ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা!

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১৩ মার্চ ২০১৬

ডিজিটাল নিরাপত্তা!

প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাড়ছে দিন দিন। একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে মানুষের নিত্যদিনের প্রযুক্তির ব্যবহার। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপব্যবহারের মাত্রা। আরও বাড়ছে সাইবার আক্রমণের পরিমাণও। বর্তমান বিশ্বের প্রতিদিনই কোন না কোন প্রতিষ্ঠান সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সাইবার অপরাধীদের মূল লক্ষ্য থাকে মূলত অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়া। বর্তমান সময়ে বিশ্বে যত আর্থিক লেনদেন হয়, তার একটি বড় অংশই হয়ে থাকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। একটি দেশের মধ্যে কিংবা আন্তঃদেশীয় লেনদেন, এসবই হয়ে থাকে অনলাইনে। ব্যাংকিং খাতে সাইবার প্রযুক্তি চালু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই অনেক অঘটন ঘটছে। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাধারণ ব্যবহারকারীরাও সাইবার আক্রমণের শিকার হয়ে থাকে। উন্নত দেশগুলো জালিয়াতি বা হ্যাকিং ঠেকানোর জন্য অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সারাবিশ্বেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয় বলেই সম্প্রতি দেশটি এমন ঘটনার শিকার হয়েছে। সিস্টেম নিজেদের দখলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৮ কোটি ডলার। আবার বিদেশীদের যোগসাজশে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিও হচ্ছে। গ্রাহকদের হিসেবে থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতচক্র। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের হাল-হকিকত এমন দাঁড়িয়েছে যে, ভুয়া ঋণ বা অবৈধ ঋণের বেশ কিছু ঘটনা রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বছর দুই আগেও সোনালী ব্যাংকের বিদেশী শাখার মাধ্যমে প্রায় আড়াই লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এযে দেশ এটিমএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে দেশী-বিদেশী প্রতারকচক্র দেশের অভ্যন্তর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।এসবের কোন সুরাহা না হওয়ায় ব্যাংকিং খাতের ওপর জনগণের আস্থা ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে। ব্যাংকের লোকজন ও যে এসবের সঙ্গে জড়িত, তা ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। দেশে ব্যাংকিং খাতে একটার পর একটা গুরুতর অপরাধ ঘটেই যাচ্ছে অথচ নির্বিকার কর্তারা। তথ্যপ্রযুক্তির অস্বাভাবিক উন্নতি সত্ত্বেও দেশের এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার উপযুক্ত ও কার্যকর সক্ষমতা যে তৈরি হয়নি-তা স্পষ্ট। আর দু’বছর পর বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। তাতে আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে আতঙ্কিত হতে হয়। কৃৎকৌশলগত ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, এই উভয় ক্ষেত্রেই দেশ আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। হল মার্ক থেকে শুরু করে বেসিক ব্যাংকসহ এ পর্যন্ত যতগুলো আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, সেসব ক্ষেত্রে মুখ রক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়া আর কোন সুরাহা না হওয়ায় অর্থ হাতানোর ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হয়েছে বলা যায়। যে কারণে এটিএম বুথ কেলেঙ্কারি হচ্ছে। ব্যাংকের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সবের সঙ্গে জড়িত থাকায় তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তার মাধ্যমে গ্রাহকের নিরাপত্তার ক্ষেত্রটি সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ রিজার্ভ কেলেঙ্কারির ঘটনা সবচেয়ে বড় এবং নজিরবিহীন বলা যায়। বাস্তব যে, আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের কোন বিকল্প এখনও দাঁড়ায়নি। বাংলাদেশের জনগণের অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে পাচার হয়ে ফিলিপিন্সের জুয়ার আসরে ঘুরছে- এমন ঘটনা যে কাউকে ক্ষুব্ধ, আহত এবং ক্ষোভ তৈরি করবেই। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রিজার্ভের এই কেলেঙ্কারির সামগ্রিক চাপ যে দেশের অর্থনীতির ওপরই পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আহার সঙ্কট আরও তীব্রতর হওয়ার আগে এসবের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। সর্ষের মধ্যে থাকা ভূতগুলো তাড়ানো না গেলে এর ভার বহন দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে। যা কারও কাম্য নয়।
×