ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডেভিড ক্যামেরনের চিঠির জবাব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ মার্চ ২০১৬

ডেভিড ক্যামেরনের চিঠির জবাব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

আজাদ সুলায়মান ॥ ঢাকা থেকে সরাসরি বিমানের কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবিষয়ক ঘাটতি পূরণে দ্রুত জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের লেখা চিঠির জবাব তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এ চিঠির জবাব প্রস্তুত করার জন্য ইতোমধ্যে সব তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ অবস্থায় শনিবার ঢাকায় এসে পৌঁছেন যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে সরাসরি কার্গো রফতানি করতে প্রয়োজনীয় সনদ দেয়ার রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার কার্গো-৩ (এসিসি)’-এর প্রতিনিধি ডেনিস ও সুলিভার। তিনি আইএটিএ-এর ফাইনাল ভেলিডেটর। তিনি ঢাকায় কয়েকদিন অব্স্থান করে শাহজালাল বিমানবন্দর ও কার্গো হাউস নিয়মিত পরিদর্শন করবেন। সর্বশেষ নেয়া নিরাপত্তাবিষয়ক পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি সচক্ষে দেখবেন- এর আগে ব্রিটিশ টিমের দেয়া পর্যবেক্ষণগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি-না। এদিকে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের সঙ্গে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের পূর্বনির্ধারিত আজকের বৈঠকটি বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য মন্ত্রী বলেছেন, বৈঠকটি বাতিল নয় পেছানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবিষয়ক ইস্যুতে একটি চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এতে বিমানবন্দরের জন্য আশু করণীয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণেরও অনুরোধ করা হয়। নইলে কার্গোর পর বিমানের লন্ডন ফ্লাইটও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবিষয়ক নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চেয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠির প্রত্যুত্তরে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বিস্তারিত তথ্যউপাত্ত পাঠানো হয়, যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হচ্ছে ডেভিড ক্যামেরনের চিঠির জবাব। উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র শনিবার জনকণ্ঠকে জানায়, প্রধানমন্ত্রীর লেখা চিঠিতে বিমানবন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যাপক কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ গোয়েন্দা টিমের সুপারিশ অনুযায়ী আরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট সময় চেয়ে ডেভিড ক্যামেরনের প্রতি আবেদন রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেন, নিরাপত্তাবিষয়ক সর্বশেষ কিছু তথ্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি যুক্তরাজ্য অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এদিকে সিভিল এ্যাভিয়েশনের একটি সূত্র জানায়, গত ৮ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে গোপনে আরও একটি টিম ঢাকায় আসে। তারা প্রতিদিন শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো, হ্যাঙ্গার, বিএফসিসি, টার্মিনাল ভবন, চেকইন, ইমিগ্রেশন ও এয়ারসাইট এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে গোপনে পরিদর্শন করছেন। এ বিষয়ে বিমান সূত্র জানায়, এসিসি-৩ এর প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কি-না। এ টিম যদি সন্তোষজনক হয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে তাহলে আগামী মাস থেকেই ফের চালু হতে পারে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে তিন মাসের জন্য বিমানকে এই সনদ দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে একের পর এক টিম আসছে। এ টিম যাওয়ার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে এ মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা আসছে দুটি মার্কিন প্রতিনিধি দল। আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ তাদের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিমানবন্দর ও সাইবার নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন। যেভাবে টিম পাঠিয়ে নজরদারি শুরু করেছে, তার শেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার বিষয়। উলেখ্য, গত মঙ্গলবার হঠাৎ যুক্তরাজ্য ঢাকা থেকে লন্ডনের সরাসরি কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এছাড়া আগামী ৩১ মার্চ থেকে বিমানের লন্ডন ফ্লাইটও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে বলে জানিয়ে দেয়।
×