ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘটনা তদন্তে মার্কিন সাইভার নিরাপত্তা কোম্পানি ফায়ারআইয়ের সাহায্য নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১২ মার্চ ২০১৬

ঘটনা তদন্তে মার্কিন সাইভার নিরাপত্তা কোম্পানি ফায়ারআইয়ের সাহায্য নেয়া হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ফায়ারআইয়ের ম্যানডিয়েন্ট ফরেনসিক বিভাগের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এর আগেও সবচেয়ে বড় বড় সাইবার চুরির ঘটনার মধ্যে বেশ কয়েকটির তদন্ত করেছে সিলিকন ভ্যালির কোম্পানি ফায়ারআই। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সই অর্থ লোপাটের তদন্তে ফায়ারআইকে সম্পৃক্ত করেছে। এদিকে, শুক্রবার দেশ ছেড়ে পালানোর সময় রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার শাখার ম্যানেজার মেইয়া সান্তোস-দেগুইটিকে নিনয় একুইনো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার অপরাহ্নে ফিলিপিন্স এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে জাপানের নারিতা যাচ্ছিলেন এই শাখা ম্যানেজার। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাকে নারিতাগামী ফ্লাইট থেকে অফলোড করা হয়েছে। অপরদিকে, ফিলিপিন্সের সিনেট বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এ লক্ষ্যে আগামী মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় সিনেট ব্লু রিবন কমিটিতে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার শাখার শাখা ম্যানেজার মেইয়া সান্তোস-দেগুইটিকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। ফায়ারআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকেশ আস্তানা। যিনি বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি বিভাগে পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আস্তানাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি তদন্তে ম্যানডিয়েন্টকে এনেছেন। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ হ্যাকাররা কীভাবে চুরি করল, তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত বিশ্বে ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে ‘অন্যতম বড়’ বলছে রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এই তদন্ত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে বলেও জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি। অবশ্য এফবিআই, ইউএস সিক্রেট সার্ভিস, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও ইউএস ট্রেজারির ক্রাইমস এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। গত মাসে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা (১০ কোটি ডলার) সরানো হয় ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার মাঝপথে আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের পাঁচটি এ্যাকাউন্টে নেয়া ৮ কাটি ডলার ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে পাচার হয়ে গেছে। এ বিষয়ে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ কেবল বলেছে, এ ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে তারা। তাদের দাবি, এই জালিয়াতির জন্য তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হ্যাকাররা ভাঙতে পারেনি। সাইবার অপরাধীরা কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে ঢুকেছে, লুট হওয়া অর্থ কোথায় কোথায় গেছে এবং কোন টাকা উদ্ধার করা যাবে কি না- এসব প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত থেকে। হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ঢুকেই পেমেন্ট ট্রান্সফারের ক্রেডেনশিয়াল চুরি করে। এরপর ভুয়া সুইফট মেসেজের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভকে অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ পাঠানো হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে এক সপ্তাহের মধ্যে এরকম প্রায় তিন ডজন অনুরোধ যায় ফেডারেল রিজার্ভে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করতে বলা হয় বিভিন্ন এ্যাকাউন্টে। এর মধ্যে চারটি অনুরোধের বিপরীতে ফিলিপিন্সের এক ব্যাংকের পাঁচটি এ্যাকাউন্টে মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। পঞ্চম আদেশে শ্রীলঙ্কার একটি ভুয়া এনজিওর এ্যাকাউন্টে ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হলেও বানান ভুলে সন্দেহ জাগায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
×