অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবশেষে দেশের পুঁজিবাজার গত কয়েক সপ্তাহের দরপতন কিছুটা কমেছে। শেষ তিন কার্যদিবসে সূচকের বৃদ্ধিতে গড়পড়তা সূচক বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমেছে। বড় মূলধনী কিছু কোম্পানির দর বাড়ার কারণে প্রধান বাজারের সূচক কিছুটা বাড়লেও শেয়ার কেনাবেচা কমেছে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ৪৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলেও গত সপ্তাহে তা ৩২৩ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে দরবৃদ্ধিতে স্বল্প ও মাঝারি বাজার মূলধনের কোম্পানিগুলো তুলনামূলক এগিয়ে ছিল। এছাড়া কেনাবেচায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও কমেছে। আগের সপ্তাহে দিনে গড়ে ১২ কোটি ৩৮ লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হলেও গেল সপ্তাহে তা ৯ কোটি ২৫ লাখ ১৭ হাজারের ঘরে নেমে আসে।
গত সপ্তাহের আলোচিত খবরের মধ্য ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত এবং দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও তফসিলি ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার কমানো। এ নিয়ে গত এক বছরে মোট তিনবার আমানতের বিপরীতের সুদের হার কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় কমেছে। তাই এটির সমন্বয় রাখতেই সুদের হার কমানো হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য খবরের মধ্য ছিল প্রধান বাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের মোবাইল এ্যাপস চালু। গত বুধবারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই এ্যাপসটির উদ্বোধন করেন। তবে এ্যাপস উদ্বোধন হলেও বিনিয়োগকারীরা এখনই মোবাইলে লেনদেন করতে পারছে না। এদিকে সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে ১৬৩টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও কর্পোরেট বন্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১২৪টির বাজার দর। অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টির এবং কোন লেনদেন হয়নি পাঁচটি সিকিউরিটিজের। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৭২টি কোম্পানির দর বেড়েছিল, কমেছিল ২৩১টি কোম্পানির দর এবং অপরিবর্তিত ছিল মোট ২৪টির দর। আগের সপ্তাহে বিক্রয়চাপের ধাক্কা কাটিয়ে গেল সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৮৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে। ডিএসইর নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএসই ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৭২১ পয়েন্টে উন্নীত হয়। তবে শরীয়াহ ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর দর হারানোর কারণে সংশ্লিষ্ট সূচকটির কিছুটা দরপতন ঘটেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে মোট শূন্য দশমিক ০৭ শতাংশ সূচক কমেছে। এদিকে সূচকের কিছুটা উর্ধগতির কারণে গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।
ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের সেরা কোম্পানিগুলো হলো : বাংলাদেশ স্টিল মিলস লিমিটেড, লঙ্কা বাংলা ফাইন্যান্স, ওরিয়ন ফার্মা, সিএমসি কামাল, কাসেম ড্রাইসেল, আমান ফিড, সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন এ্যান্ড ডিস্টিবিউশন, বেক্সিমকো ফার্মা ও ইফাদ অটোস। দরবৃদ্ধির তালিকায় সবার উপরে ছিল যথাক্রমে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, জেমিনি সি ফুড, লিবরা ইনফিউশন্স, সিএমসি কামাল, ন্যাশনাল ফিড, আইটিসি, আমান ফিড, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আমরা টেকনোলজিস ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দর হারানোর সেরা কোম্পানিগুলো হলো : জিপিএইচ ইস্পাত, আইপিডিসি, বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ল্যাম্পস, ইস্টার্ন ব্যাংক, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, কে এ্যান্ড কিউ, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও ওয়াটা কেমিক্যাল।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের মূল্যসূচক কিছুটা বাড়লেও সেখানকার কেনাবেচা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৮৩ পয়েন্টে। সিএসইর দরবৃদ্ধি তালিকায় ছিল প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল ফিড মিল, আইটিসি, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, বার্জার পেইন্টস, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, আমান ফিড, প্রাইম টেক্সটাইলস, লিবরা ইনফিউশন্স ও আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড।