ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রী ও গবর্নরের পদত্যাগ দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১২ মার্চ ২০১৬

অর্থমন্ত্রী ও গবর্নরের পদত্যাগ দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে অর্থ লোপাটের দায়ে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে বিচারেরও দাবি জানিয়েছেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী মহল ও সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে রাবিশে পরিণত করার জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর দায়ী। ৮০০ কোটি টাকা হ্যাক হয়ে যাওয়ার পরও তারা এখনও দায়িত্ব পালন করছেন কোন নৈতিক অধিকারে। আমরা অবিলম্বে অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের পদত্যাগ দাবি করছি। রিজভী বলেন, আমি বিএনপির পক্ষ থেকে অর্থ জালিয়াতির বিভিন্ন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, ভয়াবহ এক অবরোধের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ দেশে গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতার অভাব। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে চলছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’-এর মতো অরাজক পরিস্থিতি। সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে ঐক্যবদ্ধভাবে লুটপাটের অর্থনীতি মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে বিএনপি বিশ্বাস করে। রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে এ পর্যন্ত সরকার দশ কোটি দশ লাখ মার্কিন ডলার লোপাট বা চুরি হয়ে গেছে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ন্যক্কারজনক জালিয়াতির ঘটনা এটি। এই টাকা চুরিতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রভাবশালী মহল ও সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত বলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা এখন উড়ছে ফিলিপিন্সের জুয়ার আসরে। রুহুল কবির রিজভী বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের দশ কোটি দশ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবিÑ হ্যাক করে এই অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেনÑ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের বিশাল অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে থেকে অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যাক করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলছে, তাদের এখান থেকে হ্যাকিং হয়েছে এর কোন প্রমাণ নেই। তারা এর দায় পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের ওপরই চাপিয়েছে। কয়েক মাস পূর্বে দেশের আর্থিক খাতে এতবড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার খবর পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। অথচ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে লুকোচুরি শুরু করে। পরে ঘটনার সত্যতা এবং পত্রপত্রিকার আলোচনা-সমালোচনায় তারা বিষয়টি স্বীকার করে নড়েচড়ে বসেন। রিজভী বলেন, জালিয়াতির এতবড় ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের প্রভাবশালী মহল ও ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্বীকারও করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা গত তিন বছরে সরকারী কাজের বাইরে ঠুনকো অজুহাতে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, হংকং, মালেশিয়া, ফিলিপিন্স, শ্রীলংকা ও দুবাই ভ্রমণ করেছেন তাদের পাসপোর্ট যাচাই করে অনুসন্ধান করলেই এ আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের রাঘব বোয়ালদের সংশ্রব বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে কয়েকজন রাঘব বোয়াল পর্যায়ের কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দ করা হলেও এত বিশাল পরিমাণ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কীনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আমাদের দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ। রিজভী বলেন, এর আগে ইবিএল ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লোপাট হয়েছে। সরকার লোক দেখানো তদন্ত ও কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণেই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বশেষ বিশাল অঙ্কের অর্থ লোপাটের ঘটনায় দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক ধস নামবে । রিজভী বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে কার্গো বিমানে মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এর ফলে দেশের গার্মেন্টস শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। কারণ ৬০শতাংশের বেশি পণ্য রফতানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী দেশ যুক্তরাজ্য। স্বাভাবিক কারণেই যুক্তরাজ্যে পণ্য পরিবহনের নিষেধাজ্ঞায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রফতানিকারক তথা ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে রফতানিতে অশনি সংকেত দেখা দিবে। আর দেশ বঞ্চিত হবে গার্মেন্টস খাত থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে। রিজভী বলেন, সমস্ত ব্যাংক আজ ফোকলা হয়ে পড়েছে। এসব জালজোচ্চরির ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ী সমাজ আজ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছে না। দেশে আজ ৭৪-এর অবস্থা বিরাজ করছে। সেসময় যেভাবে ব্যাংক লুট ও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটত তা এখনও অহরহ ঘটছে। বর্তমানে দেশের আর্থিক খাত ভেঙ্গে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ ধ্বংস হতে আর সময় লাগবে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি প্রমুখ। এখন বিদেশে টাকা রাখলেও লুট হচ্ছে- নজরুল ॥ এখন বিদেশে টাকা রাখলেও তা লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ফটোজার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে লেবার পার্টি ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পৌর-নির্বাচন ও মেয়র নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের ব্যাংকে টাকা রাখলে সে টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। শেয়ার বাজার লুট হযে যাচ্ছে। এমনকি বিদেশে টাকা রাখলে সেটা পর্যন্ত থাকছে না। জনগণের কাছে সরকার দায়বদ্ধ না থাকার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার নোংরাভাবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। আগে দেখা যেত নির্বাচনের দিন জনগণের ভোটে ব্যালট বাক্স পূর্ণ হতো। কিন্তু এখন এ সরকারের আমলে ভোটের আগের দিন রাতে পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে সরকার ও প্রশাসন মিলে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দিচ্ছে না। নির্বাচনে বহু জায়গায় কোন প্রার্থী নেই- এটা দেশের মানুষ মানবে না। কারণ এদেশের মানুষ ভোট দিতে ভালবাসে। নজরুল বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন জনসম্পৃক্ত হওয়ায় আগামী দিনে তা অবশ্যই সফল হবে। তিনি বলেন, আজ আমাদের মা-বোনরা নিরাপদ নয়, সন্তানরা নিরাপদ নয়, আমার দেশের সম্পদও নিরাপদ নয়। এ যে বাস্তবতা এর পরিবর্তন দরকার। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শামসুর উদ্দিন পারভেজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, দলের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ খান প্রমুখ। আন্দোলনে নিস্ক্রিয়রা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবে না- গয়েশ্বর ॥ বিএনপির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে দলের নিস্ক্রিয় নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন না বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শুক্রবার সকালে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। সরকার ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে- মাহবুব ॥ সরকার ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। শুক্রবার দুপুরে তারেক রহমানের কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টন ভাসানী মিলনায়তনে জাসাস আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। খন্দকার মাহবুব বলেন, দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে জান মালের কোন নিরাপত্তা নেই। এমনকি দেশে আজ শিশুরাও নিরাপদ নয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। দুই মন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে- শাহ মোয়াজ্জেম ॥ প্রধান বিচারপতিকে কটূক্তি করায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী নাগরিক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন।
×