৩০ বছর আগে চেরনোবিল পরমাণু দুর্ঘটনায় সৃষ্ট ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ইউক্রেন ও বেলারুশের সাধারণ মানুষকে। দুর্ঘটনায় কি পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়েছে তা নিরূপণের জন্য বেছে নেয়া হয় এই দুটো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রকে। পরিবেশবাদী গ্রুপ গ্রিনপিস জানিয়েছে, এখানকার বাসিন্দাদের খাদ্য ও পানীয়র মধ্যে এখনও বিপজ্জনক মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা বিদ্যমান।
ক্যাসিয়াম-১৩৭, স্ট্রোনটিয়াম-৯০ এর আইসোটোপ এখনও দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে বিশেষ বন এলকায় বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বলে গ্রিনপিসের উদ্যোগে করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে সোভিয়েত পরমাণু স্থাপনায় যে বিস্ফোরণ ঘটে তার ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে। এর মধ্যে ইউরোপের একটি বড় অংশ রয়েছে। ‘পরমাণু আতঙ্ক : চেরনোবিল ও ফুকুশিমার দীর্ঘস্থায়ী কাহিনী’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাবার থেকে মানুষ বেশি করে তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়, বরং জ্বালানি হিসেবে যে কাঠ তারা ব্যবহার করছে সেখানে থেকেই বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে। বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনগণকে তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের মতো পর্যাপ্ত অর্থ ইউক্রেনের কাছে নেই। এর অর্থ দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকজনের দূষণের শিকার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।
ইউক্রেন এখন তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ভূখ-ে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অন্যদিকে রাশিয়া এবং বেলারুশও আর্থিকভাবে ভাল নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেজস্ক্রিয়তার দিক থেকে বিপজ্জনক ওই অঞ্চলটিতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বাস করে। সেখানকার খাদ্যশস্য এখনও তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবমুক্ত নয়। এর নেতিবাচক প্রভাব এ অঞ্চলের মানুষকে বহু বছর বয়ে বেড়াতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় লোকজনের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না। ৩০ বছর পরও ওই অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুকে এখনও তেজস্ক্রিয়তা দূষিত দুধপান করতে হচ্ছে। গ্রিনপিসের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে রাশিয়া বা ইউক্রেন কোন দেশ থেকে সরকারীভাবে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দীর্ঘস্থায়ী তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণ মানুষের শরীরে জটিল রোগ তৈরি করতে পারে। সেখানে উচ্চহারে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছ থেকে আসা তথ্যে জানা গেছে। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় সাধারণ মানুষের পক্ষে তেজস্ক্রিয়তামুক্ত খাদ্য সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না।-টাইমস অব ইন্ডিয়া।