ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নেতৃত্ব সঙ্কটে বরিশাল মহানগর আ’লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ মার্চ ২০১৬

নেতৃত্ব সঙ্কটে বরিশাল মহানগর আ’লীগ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সঙ্কট কাটেনি গত তিন বছরেও। উল্টো নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের কোন্দল ক্রমেই সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজপথ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ নিয়ে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সূত্রমতে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র ও সদর আসনের সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পরই দলের নেতৃত্ব দখল নিয়ে কোন্দল দেখা দেয়। হিরণ জীবিত থাকা অবস্থায় দলের অভ্যন্তরে যে ঠা-া লড়াই চলছিল তা ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে রাজপথে গড়াতে শুরু করেছে। প্রয়াত হিরণের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ স্বামীর আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মহানগর সভাপতির পদটি পেতে লবিং করছেন। তার পক্ষে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করিমসহ হিরণ অনুগত নেতাকর্মীরা। সভাপতি হিসাবে জেবুন্নেছা আফরোজকে মেনে নিলেও সাধারণ সম্পাদক পদটি পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লবিং করছেন সাবেক চীফ হুইপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। হিরণ সমর্থকদের সঙ্গে কোন্দল সাদিক আব্দুল্লাহকে ঘিরেই। মহানগর আ’লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরাও সাদিক আব্দুল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পেতে চায়। এর বাইরে হিরণ ঘরোনার কয়েকজন নেতাও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য মাঠে রয়েছেন। তার মধ্যে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক সাবেক কমিশনার নিজামুল ইসলাম নিজাম রয়েছেন তালিকায়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন কেন্দ্রের কাছে লবিং-তদবির করেও কোন সিদ্ধান্ত পাননি বিবদমান নেতারা। ফলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল গড়িয়েছে রাজপথে। হামলা, সংঘর্ষ, বোমাবাজি ও গুলিবষর্ণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। মূল দলের কোন্দলের জের ধরে সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বিএম কলেজ ও শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কোন্দলের জের ধরে সম্প্রতি একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম ও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান উভয় হামলার ঘটনায় নিজ দলের একটি গ্রুপকে দায়ী করে বলেন, যাদের দলে কোন পদ-পদবি নেই তারা গায়ের জোরে রাজনীতি করার জন্য এ হামলা চালাচ্ছে। অপরদিকে অসীম দেওয়ানের বাসায় হামলার ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহম্মেদ মুন্না, আহম্মেদ শাহরিয়ার হৃদয় ও সুজন বিশ্বাসসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ১২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। অসীমের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মহানগর তৃণমূল ছাত্রলীগের ব্যানারে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনের সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, মিথ্যে নাটক সাজিয়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে জেলা শাখায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসকে সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর শাখায় শওকত হোসেন হিরণকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট আফজালুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। উভয় কমিটি দুই সদস্য বিশিষ্ট থেকে দীর্ঘ সময় পার করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। চার নেতার মধ্যে শওকত হোসেন হিরণ ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। ফলে গত তিন বছর থেকে মহানগর কমিটি এক সদস্য বিশিষ্ট হয়ে পড়ে। জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলেও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই সুশৃঙ্খল রেখেছেন। যার একেবারেই উল্টো দৃশ্য মহানগর জুড়ে বিরাজ করছে। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিশস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করিমকে স্বপদে বহাল রেখে কমিটির নতুন চমক হিসেবে জাহিদ ফারুক শামীম সভাপতি হিসেবে আসতে পারেন। ইতোমধ্যে দলের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাহিদ ফারুক শামীমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও সূত্রটি উল্লেখ করেন।
×