ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আচরণবিধি লঙ্ঘনই মূল সমস্যা

নির্বাচন কমিশনে ইউপি প্রার্থীদের অভিযোগের পাহাড়

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১২ মার্চ ২০১৬

নির্বাচন কমিশনে ইউপি প্রার্থীদের অভিযোগের পাহাড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের অভিযোগের পাহাড় জমছে নির্বাচন কমিশনে। বেশিরভাগই অভিযোগ পড়ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি, কেন্দ্র দখল ও বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ‘ভোট ছিল’ দেয়ার জন্যও ভোটারদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়িয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে প্রার্থীরা তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোন প্রতিকার না পেয়ে অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনে। সরাসরি হাজির হয়ে, ফ্যাক্সযোগে ও চিঠির মাধ্যমেও অভিযোগ ইসিতে পাঠানো হচ্ছে। ইসির পক্ষ থেকে এখনও এসব অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানিয়েছেন, যেসব অভিযোগ আসছে তা কমিশনের নজরে আনতে ফাইলে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। কোন ছাড় দেয়া হচ্ছে না। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনে অভিযোগ তদন্ত করতে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নির্বাচনে আচরণবিধি ঠিকমতো প্রার্থীরা মেনে চলছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে। মূলত গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে অভিযোগ আমলে নেবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা জানান, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালনে তদন্ত করতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে এ ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে সময় কার্যকর ফলাফল পাওয়ায় এবারও এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট ইসির তদন্ত কমিটিতে রয়েছেনÑ ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মোঃ শাহেদুন্নবী চৌধুরী, মোঃ শাহ আলম ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ মনিরুজ্জামান। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। ওই আদেশে বলা হয়েছে কমিশনের উচ্চতর কমিটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত আচরণবিধি সংক্রান্ত সব প্রতিবেদন যাচাই করবে। যে কমিটি নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্য়ন্ত বলবত থাকবে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার না পেয়ে একান্ত বাধ্য হয়েই কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেছেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে যেমন তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারের বাধা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থক ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও রাতে বেলা ভয় ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নেয়া, একজন প্রার্থীকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা, নির্বাচন কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা এ বিষয়ে এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যস্থা নেয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী যেমন রয়েছেন, তেমনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা রয়েছেন। বিএনপি ও তাদের শরিক দলের প্রার্থীদের অভিযোগের সংখ্যাও কম নয়। তবে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইসির পক্ষ এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ইসি সচিব জানিয়েছেন অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না হলে ব্যবস্থা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ঢালাও অভিযোগের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন। এর আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধার বিষযটি বিএনপি পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হলেও তখন সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় বিএনপির ওইসব অভিযোগও আমলে নেয়নি ইসি। এখন পর্যন্ত ইসির পক্ষ থেকে দুটি বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যানের বরখাস্তে সুপারিশ করা ও ওই উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা। অপরদিকে বরগুনা-২ এমপির বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়া। জানা গেছে একটি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। অপরটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত আর কোন অভিযোগ ইসির পক্ষ থেকে আমলে নিয়ে তদন্ত করা হয়নি। জানা গেছে ইউপি নির্বাচন নির্বাচন প্রতিদিনই মাঠ পর্যায়ে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ২নং বাকাল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহিলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লাবণ্য আক্তার তালুকদার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভোটারদের ভয় দেখিয়ে বলা হচ্ছে ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নেয়া হবে। তাদের মনোনীত প্রার্থীকে প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়েছে। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ৪নং নাংলা ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তাকে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্রলীগের এক নেতা হুমকি দিয়েছেন। ভোটকেন্দ্র দখল করে সব ইউপিতে পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করা হবে জানিয়েছেন ওই ছাত্রনেতা। এ ছাড়াও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেন। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ৫নং বড়ইয়া ইউপির বর্তমান চয়াম্যান জাহিদুল আবেদীন (জাহিদ)ও তার নির্বাচনী প্রচারের বাধা দেয়া ও কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ৫নং কেঁড়াগাছি ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থীও নির্বাচনী প্রচারের প্রতিপক্ষে বিরুদ্ধে বাধার অভিযোগ করেছেন। আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে যাচ্ছে প্রখমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচন। প্রথম দফায় ১৬টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে চেয়ারম্যান পড়ে ৩ হাজার ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়াও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রয়েছে আগামীকাল রবিবার। কমিশন জানিয়েছে দ্বিতীয় দফায় বৈধ প্রার্থীদের অনুকূলে ১৪ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৩১ মার্চ। এ ছাড়া ছয় দফায় সারাদেশে বাকি ইউপির নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করা হলে মনোনয়নপত্র জমার জন্য বিস্তারিত সময়সুচী এখনও ঘোষণা করা হয়নি। ইসি ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, চতুর্থ ধাপে ৭ মে ৭২৮টি ইউপিতে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ৭১৪টি এবং ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ৬৬০ ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
×