ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একই মঞ্চে দুই বাংলার শিল্পীদের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৩ মার্চ ২০১৬

একই মঞ্চে দুই বাংলার শিল্পীদের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান

গৌতম পাণ্ডে ॥ বসন্তের মেঘবিহীন নির্মল আকাশ। রাতে অগুনিত তাঁরার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বাঁকা চাঁদ। শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চ দর্শকের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভর্তি। লাল-নীল আলোয় পুরো পরিবেশটায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। রবীন্দ্রপ্রেমীদের জন্য মুহূর্তটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য তাঁর গান পরিবেশনের আগে বলেই ফেললেন, বহুবার গান গাইতে বাংলাদেশে এসেছি। মনে মনে এমন একটি পরিবেশের আশা করেছি, আজ তা পেলাম। কারণ আমরা যারা গান করি, সব সময় যার দিকে তাকিয়ে থাকি তা হলো পরিবেশ। এখন বর্ষাকাল নয়, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে বর্ষা একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মনে চাইছে এই মহেন্দ্রক্ষণে বর্ষার একটি গান গাইতে। তিনি গেয়ে উঠলেন ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’। শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংসদ। উৎসবে ছিল দুই বাংলার রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনা। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের অধিবেশন। পরে রবীন্দ্রনাথের ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ ও ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ গান দুটি সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করে সংসদের শিল্পীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা। ড. ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের জেসমিন জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংসদের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম হোসেন চৌধুরী। আলোচনার পর শুরু হয় একক গান পরিবেশনা। শুরুতে ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে’ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী আদ্রিতা আনোয়ার। এরপর একে একে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আরিফুর রহমান তিমুন (দুজনে দেখা হলো যামিনীরে), বায়তুন নাহার পলি (ঝড়ে যায় উড়ে যায় গো), সৈয়দ মোহাম্মদ মুসা (চলে যায় মরি হায়), বর্ণালী বিশ্বাস (আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে), মেজবাহুল আজম মঞ্জু (চৈত্র পবনে মম চিত্ত বনে) ও ড. ফরহাদ হোসেন (সেইতো আমি চাই)। পরে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ থেকে আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ। এরপর ভারতের শিল্পী মধুরিমা দত্ত একে একে চারটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। তার পরিবেশিত গান হলো- কি যে তোমার প্রেম ওগো হৃদয় হরণ, আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, পূর্ণ চাঁদের মায়া ও আমার চাঁদের আলো। পুনরায় আবার বাংলাদেশের শিল্পীরা একক গান পরিবেশন করে। একে একে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রানা কুমার সিন্হা (তোমার খোলা হাওয়া), জয়িতা (কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি), মুজিবুল কাইয়ুম (যেওনা যেওনা ফিরে) ও আকলিমা খাতুন ইরা (এখনও তারে চোখে দেখিনি)। এরপর মঞ্চে আসেন ভারতের শিল্পী প্রবুদ্ধ রাহা। তার পরিবেশিত গান হচ্ছে- যেতে যেতে একলা পথে, আমার পরাণ যাহা চায়, না চাহিলে যারে পাওয়া যায় ও এই কথাটি মনে রেখ। পরে বাংলাদেশের শিল্পীরা একক পরিবেশনা শুরু করেন। শিল্পীরা হলেন নুসরাত বিনতে নূর (বিপুল তরঙ্গরে), মাহবুবুর রহমান মঞ্জু (এই কথাটি মনে রেখ), মিতা সুপর্ণা (এ পরবাসে রবে কে), ফাহিম হোসেন চৌধুরী (আর কত দূরে আছে সে) ও বদরুন্নেসা ডালিয়া (একটুকু ছোঁয়া লাগে)। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের শেষ শিল্পী ছিলেন ভারতের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। তিনি রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ দিয়ে তার পরিবেশনা শুরু করেন। শ্রোতারা তালি দিয়ে শিল্পীকে অভিনন্দন জানান। এরপর তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘এত দিন যে বসে ছিলেম পথ চেয়ে আর কালগুনে’, ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’, ‘তোমায় গান শোনাবো’ ও ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। অনুষ্ঠানের সমাপনী আয়োজন শনিবার সন্ধ্যায়ও দুই বাংলার শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত।
×