ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মস্কোয় চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার বিরোধিতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৩ মার্চ ২০১৬

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার বিরোধিতা

চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বসানোর পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। মস্কো সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং ই শুক্রবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ চীন ও রাশিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থ ক্ষুণœ করবে এবং আঞ্চলিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উস্কে দেবে। খবর ভয়েস অব আমেরিকা ও এবিসি অনলাইনের। উত্তর কোরিয়া পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দেয়ার পটভূমিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়া সফর করেন। শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন ইয়াং ই। পুরো কোরিয়া উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্র বিমুক্ত করার বিষয়ে চীনের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে ইয়াং ই বলেন, চীন কখনই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়া মেনে নেবে না। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি এ কথাও বলেন যে, পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী নিয়ে ছয় জাতি আলোচনা পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ থেকে বেজিং সরে যাবে না। উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তিনি এ কথাও বলেন যে, প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার জনগণ যেন দুর্ভোগের শিকার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চীন ও রাশিয়া দুই দেশই কোরিয়া উপদ্বীপে বেড়ে চলা উত্তেজনা প্রশমনে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী কেন্দ্র করে দক্ষিণ কোরিয়ায় টিএইচএএডি (টার্মিনাল হাই অলটিচুড এরিয়া ডিফেন্স) ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে চীন ও রাশিয়া। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ চীন ও রাশিয়ার নিরাপত্তা ক্ষুণœ করাসহ আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য নষ্ট এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ওয়াশিংটন দক্ষিণ কোরিয়ায় টিএইচএএডি বসানোর চিন্তাভাবনা করছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন। লাভরভ বলেন, রাশিয়া ও চীন উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীর যেমন বিরোধিতা করে তেমনি এ কর্মসূচীর অজুহাত আঞ্চলিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির যে কোন চেষ্টারও তারা বিরোধী। পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী ছেড়ে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মতো ছয় জাতি আলোচনায় ফিরে আসবে বলে চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আশা প্রকাশ করেন। কোন কোন বিশ্লেষক মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং যেভাবে সব আন্তর্জাতিক অনুরোধ উপেক্ষা করে অসহযোগিতামূলক মনোভাব দেখাচ্ছেন, তা বেজিং ও মস্কোকে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের গবেষক দিমিত্রি স্ত্রেলতসভ বলছেন, ‘কোরিয়া উপদ্বীপ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। এখানে যেকোন ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি শুধু চীন ও রাশিয়াকেই নয় বরং সংশ্লিষ্ট সব দেশকে প্রভাবিত করে থাকে।’ তিনি মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতির আশু উন্নতির যেহেতু কোন সম্ভাবনা নেই, তাই দুই দেশ নিজেদের সম্পর্ক জোরদার করে রাখছে যেন ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যৌথভাবে পদক্ষেপ নেয়া যায়। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা যে বাড়ছে সেটি রাশিয়ান হায়ার স্কুল অব ইকোনমিক্স রিসার্চ ইউনিভার্সিটির ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের গবেষক এ্যালেক্সি ম্যাসলভও মনে করেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন চীন উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও সম্প্রতি দেশ দুটোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। চীন উত্তর কোরিয়াকে আগের মতো পরমাণু প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে না। অন্যদিকে দেশটির ওপর আরোপিত জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলোকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে বেজিং।
×