ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি নির্বাচন ঘিরে;###;দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা

তৃণমূলে বিদ্রোহ দমাতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১২ মার্চ ২০১৬

তৃণমূলে বিদ্রোহ দমাতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কঠোর হয়েও তৃণমূলে সৃষ্ট বিদ্রোহ দমাতে পারছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। স্থানীয় সরকারের বড় এ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। প্রথমে সমঝোতা পরে হুঁশিয়ারি এবং সর্বশেষ দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরাতে পারছে না দলটি। বরং বহুধা বিভক্ত হয়ে তৃণমূলে দলটির নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় অনেকস্থানেই তা ভয়াবহ সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলে দলটির লাগামহীন কোন্দল সামাল দিতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কাও ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে। প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের আড়াই শতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ইতোমধ্যে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বহিষ্কার করলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বাগে আনতে পারছে না দলটি। বরং স্বতন্ত্র হিসেবে নৌকার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো শুরু হলেও সেদিকে যেন কোন ভ্রুক্ষেপই নেয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের। বরং বেশিরভাগ বিদ্রোহী প্রার্থীরই এক জবাব- শাস্তি যত কঠিনই হোক, তবু মাঠ ছাড়তে তারা নারাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দলটির তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ কোথাও কোথাও সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে। দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের পরও ঠেকানো যায়নি বিদ্রোহী প্রার্থীদের। কেন্দ্রের বহিষ্কারের ঘোষণা আমলে না নিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠের লড়াই চালিয়ে যেতে মরিয়া দল মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে মাঠে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অনেকস্থানেই মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রায় প্রকাশ্যই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন। এসব অভিযোগ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন এমপি, জেলা ও উপজেলা নেতাদের বিরুদ্ধে। তৃণমূল থেকে আসা অসংখ্য অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই জমা পড়ছে ধানম-ির সভানেত্রীর কার্যালয়ে। ইউপি নির্বাচনে ত্যাগী ও দলের প্রতি নিবেদিত নেতাদের বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অন্যদের মনোনয়ন দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে- এমন অনেক অভিযোগই তদন্ত করে দেখছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। জানা গেছে, ধানম-ির কার্যালয়ে জমা পড়া অভিযোগের পাহাড় জমছে প্রতিদিনই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলছেন তৃণমূলের নেতারা। ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সরাসরি, ফ্যাক্স কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো অভিযোগে তারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব না দেখিয়ে যেসব এমপি-মন্ত্রীরা প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অস্বচ্ছ পথ অনুসরণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন। তৃণমূল নেতারা বলেন, এসব প্রভাবশালী মহলকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দলের জন্যেই মঙ্গল হবে। তৃণমূল থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠলেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, রাজনীতি করতে হলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা মানতে হবে। আমরা ধরে নিলাম অনেক যোগ্য নেতা মনোনয়ন পাননি। তাই বলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ করবেন- এটা মেনে নেয়া যায় না। দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকে নেতা মেনে রাজনীতি করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেকেই দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিভিন্ন ছুঁতো খুঁজে বের করে বিদ্রোহ প্রকাশের চেষ্টা করছেন। এটা কাম্য নয়। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের জানান, মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রার্থী হতে না পেরে বিভিন্ন অভিযোগ করছেন। তৃণমূলের অভিযোগের অনেগুলোই আমরা তদন্ত করেছি। কিন্তু সত্যতা মেলেনি। এখন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত, বিদ্রোহীদের ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এখনও সময় আছে আমি আশা করব যারা এখনও দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন তারা সবাই সরে আসবেন। নইলে তাদের সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে। কেন্দ্রের কঠোর অবস্থানের পরও বিদ্রোহী প্রার্থিতা কিছুতেই সামাল দিতে পারছে না ক্ষমতাসীন দলটি। কেন্দ্রের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ তৃণমূলের প্রার্থীরা। বরং যতই দিন যাচ্ছে লাগামহীন কোন্দলে অস্থির হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে সংঘর্ষের সংবাদ। অর্ধেকেরও বেশি ইউনিয়ন পরিষদেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যে কোন সময় এ দু’-গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন ইউনিয়নের ভোটারসহ এলাকাবাসী। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে সংঘটিত হামলায় দু’জন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। অনেক স্থানেই একে অপরকে হুমকি, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, শো-ডাউনসহ নানা অভিযোগ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। মূলত মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের জেরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে উত্তেজনা, গ্রুপিং-লবিং এখন তুঙ্গে। এসব সামাল দিতে সাময়িক বহিষ্কার বা বহিষ্কারের হুমকি দিয়েও ফল পাচ্ছে না কেন্দ্র। মূলত ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। প্রসঙ্গত, ছয় ধাপে অনুষ্ঠেয় এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭৩২টিতে নির্বাচন হবে আগামী ২২ মার্চ। দ্বিতীয় ধাপে ৬৮৪ ইউপিতে ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭০৯ ইউপিতে, চতুর্থ ধাপে ৭ মে ৭২৮টি ইউপিতে, পঞ্চম ধাপে আগামী ২৮ মে ৭১৪টি ইউপিতে এবং সর্বশেষ আগামী ৪ জুন ৬৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। এখন তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠেয় ৭০৯টি ইউপির জন্য দলীয় প্রার্থিতা বাছাই পর্ব চলছে। শুক্রবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তৃতীয় ধাপের ৭০৯টির মধ্যে পাঁচ শতাধিক ইউপিতে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
×