ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে মূকাভিনয় উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৩ মার্চ ২০১৬

ঢাবিতে মূকাভিনয় উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর প্রাচীন ও অন্যতম শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম মূকাভিনয়। সংস্কৃতির অন্যতম মৌলিক এই উপাদানের বিশ্বব্যাপী রয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশে এর চর্চার ব্যাপ্তি প্রত্যাশিত না হলেও সাম্প্রতিককালে এর কদর বেড়েছে। নাট্য চর্চার পাশাপাশি অনেকেই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ শিল্পের চর্চা করে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। প্রকৃত শিল্পরূপের পরিচয় তুলে ধরতে স্ব উদ্যোগে এর কাঠামো দানের চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে সংস্কৃমনাসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি, নতুন নতুন মূকাভিনেতা অনুসন্ধান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মূকাভিনয় শিল্প মাধ্যমটিকে আরও বৃহত্তর পরিসরে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সর্বোপরি মূকাভিনয়কে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং এর মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের বার্তা দেয়ার লক্ষ্যে রেখে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম এ্যাকশন কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘না বলা কথাগুলো না বলেই হোক বলা’- সেøাগানে টিএসসিতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে ‘জাতীয় মূকাভিনয় উৎসব-২০১৬’। আজ রবিবার থেকে শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এ উৎসব চলবে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত । আয়োজক সূত্রে জানা গেছে আজ বিকেল ৫টায় জাতীয় এই উৎসবের সভাপতিত্ব করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম এ্যাকশনের মডারেটর ফাদার তপন ডি রোজারিও, বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশনের সভাপতি জাহিদ রিপন প্রমুখ। এ ছাড়া তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। আগামী ১৫ মার্চ উৎসবের শেষ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। রাত ৯টায় সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে তিন দিনের উৎসব সমাপ্ত হবে। বর্ণাঢ্য এই উৎসবে অংশ নেবে ঢাকার স্বপ্নদল, মাইম আর্ট, বেঙ্গল থিয়েটার, জেন্টলম্যান প্যান্টোমাইম, পরিবর্তন মাইম একাডেমি, বাংলাদেশ হুদামাইম ক্লাব, চট্টগ্রামের প্যান্টোমাইম মুভমেন্ট, অনাদিকল্প, গাজীপুরের মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙন মাইম একাডেমি, নারায়ণগঞ্জের শ্রুতি কালচারাল সেন্টার, বাংলাদেশ মাইম থিয়েটারসহ দেশের ১৫টি মূকাভিনয় দল। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি মূল ভেন্যু ছাড়াও শহীদ মিনার, কার্জন হল, কলাভবন, শাহবাগসহ ক্যাম্পাসজুড়েই থাকবে স্ট্রিট শোসহ নানা কর্মসূচী। একই সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মূকাভিনয়ের ওপর কর্মশালা-সেমিনার এবং পোস্টার প্রদর্শনী। প্রসঙ্গত, শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য এবং রাজনীতি চর্চার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মূলধারার শিক্ষার পাশাপাশি প্রাচ্যের এই অক্সফোর্ড সহশিক্ষা কার্যক্রমে অভূতপূর্ব সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছে। সংস্কৃতির অন্যান্য শাখার পাশাপাশি সম্প্রতি এই ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে মূকাভিনয় চর্চার এক বৃহত্তর প্লাটফর্ম। ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর লোকমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম এ্যাকশন’-মূকাভিনয় সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিক সাফল্য অক্ষুণœ রেখে সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটভুক্ত সংগঠনের স্বীকৃতি লাভ করে। দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, স্কুল-কলেজ এবং জেলা-উপজেলায় ২৫০টিরও বেশি প্রদর্শনী এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে মূকাভিনয়কে অধিক পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
×