ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের পাঁচ জেলার কৃষকের মাথায় হাত

সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমির গম ক্ষেতে ভাইরাস

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৩ মার্চ ২০১৬

সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমির গম ক্ষেতে ভাইরাস

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ ৩১ বছর পর কৃষিক্ষেত্রে আবার নেকব্লাস্ট ও হেডব্লাস্ট রোগের আর্বিভাব ঘটেছে। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমির ৫০ লাখ টন গম নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকদের মাথায় হাত। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর ৬ জেলা নিয়ে যশোর কৃষি অঞ্চল গঠিত। যশোর কৃষি অঞ্চলে এ বছর গম আবাদে জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬১ হাজার ৭শ’ ৫৩ হেক্টর। কিন্তু নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা কমে ৫৭ হাজার ৮শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়। এ পরিস্থিতিতে শুরু হয় ছত্রাকজনিত নেকব্লাস্ট ও হেডব্লাস্ট রোগ ‘পাইকিউলাইরিয়া’ ভাইরাসের আক্রমণ। পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে, যা প্রাদুর্ভাবে রূপ নেয়। ভাইরাসে যশোর কৃষি অঞ্চলের মেহেরপুরে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়। এ জেলায় ৮ হাজার ৬শ’ ৪০ হেক্টর জমির গম সম্পূর্ণভাবে ভাইরাসে নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর মোট ১৩ হাজার ৮শ’ ৭৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয় মেহেরপুর জেলায়। চুয়াডাঙ্গায় ভাইরাসে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয় এক হাজার ৭শ’ ৯৫ হেক্টর। জেলায় মোট গমের আŸাদ হয় ৫ হাজার ৮শ’ ১০ হেক্টর। ঝিনাইদহে গম নষ্ট হয়েছে ৮শ’ ৪০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৩শ’ ২০ হেক্টর। অনুরূপভাবে যশোরে ৭শ’ ৬৫ হেক্টর ও কুষ্টিয়ায় ৩শ’ হেক্টর জমির গম নষ্ট হয়ে যায়। এ দু’ জেলায় যথাক্রমে ৪ হাজার ৪০ হেক্টর এবং ১৬ হাজার ৭শ’ ১০ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়। সব মিলিয়ে ৫ জেলায় আবাদকৃত ৫৭ হাজার ৮শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে চলতি বছর গমের আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমির ভেতর ১২ হাজার ৩শ’ ৪০ হেক্টর জমির গম স¤পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে মাগুরায় ৭ হাজার ১শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হলেও ক্ষেতে কোন রোগ দেখা দেয়নি। গমক্ষেতে রোগের আক্রমণের ব্যাপারে বিভাগীয় উদ্যান বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ড. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটিকে নেকব্লাস্ট ও হেডব্লাস্ট বলা হয়। পাইকিউলাইরিয়া’ জনিতভাইরাসে এ রোগ হয়। দেশে এ ধরনের রোগ আর কখনও দেখা যায়নি। বাংলাদেশে এ রোগটি এই প্রথম। ড. সিরাজুল ইসলাম এ পরিস্থিতিকে প্রার্দুভাব আখ্যায়িত করে বলেছেন, ৩১ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে একবার গমের ক্ষেতে ‘পাইকিউলাইরিয়া’ জনিত নেকব্লাস্ট ও হেডব্লাস্ট রোগের আক্রমণ ঘটেছিল। সেদেশে এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছিল। এতে গমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে বিদেশ হতে কৃষি বৈজ্ঞানিক এসে কৃষিজোন যশোরের গমক্ষেতের আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা। যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচলক ফয়েজউদ্দিন জানিয়েছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে একটানা কিছুদিন বৃষ্টিপাত হয়। এরপর হতে এ রোগ দেখা দেয়। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, বীজ ও বায়ু বাহিত বা আবহাওয়াজনিত ’ছত্রাক’ রোগ বলা যায়। এ রোগে আক্রান্ত ক্ষেতে গম গাছ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে ক্ষেত ভাল দেখা যায় অথচ গমের ভেতরে দানা নেই। সব নষ্ট হয়ে গেছে। গমের এ অবস্থা সম্পর্কে যশোরের চৌগাছা হুধাপাড়া গ্রামের কৃষক মাইনুদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম ও ঝিকরগাছা উপজেলার সন্তোষনগর গ্রামের কৃষক শাহাজান আলী সরদার ওরফে বুদো বলেন, ভরা মৌসুমে গমে দানা বাঁধার আগেই শিলাবৃষ্টি হওয়ার কারণে গমের ক্ষেত সব নষ্ট হয়ে গেছে। গত আমনের আবাদে ধানে লোকসান হওয়ায় কৃষকদের চরম মূল্য দিতে হয়। সেখান থেকে একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য এত খরচা করে গমের আবাদ করেছিলেন তারা। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক সমস্যার মধ্যে পড়ে গমের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বারবার কৃষি আবাদে লোকসান খেয়ে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় মাথায় হাত উঠেছে বলে ওই কৃষকরা জানিয়েছেন।
×