ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় মহিলা ফুটবলের ফাইনালে হার ময়মনসিংহের

বিজেএমসির প্রথম শিরোপা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১১ মার্চ ২০১৬

বিজেএমসির প্রথম শিরোপা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর নতুন চ্যাম্পিয়ন দল এখন বিজেএমসি। বৃহস্পতিবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একপেশে ফাইনালে তারা ৭-১ গোলে শোচনীয়ভাবে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ময়মনসিংহ জেলা দলকে (আনসার ভিডিপি সর্বাধিক তিনবার চ্যাম্পিয়ন) হারিয়ে এই কৃতিত্ব দেখায়। বিজয়ী দলের সাবিনা খাতুন ও স্বপ্না হ্যাটট্রিক করেন। সাবিনা করেন ৪ ও স্বপ্না করেন ৩ গোল। ফাইনাল খেলা শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারপার্সন এবং এএফসি মহিলা কমিটির নির্বাহী সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ। প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দল পায় ৫০ হাজার এবং রানার্সআপ দল পায় ২৫ হাজার টাকা। তাছাড়া অংশ নেয়া প্রতি দল পায় ৩০ হাজার টাকা করে। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান ময়মনসিংহের সানজিদা আক্তার। টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত ২২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পান বিজয়ী দলের সাবিনা খাতুন। জাতীয় মহিলা ফুটবলে এটা বিজেএমসির প্রথম শিরোপা হলেও সার্বিকভাবে এটা তাদের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ২০১২-১৩ মৌসুমে তারা জিতেছিল কর্পোরেট লীগের শিরোপা। মজার ব্যাপার এবারের ফাইনালিস্ট দুই দলই এসেছে একই গ্রুপ (‘এ’) থেকে! এবার গ্রুপ পর্বে দুই দলের প্রথম মোকাবেলাতেও জিতেছিল বিজেএমসি, ২-১ গোলে। ফাইনালে জিতে কোথায় প্রতিশোধ নেবে ময়মনসিংহ, তা না, উল্টো তিক্ত-শোচনীয়ভাবে হারতে হলো তাদের! গত আসরের সেমিতে বিজেএমসির জয়রথ থামিয়ে দিয়েছিল এই ময়মনসিংহই। আরও মজার ব্যাপার হলোÑ ফাইনালে এই দুই দল মিলিয়ে জাতীয় দলেরই খেলোয়াড় খেলেছেন ১২ জন (উভয় দলেরই ৬ জন করে)! এটা নিশ্চিত করেন সস্ত্রীক খেলা উপভোগ করতে আসা জাতীয় মহিলা দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। ফাইনালে স্টেডিয়ামে আসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, ভুভুজেলা বাজিয়ে তারা উভয় দলকে সমর্থন যোগায়। ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। বিজেএমসিকে সমর্থন যোগাতে ডেমরা থেকে হাজির হয় বাওয়ানী আদর্শ স্কুলের ১২৯ ছাত্র। প্রথমার্ধে বিজেএমসি ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। ময়মনসিংহের (এই দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ধোবাউড়া কলসিন্দুর স্কুলের) মেয়েরা সমানতালে খেলে। কিন্তু গোল করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। অভিজ্ঞতা, বয়স, শারীরিক সক্ষমতায়, পরিণত মানসিকতায় ও গতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল তারা। বিশেষ করে তাদের ডিফেন্ডাররা ছিল শ্লথগতির। এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে একের পর এক গোল আদায় করে নেয় বিজেএমসি। পক্ষান্তরে ময়মনসিংহের ভরসা ফরোয়ার্ড সানজিদা খেলেন চোট নিয়ে। দলের একমাত্র গোলটি করলেও একটি পেনাল্টি মিস করেছেন তিনি। পুরো ম্যাচে তিনি ছিলেন ম্রিয়মাণ, ম্লাণ। সাবিনা গোল চারটি করেছেন ১৬, ৬৯, ৮৫ ও ৯০+৪ মিনিটে। সবকটিই একক নৈপুণ্যে করা। প্রথমার্ধে মাত্র এক গোলে এগিয়ে ছিল বিজেএমসি। ম্যাচের চিত্রটা পাল্টে যায় দ্বিতীয়ার্ধে চিকেন পক্স থেকে সদ্য সেরে ওঠা স্বপ্নাকে মাঠে নামানোর পর। পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও দলের স্বার্থে মাঠে নামতে হয় তাকে। সাবিনার সঙ্গে গড়ে তোলেন ম্যাচজয়ী আক্রমণাত্মক জুটি। তিনি ৫১, ৭৭ ও ৮৮ মিনিটে গোল তিনটি করেন। ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙ্গে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েরা। ডিফেন্ডার নাজমা তো অজ্ঞানই হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দাঁত-কপাটি লেগে যায় তার। পরে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
×