ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অনুমোদিত পদের অর্ধেকের বেশি শূন্য

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৩ মার্চ ২০১৬

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অনুমোদিত পদের অর্ধেকের বেশি শূন্য

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে দেশের একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। জাতীয় রাজস্ব আয়ের ২০ শতাংশ অর্জিত হয় এই শুল্ক ভবন থেকে। অথচ, এখানে কাজ চলছে অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকেরও কম কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে। বছরের পর বছর চলছে এভাবেই। নিয়োগ প্রক্রিয়া মাঝে মধ্যে শুরু হওয়ার আলামত পরিলক্ষিত হলেও তা ঝুলে যায় নানা জটিলতায়। কাম্য জনবল না থাকায় দৈনন্দিন কর্ম সম্পাদনে বেগ পেতে হয় বলে জানা যায় শুল্ক ভবনের অভ্যন্তরীণ সূত্রে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা আবশ্যিক একটি কর্তব্য হলেও এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও কর্মকর্তা নেই। এভাবে প্রতিটি পদেই বিরাজ করছে শূন্যতা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে দেখা যায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নেই। ফলে যারা আছেন তাদের টেবিলে ফাইলের স্তূপ। প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল না থাকায় বাইরের লোক দিয়েও কাজ চালাতে হয়, যারা ‘ফালতু’ হিসেবে অভিহিত। লোক না থাকায় এই ফালতুও কাস্টমসে স্বাভাবিক একটি পদের মতোই বিবেচিত হয়ে আসছে। এতে করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থায় স্বাভাবিক কাজকর্ম যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনিভাবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ রয়ে গেছে। কাস্টমসের সংস্থাপন শাখা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রাম শুল্ক ভবনে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ১ হাজার ২৪৮। এরমধ্যে পূরণ করা পদের সংখ্যা ৫৫০। আর শূন্যপদ রয়েছে ৬৯৮টি। অর্থাৎ অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকও বেশি শূন্য রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে জনবল নিয়োগ বন্ধ। একাধিকবার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা সুচারুভাবে শেষ হয়নি। ফলে যারা রয়েছেন তাদের ওপর পড়েছে বাড়তি চাপ। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য কোন কর্মকর্তা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা সকল পণ্যেরই বিশেষ করে খাদ্য, তেল ও কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা আবশ্যক। অহরহ চট্টগ্রাম বন্দরে ধরা পড়ে এক পণ্যের ঘোষণায় আরেক ধরনের পণ্য নিয়ে আসার ঘটনা। সর্বশেষ সানফ্লাওয়ার অয়েল ঘোষণায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া থেকে তরল কোকেন আমদানির ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়। এভাবে কোন চালান ধরা পড়লে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে আনতে হয় বিশেষ টিম। অথচ, এই পরীক্ষণের জন্য কাস্টমসের নিজস্ব জনবল থাকা উচিত বলে মনে করেন সকলেই। কিন্তু বিভাগ আছে, বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা নেই। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনুমোদিত পদগুলোর মধ্যে এ বিভাগের জন্য রয়েছে একটি প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক পদ, ৩টি উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক পদ ও ২টি রাসায়নিক পরীক্ষক পদ। কিন্তু সবগুলো পদই শূন্য। কাজ চালানো হচ্ছে মাত্র ২ জন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক দিয়ে। এই পদেও থাকার কথা ছিল ৬ জন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে শূন্য ৬৯৮টি পদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর শূন্যপদ ৯০টি। এরমধ্যে যুগ্ম কমিশনারের দুটি, ডেপুটি কমিশনারের ৮টি, প্রোগ্রামার ২টি, সহকারী পরিচালক (পরিসংখ্যান) ২টি, সহকারী কমিশনার ১৯টি, রাজস্ব কর্মকর্তা ৪৫টি, আইন উপদেষ্টা ১টি, আইন কর্মকর্তা ১টি, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ২টি এবং পরিসংখ্যান কর্মকর্তার ২টি পদ শূন্য রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর শূন্য পদ ৩৩১টি। এরমধ্যে সহকারী কমিশনারের পদই শূন্য আছে ৩২৩টি। তৃতীয় শ্রেণীর পদ শূন্য রয়েছে ২৪৬টি। এরমধ্যে উচ্চমান সহকারীর ৪৭টি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৬১টি, সাব ইন্সপেক্টর ৯টি ও সিপাই’র ১০৮টি পদ শূন্য আছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর পদ শূন্য আছে ৩৫টি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মোট ৫০টি পদের প্রায় সব ক’টিতেই শূন্যপদ রয়েছে। কাস্টমসের মাঝারি পর্যায়ের এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বলেন, শুল্কায়নের কাজটি এমনই যে, এ দায়িত্বে যারা নিয়োজিত রয়েছেন তাদের নিয়ে সমাজে নানা ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তার উপরে এতগুলো পদ শূন্য থাকলে অনিয়মের সুযোগও বেশি থাকে। কেননা, এক টেবিলে অধিক ফাইল যাওয়া মানেই অত্যধিক ব্যস্ততার অজুহাতে সেবা গ্রহীতাদের জিম্মি করার সুযোগ। তাছাড়া বেশি কাজ হলে ভুলভ্রান্তির আশঙ্কাও থাকে। কিন্তু কাস্টমস এমন একটি জায়গা যেখানে অনিচ্ছাকৃত ভুল হলেও সহজভাবে দেখা হয় না। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যোগান দিয়েছে ২৭ হাজার ২৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব। চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ৩৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা।
×