ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড় ধরনের কর ছাড় দিচ্ছে এনবিআর

প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে গড়ে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৩ মার্চ ২০১৬

প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে গড়ে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশের অর্থনীতিকে বিশেষ স্থানে নিয়ে যেতে চাচ্ছে সরকার। আগামী পাঁচ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এই লক্ষ্য পূরণে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে শিল্প খাত। এজন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল কেন্দ্রিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে সরকার। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে বড় ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ছয়টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ডেভেলপার, ব্যবসায়ী, বিদেশী কর্মী নিয়োগ, কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর কর ছাড়সহ কয়েকটি খাতে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। আরও দুটি ছাড়ের প্রজ্ঞাপন শীঘ্রই জারি করবে এনবিআর। বর্তমান যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে সেগুলোর পাশাপাশি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও এই সুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদশে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এগুলো হলে আগামী ১৫ বছরে এক কোটি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ৪০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হবে। ইতোমধ্যে ৫৯টির জমি চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টি বেজার গবর্নিং বোর্ড অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বেসরকারী খাতে আর চারটি সরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের অধীনে গড়ে ওঠা এ ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২১৬ একর জমির ওপর আব্দুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল, নরসিংদীর পলাশে ২০০ একর জমির ওপর এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বদ্দার বাজার এলাকায় ১৫০ একর জমির ওপর আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুর সদর উপজলোর কোনাবাড়িতে ৪০ একর জমির ওপর বে-অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট এ ২৪৫ একর জমিতে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, একই উপজলোর ছোট শলিমা-িতে ৮০ একর জমিতে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাটের মংলায় ২০৫ একর জমিতে মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজলোয় ৮৮২.২৬ একর জমিতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক এবং মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজলোয় ৩৫২ একর জমিতে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর সুবিধা পেয়েছে ডেভেলপাররা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হতে সকল আয়ের ওপর প্রথম ১০ বছর কোন কর দিতে হবে না। পরবর্তী বছরে ৭০ শতাংশ আয়ের ওপর কর দেয়ার প্রয়োজন নেই। এর পরের বছরে ৩০ শতাংশ কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে ডেভেলপার কোম্পানি। এছাড়া ডেভেলপাররা বিদ্যুত এবং স্থানীয় কেনাকাটায় বিশেষ সুবিধা সংক্রান্ত আরও দুটি প্রজ্ঞাপন জারির কাজ চলছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, এখন এটি চারা গাছ যেটিকে সরকারী সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ফুলে ফলে বড় বৃক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে এ কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এর আগে তৈরি পোশাক খাতও একইভাবে সুবিধা পেয়ে প্রধান রফতানি খাতে পরিণত হয়। মূলত নীতি পদক্ষেপ হিসেবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ভর করে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এতে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। কর্মসংস্থান বাড়বে, ব্যবসায়ী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে। এনবিআর অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিচালিত কোম্পানিকে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম হতে সকল আয়ের ওপর প্রথম তিন বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। চতুর্থ বছরে আয়ের ৮০ শতাংশ, পঞ্চম বছরে ৭০ শতাংশ, ষষ্ঠ বছরে ৬০ শতাংশ, সপ্তম বছরে ৫০ শতাংশ, অষ্টম বছরে ৪০ শতাংশ এবং নবম বছরে ৩০ শতাংশ কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়েছে। এছাড়া দশম বছরে ২০ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আয়কর অনুবিভাগ। অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে বিদেশী কর্মী কাজ করলে প্রথম তিন বছর আয়ের ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে পরবর্তী দশ বছর আয়কর অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার তারিখ হতে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তরের ফলে সৃষ্ট মূলধনী মুনাফার ওপর আয়কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার পর হতে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে দেয়া মালিকানা, কারিগরি সহায়তা অব্যাহতি দিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন অভিযোগ ছিল বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারী কোন উদ্যোগ নেই। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। কর ছাড়ের কারণে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে। বিনিয়োগকারীরা এখানে কর অবকাশ, জমি, গ্যাস এবং বিদ্যুত সবই পাচ্ছে। সুতরাং কর ছাড় খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এর আগে দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বেসরকারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে না। আমরা বেসরকারী খাততে গুরুত্ব দিচ্ছি। এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছি। যে দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করা হলো এর মধ্যে ছয়টিই হচ্ছে বেসরকারী খাতের। এর মধ্য দিয়েই বেসরকারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব। ইতোমধ্যে আমরা বিনিয়োগবান্ধব নানা পদক্ষপে নিয়েছি। নীতিমালা করেছি। আমরা ব্যবসা করতে নয়, ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে চাই।
×