ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পৌর নির্বাচনের পর

চাঁপাইয়ে আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থীরা ফের জোটবদ্ধ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৩ মার্চ ২০১৬

চাঁপাইয়ে আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থীরা ফের জোটবদ্ধ

ডিএম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ঘুরে এসে ॥ বিএনপি-জামায়াত ও একাধিক জঙ্গী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন সন্ত্রাসের জনপদ সীমান্ত উপজেলা শিবগঞ্জে এবার আওয়ামী লীগে বড় ধরনের অস্থিরতা দলকে ল-ভ- করার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতা কারিবুল হক রাজিন শিবগঞ্জ পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই বিদ্রোহীকে মদদ যুুগিয়েছিল কানসাট বিদ্যুত আন্দোলনের নেতা ও শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান। এই দুই নেতার মদদে কারিবুল হক রাজিন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আদেশ নির্দেশ না মেনে ভোট করে বিজয় অর্জনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করায় জেলা আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আহ্বান করে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভা আহ্বান করেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঈনুদ্দিন ম-ল। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও শিবগঞ্জ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য সাবেক জ্বালানি ও বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এনামুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান, শিবগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা শাহাদৎ হোসেন খুররুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিগত শিবগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেয়ার অভিযোগে তাদের তিন জনকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং তা অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়। বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর পরই শিবগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান ও নির্বাচিত বিদ্রোহী কারিবুল হক রাজিন সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ফুঁসে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মঈনুদ্দিন ম-ল জানান, এর আগে পৌর নির্বাচনের প্রাক্কালে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর জেলা কমিটি তাদের সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবার কেন্দ্রের নির্দেশে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস এমপি জানান, শুধু পদ থেকে নয়, কার্যনির্বাহী কমিটি এবার তাদের সাধারণ সদস্যপদ থেকে বাদ ও বাতিলের সুপারিশ করেছে। জেলা দফতর সম্পাদক আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী, কারিবুল হক রাজিন ও এ্যাডভেকেট আতাউর রহমানকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ ব্যাপারে বহিষ্কৃৃতরা কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমপি গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে জেলা কমিটির অনেকের অভিমত বিজয়ী রাজিন বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গীদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাছাড়া শিবগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে দলে বিরোধিতা ছিল। তারা সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিতে বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে সহযোগিতা দিয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে। তাই শিবগঞ্জ বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হওয়ার পরও এবারে পৌর নির্বাচনে তারা চলে যায় তৃতীয় অবস্থানে। এমনকি অভিযোগ রয়েছে কানসাট বিদ্যুত কেন্দ্র পোড়ানোসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামিরা পৌর নির্বাচনে ভারত থেকে ফিরে এসে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। অনুরূপভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নতুন করে সমর্থন-সহযোগিতা এমনকি আর্থিক অনুদান দিয়ে ১৪ ইউনিয়নের গ্রাম-গঞ্জে মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। শিবগঞ্জের বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ রাব্বানীকে পুঁজি করে আবারও মাঠে নেমেছে ইউনিয়ন নির্বাচনে তাদের সমর্থককে মনোনয়ন দিতে। শিবগঞ্জের বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে নিজেদের ধরে রাখতে ও শক্তি সঞ্চয় করতে আবারও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনয়নে তৎপর হয়েছে। আর এই কাজে মদদ যোগাতে বিএনপি-জামায়াত মরিয়া। বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করছে শিবগঞ্জ পৌরসভার মতো ১৪ ইউনিয়নের সিংহভাগ চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ হয়ত তাদের ব্যাপারে নমনীয় হয়ে বহিষ্কারাদেশ নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করতে পারে।
×