবে। বিপদে আপদে পাশে থাকারও কথা বলছেন। এলাকার ভাগ্য উন্নয়নের একটিবার সুযোগ দেয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। ঘুম হারাম করে নির্বাচনী প্রচার চলিয়ে যাচ্ছেন রাতদিন। আগামী ২২ মার্চ হবে প্রথম দফায় নির্বাচন। ফলে প্রার্থীরা তার নির্বাচনী প্রচারের জন্য সময় পাচ্ছে মাত্র আর এক সপ্তাহ। এ সময়টুকই সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনী প্রচারকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রতিদিনই হামলা সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে নিহতের পাশাপাশি আহতের সংখ্যা বাড়ছে। কমিশনের হিসেবে অনুযায়ী গত ২ মার্চ প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য প্রত্যাহার শেষে ৭৩৩ ইউপিতে বৈধ প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৬ হাজার ৪৫৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩৬ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ ও সংরক্ষিত পদে ৭ হাজার ৫৭৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে ৭৩১ জন। বিএনপির ৬১৩, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সংখ্যা রয়েছে মাত্র ১২৭ জন। চেয়ারম্যার পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২৪৬ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৭৮৮ জন। যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া প্রথম দফায় ৬২ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদের সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত। প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইসির পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথমদ দফায় নির্বাচন হবে ২২ মার্চ। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে সব মিলিয়ে ৩৯ হাজার ৪৩০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বাছাই ও ২ মার্চ প্রত্যাহার শেষে ৩৬ হাজার ৪৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তৃতীয় দফায় তফসিলের অপেক্ষা ॥ এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য কমিশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও তৃতীয় দফায় এখন তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। কমিশন সূত্রে জানা গেছে এ সপ্তাহের মধ্যেই তৃতীয় দফার নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এখনও তফসিল ঘোষণা করা না হলেও ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তফসিল ঘোষণা করা হলেই প্রার্থীদের মধ্যে প্রত্যায়নপত্র তুলে দেয়া হবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রত্যয়ন দেয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর স্বাক্ষরে। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীরা প্রত্যায়ন পাবেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের স্বাক্ষরে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে তৃর্তীয় দফায় তারা সব ইউপির প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ্য না করা হলেও তৃণমূল থেকে তালিকা চূড়ান্ত করে দলীয় প্রধানের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার জামালপুর ইউপির বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর মনিরুজ্জামান বাবু বলেন ইতোমধ্যে তৃণমূল থেকে তার নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে অনুমোদনের জন্য। আগামী ২০ মার্চের পর থেকে তাদের প্রত্যয়নপত্র হাতে দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একই ইউপির আওয়ামী লীগের প্রার্থী আগে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে আগামী ১৫ মার্চ তৃতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। প্রথম দফায় ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ ইসির ঘোষিত সূচি অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
×