ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে সমন্বয়হীনতা

সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ॥ দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৩ মার্চ ২০১৬

সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ॥ দেখার কেউ নেই

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সমন্বয়হীনতার অভাবে চট্টগ্রামে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলো কেটে চৌচির করে ফেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কখনও ওয়াসা, কখনও গ্যাস কোম্পানি আবার কখনও টেলিফোন সেক্টরের অনিয়মতান্ত্রিক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে টেকসই হচ্ছে না সড়কগুলো। দেখার কেউ নেই। আবার দেখলেও অর্থ বাণিজ্যের কারণে চুপসে থাকে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। এদিকে যানবাহন ও পথচারীদের অবস্থা নাকাল হলেও জীবিকার টানে চলতে হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন প্রকল্প সড়কের দুইদিকে সাইন বোর্ড গেড়ে দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ফাইবার অপটিক্যাল ঠিকাদারও জরুরীভিত্তিতে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানোর নামে রাস্তা খুঁড়ে একাকার করে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় না করে সদ্য সংস্কার করা রাস্তার মাঝেই সুড়ঙ্গ তৈরি করে যান চলাচলে বিঘœ ঘটানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, জাকির হোসেন রোডটি ভিআইপি সড়ক হলেও যে কোন সময় এ সড়কের দু’ধারেই চলে উন্নয়নের নামে হয়রানিমূলক কর্মযজ্ঞ। কেবল অপারেটর থেকে শুরু করে গ্যাস ও ওয়াসা যে কোন মুহূর্তে সড়কে গর্ত করেই নিজেদের কর্মকা- চালায়। দিনের পর দিন বিনষ্ট রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল থেকে শুরু করে পথচারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাব্যক্তিদের। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে দীর্ঘ চার মাসেরও বেশি সময় বর্ষাকাল ছিল। এতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়। বিনষ্ট সড়ক কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সাময়িক মেরামত করা হলেও পুরোদমে সংস্কার কাজ শুরুতেই বিঘœ সৃষ্টি করছে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনকারী সংস্থা। রাতের আঁধারেই রাস্তায় বড় বড় গর্ত খুঁড়ে নিজেদের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে একদিকে যেমন রাস্তার ক্ষতি করছে, অন্যদিকে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সড়কের উত্তর পাশে এ ধরনের কর্মযজ্ঞ চালানোর কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক একে খান থেকে জিইসি পর্যন্ত জাকির হোসেন সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। সংস্কার কাজ শুরুতে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একে খান সংলগ্ন ইস্পাহানি সী গেট এলাকা ও জিইসি মোড়ে উন্নয়ন প্রকল্পের দুটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এতে সড়ক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট তথ্য জনগণের উদ্দেশে সাঁটানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছেÑ সিটি গবর্নেস প্রজেক্টের (সিজিপি) আওতায় অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও জাইকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ২৪ নবেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সড়কের সংস্কার কাজ অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের এক প্রকৌশলী ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ফান্ডের অভাবে নগরব্যাপী সড়ক সংস্কার কাজ সম্ভব হয় না। গত বর্ষা পরবর্তীতে চসিক সড়কে খানাখন্দ সারাতে কোনরকমে সংস্কার কাজ চালিয়েছিল। কিন্তু অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে ফাইবার অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর জন্য শুরু করে আবারও রাস্তার গভীরে আরসিসি ঢালাই দিয়ে বক্স কালভার্ট তৈরি করে। তখনও সাময়িকভাবে মেরামত করা রাস্তাকে খুঁড়ে চৌচির করা হয়। আবার কর্পোরেশন নবেম্বর-ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে সড়কের মেরামত কাজ সারতে প্রায় তিন ইঞ্চি প্রলেপ দেয়ার কর্মকা- শুরু করে। বিশেষ করে নগরীর ভিআইপি সড়ক হিসেবে খ্যাত জাকির হোসেন সড়কের বেহাল দশা সারাতে সরকার ও জাইকার অর্থায়নে কাজ শুরু করে একে খান মোড় থেকে জিইসি পর্যন্ত। একে খান মোড় থেকে প্রায় ওয়্যারলেস মোড় পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছিল। কিন্তু গত মাসখানেক ধরে আবারও অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের নামে দক্ষিণ পার্শ্বের বক্স কালভার্টগুলো বাদ দিয়ে পুনরায় রাস্তার উত্তর পাশে গর্ত করে রাস্তা নষ্ট করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে এ ধরনের কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠান।
×