ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এখন অপেক্ষা শেষ ম্যাচের

ম্যাচ পরিত্যক্ত, ১ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ১২ মার্চ ২০১৬

ম্যাচ পরিত্যক্ত, ১ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার তামিম ইকবাল ব্যাটিংঝড় তুললেন। বুধবার তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে হল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশ। শুক্রবার ১২ ওভারের ম্যাচে তামিমের ৪৭ রানের ধুমধারাক্কা ব্যাটিংয়ে আয়ারল্যান্ড তো উড়েই যাওয়ার কথা! কিন্তু ম্যাচটি বৃষ্টির তোপে পড়ে আর হলোই না। ক্রিকেটটা বাংলাদেশ এত ভাল খেলছে যে বিশ্বের যে কোন স্থানেই বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার লোকের অভাব নেই। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দল না হওয়া মানেই বাংলাদেশের সমর্থন নিশ্চিত। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। সেখানে তো সেই সংখ্যাটা অনেক বেশি। কিন্তু ধর্মশালায় যেখানে ক্রিকেট নিয়ে এত মাতামাতি নেই সেখানেও গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব উঠেছে। বাংলাদেশ থেকে আসা সমর্থকরা তো আছেনই, এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শকও বাংলাদেশকেই সমর্থন দিয়েছেন। সেই সমর্থনের মান বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও রেখেছেন। হল্যান্ডকে প্রথম ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে যেভাবে এগিয়ে চলেছিল বাংলাদেশের ইনিংস, তাতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও জয় তুলে নেয়া নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু তা হলো না। তবে ‘সুপার টেনে’ খেলার সম্ভাবনা অনেক জোড়ালো করে ফেলেছে মাশরাফিবাহিনী। এখন একটাই শুধু কাজ বাকি। কোনভাবেই বাংলাদেশের সমান ৩ পয়েন্ট থাকা ওমানের সঙ্গে হারা যাবে না। হয় টাই কর। নয়ত জিতো। তাহলেই কেবল বাছাইপর্ব উতরে ‘সুপার টেনে’ খেলা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। হারলেই বিদায় ঘটবে। যে সম্ভাবনা কোনভাবেই নেই বললেই চলে। হল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে বেগ পেতে হয়েছে। সেটি এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেই ধর্মশালার বিমান ধরে মাত্র একদিন অনুশীলন করে খেলতে নামতে হয়েছে বলে। কিন্তু চারদিন ধর্মশালায় থাকার পর পরিবেশ, পরিস্থিতি, কন্ডিশন ও উইকেটের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেই তা বোঝা গেছে। একদম উড়িয়ে দিচ্ছিল আইরিশদের। তার মানে ধীরে ধীরে টি২০ বিশ্বকাপেও সাফল্য খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই সাফল্যে যে আত্মবিশ্বাস মিলছে, তাতে যে দল সামনে আসবে; তাদেরই উড়িয়ে দেবে। ওমান তো এবার প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপে খেলছে। ঠিক আছে দলটি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে। কিন্তু দলটি বাংলাদেশের সামনে দুর্বলই! সারাদিন ধর্মশালায় যেভাবে বৃষ্টি পড়েছে, তাতে মনে হয়েছে খেলা কোনভাবেই হওয়া সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত খেলা হয়। বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় যেখানে খেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল সেখানে সোয়া ৯ টায় খেলা শুরু হয়। সোয়া এক ঘণ্টা পর যখন খেলা শুরু হয় সময়ের অভাবে তো জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়নি! সময়ের অভাব এতই পড়ে গিয়েছিল। ম্যাচটি যে যথাসময়ে শেষ করতে হবে। তাই তো ১২ ওভার করে খেলা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আয়ারল্যান্ড টসে জিতে। মনে করেছিল, আগে ফিল্ডিং নিলে বোলিংয়ে সুবিধা মিলবে। তাই ফিল্ডিং নেয়। তাতে কোন কাজই হয়নি। তামিম এমন ঝড়ো ব্যাটিংই শুরু করেন যে আইরিশ বোলাররা এলোমেলো বল করতে শুরু করে দেন। ওভার কম। যা করার দ্রুতই করতে হবে। বুঝে ওঠার সময় নেই। শুরু থেকেই মারমুখি হয়ে খেলতে হবে। সে কাজটিই তামিম ও সৌম্য সরকার করেন। প্রথম ওভার থেকেই বাউন্ডারি হাঁকাতে চান তামিম ও সৌম্য। তা করতে গেলে দ্রুত আউট হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। সৌম্যের বেলাতে তাই হয়েছে। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ডিপ মিডউইকেটে আউট হওয়ার হাত থেকে বাঁচেন সৌম্য। সৌম্য ১০ রানের সময় আবারও ‘নতুন জীবন’ পান। তামিম সেই সুযোগই দেননি। বল যে সব গ্যালারিতে পাঠাতে থাকেন! দ্বিতীয় ওভারে র‌্যাংকিংয়ের পরপর দুটি বলে ছক্কা-চার হাঁকান। পরের ওভারে মুরতাগের টানা দুই বলেও ‘ছক্কা-চার’ হাঁকান। তামিমের এমন ব্যাটিং দেখে ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন আইরিশ বোলাররা। যে সুবিধাটি নেন সৌম্যও। চতুর্থ ওভারে তিনটি চার হাঁকান। এরপর তামিম, চার মারতেই থাকেন। সৌম্য একটু বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ২০ রানেই আউট হয়ে যান। কিন্তু তামিমঝড় এরপরও চলতে থাকে। সাব্বির রহমান এসেও ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত মুহূর্তেই তামিম ২৬ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে ৪৭ রান করে আউট হন। তখন সাব্বিরের স্কোরবোর্ডে ১৩ রান জমা হয়। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ততক্ষণে ৮ ওভারেই ৯৪ রান যোগ হয়ে যায়। আবার বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি আর না থামায় ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ১ পয়েন্ট পায়। আয়ারল্যান্ড বাদ হয়ে যায়। এখন ওমানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ টাই করলেও হয়ে যাবে। রানরেটে যে বাংলাদেশ এগিয়েই রয়েছে। এখন সেই ম্যাচেরই অপেক্ষা। ইতিবাচক কিছুর জন্যই রবিবার ওমানের বিরুদ্ধে নামবে বাংলাদেশ দল।
×