ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঘোষণা উপপ্রধানমন্ত্রী জাহিদি হামিদির ;###;বিষয়টি সম্পর্কে আজ কুয়ালালামপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে ঢাকা;###;অবৈধ বিদেশীদের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে দেশটি

আনুষ্ঠানিক স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ মার্চ ২০১৬

আনুষ্ঠানিক স্থগিত

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগে আনুষ্ঠানিক স্থগিত ঘোষণা করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমাদ জাহিদ হামিদি শনিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বিদেশী কর্মী নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে অনুমতিপত্র ছাড়া বিদেশী কর্মী কাজ করছেন অথবা যাদের অনুমতিপত্রের মেয়াদ পার হয়ে গেছে- তাদের বৈধতার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে আবেদন জানাতে হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে চাকরিদাতাদের বিদেশী কর্মীদের বৈধতা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মীদের বৈধ করার বিষয়ে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক না হলে শুধু জরিমানা দিয়ে পার পাওয়া যাবে না বলে সতর্কতা জারি করেছেন আহমাদ জাহিদ। প্রয়োজনে সরকার আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা দেশটির সংবাদমাধ্যমে শনিবার সকাল থেকেই প্রচার করা হয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোনে এ খবর জানিয়েছেন বেশ কয়েক বাংলাদেশী। কর্মী নিয়োগ স্থগিত করার বিষয়টি জানার জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামসুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোন কথা বলেননি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা অফিসিয়ালি বিষয়টি জানেন না। কিন্তু শনিবার মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তের কথা তারা শুনেছেন। অফিস বন্ধ থাকার কারণে বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না। আজ রবিবার মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানা যাবে। সূত্র জানিয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতোসিরি রিচার্ড রায়ট আনক জাইম। কিন্তু পরদিন সকালেই দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আপাতত কোন দেশ থেকেই কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না। এ ঘোষণার পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শামসুন্নাহার বলেন, মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অফিসিয়াল নয়। এ বক্তব্যে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের কোন ক্ষতি হবে না। এটা দেশটির রাজনৈতিক অবস্থার ওপর দেয়া বক্তব্য। তবে আমরা আশাবাদী মালয়েশিয়া চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কর্মী নিয়োগের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ২১ দিনের মধ্যে দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে একই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। দেশটি বিদেশ থেকে আপাতত কোন কর্মী নিয়োগ করবে না। বরং যেসব কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তাদের বৈধতা দেয়ার জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথমে অবৈধ কর্মী বৈধ হওয়ার সময় দেয়া হয়েছিল এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। পরে মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন জুন মাস করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মী বৈধ না হলে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। এরপরও যদি কেউ অবৈধভাবে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কর্মী নিয়োগে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর মালয়েশিয়া সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছিলেন। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানান, নতুন এ সমঝোতা স্মারক দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছিলেন, আজ থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলো। বহু দেন-দরবারের পর অবশেষে কাক্সিক্ষত ফল এলো। জিটুজিতে (সরকার থেকে সরকার) ৫ বছরে যেখানে ৫ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে জিটুজি প্লাসে ৩ বছরে যাবে ১৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মী। পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে বিশ্বমানের তথ্যপ্রযুক্তি। মন্ত্রীর এমন আশাবাদের একদিন পর মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী কর্মী নিয়োগ আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেন। তখনও দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে। সে অনুযায়ী শুধু সরকারীভাবে মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন খাতে কর্মী পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পরে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশী কর্মী নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। পরে মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তিও শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির কর্তৃপক্ষ স্থগিত করেছে।
×