ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১২ মার্চ ২০১৬

নতুন আবিষ্কার

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা-জলোচ্ছ্বাসেও নৌযান ডুববে না। নিয়ন্ত্রণ হারাবে না বাতাস তুফানে। মহা প্রলয়ের ঘটনা ঘটলেও সম্পূর্ণ ডুবে যাবে না নৌযান। ডুবোচরে আটকে গেলেও উদ্ধারকারী জাহাজের সাহায্য ছাড়াই স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। শুধু নৌ-দুর্ঘটনাই নয়, বহুতল ভবনে অগ্নিকা-ে তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি শূন্যের কোঠায় নামানোর কৌশল আবিষ্কারের দাবি করেছেন পটুয়াখালীর বেল্লাল হোসেন মিন্টু। বিস্ময়কয় প্রতিভাবান যুবক বেল্লাল হোসেন মিন্টু! পৌর শহরের কাঠপট্টি এলাকায় বসবাস। বহু আগে বাবা মারা যাওয়ায় এসএসসি পাসের পর আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেয়ার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি তার। হাল ধরতে হয়েছে সংসারের। আর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে নেমে যান ছোটখাটো ব্যবসার কাজে। এ কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সময় নৌ-দুর্ঘটনা আর বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিসংযোগে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ভাবিয়ে তোলে মিন্টুকে। এরপর সবার অলক্ষে, নীরবে নিভৃতে তিন বছর গবেষণা চালান নৌ-দুর্ঘটনা ও অগ্নিকা- রোধে। তিন বছর পর সফলভাবে আবিষ্কার করেন লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধ করার উপায়। শুধু তাই নয়, অগ্নিকা- ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণের উপায়ও বের করেন। যার ফলে প্রাণহানি রোধ হবে। সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুরক্ষা তৈরি করা যাবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মিন্টু জানান, একটি নৌযান কিংবা যাত্রীবাহী লঞ্চ যখন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পড়ে তখন সেটি বাতাস আর পানির উত্তাল পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে না। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পরে। তখন ব্যাপক প্রাণহানিসহ সম্পদহানির ঘটনা ঘটে। অনেক সময় ওই বাহনটি খুঁজেও পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের জন্য হাইড্রোলিক ওয়াটার কাট এবং হাইড্রোলিক ওয়েট ফরমুলা দুর্ঘটনা থেকে নৌযানকে রক্ষা করবে। এ কারণে ঝড়ের কবলে পড়া নৌযানটি দুলবেও না। পড়বে না কাত হয়ে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নৌযানটি চলে যাবে নিজ গন্তব্যে। এছাড়া যদি কখনও নদীতে মহাপ্রলয় দেখা দেয় তাহলে নৌযান যদি হেলেও পড়ে তাহলে নৌযানটির অর্ধেক পরিমাণ পানির নিচে থাকবে। বাকি অর্ধেক ওপরে ভাসমান থাকবে। এ পরিস্থিতিতে নৌযানটিকে ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করবে অটো এয়ার পাস পদ্ধতি। সম্পূর্ণ ডুবে না যাওয়ার কারণে অধিকসংখ্যক প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌযানটির অবস্থান নিশ্চিত করে জানা যাবে। আর এ পদ্ধতির মাধ্যমে লঞ্চ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে। প্রায়ই নৌপথে যাত্রীবাহী কিংবা মালবাহী নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে ঘনকুয়াশা কিংবা যত্রতত্র ডুবচরের কারণে চরে আটকে যায়। কখনও কখনও দিনের পর দিন আটকে থাকে ডুবচরে। তখন অন্য নৌযান কিংবা উদ্ধারকারী জাহাজের সহায়তা নিতে হয় আটকে পড়া অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে। মিন্টুর দাবি আবিষ্কৃত হাইড্রোলিক এবং ওয়াটার শক্তি ব্যবহার করে মাত্র এক থেকে দুই ঘণ্টা ব্যবধানে নৌযানটি নিজের শক্তিতে ডুবচর থেকে মুক্ত হতে পারবে। ফলে খুব সহজেই পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ডাবল ডেকার লঞ্চে মিন্টুর এ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। মিন্টু আরও জানান, বিশাল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে পরিচালিত বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা সর্বোপরি পোশাকশিল্পে প্রায়ই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক প্রাণহানিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। মিন্টুর আবিষ্কৃত পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলেও তা মুহূর্তেই নিভে যাবে। সম্প্রতি বছরগুলোতে পোশাকশিল্প কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় ব্যথিত হন মিন্টু। ভাবেন ওই দুর্যোগ থেকে উত্তোরণের বিষয় নিয়ে। এরপর ঢাকার কয়েকটি পোশাকশিল্প কারখানা পরিদর্শন করেন এবং তাতে আগুন নিভানোর সর্বশেষ প্রযুক্তি দেখে হতাশ হন। দীর্ঘদিন গবেষণা করে ওই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বের করেছেন। এর নাম দিয়েছেন ‘ডেঞ্জার ফ্রি সেইভ ইন্ডাস্ট্রিজ।’ আট ফ্লোর বিশিষ্ট কারখানায় মিন্টুর আবিষ্কৃত ‘ডেঞ্জার ফ্রি সেইভ ইন্ডাস্ট্রিজ’ এ প্রকল্পটি চালু করতে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এসব গবেষণার জন্য আর্থিক অনটনের কারণে যখন বেল্লাল হোসেন মিন্টু হাল ছেড়ে দিয়েছিল তখন গবেষণার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন কাছের তিন ব্যক্তি। এরা হলেনÑ কাজী জাকির হোসেন, মাসন কান্তি দত্ত এবং মোঃ জুয়েল। মোঃ বেল্লাল হোসেন মিন্টু বলেন, ‘সরকারীভাবে গবেষণার জন্য সুযোগ-সুবিধা পেলে দেশের জন্য আরও কিছু করতে চাই। অর্থনৈতিক সমস্যা না থাকলে আরও অনেক সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারতাম। বর্তমানে আরও একটি গবেষণা চলছে। গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত একটি গাছের ফল দিয়ে ইঞ্জিন ওয়েল (মবিল) উৎপাদন করা সম্ভব। আমি পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করে মোটরসাইকেল চালিয়েছি। সরকার বা কোন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সাহায্য করলে সাশ্রয়ী মূল্যে মবিল উৎপাদন করে দেশে বাজারজাতসহ বিদেশে রফতানি করা সম্ভব।’ এছাড়া ‘হাই স্প্রে কুলিং রোটেশন’, ‘সেইভ মানি আইস প্লান্ট’, ‘হাই ভাইব্রেশন বিগ ফ্যাক্টর’, ‘হাই প্রেসার সিরিয়াস ডেঞ্জারাস’ নামের ৭টি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। মোখলেছুর রহমান
×