ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক চাপে!

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১১ মার্চ ২০১৬

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক চাপে!

স্পোর্টস রিপোর্টার, ধর্মশালা থেকে ॥ বাংলাদেশ দলের সহকারী ও স্পিন বোলিং কোচ হচ্ছেন রুয়ান কালপাগে। বৃহস্পতিবার ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইনডোরে মুশফিকুর রহীমকে একের পর এক বল ছুড়ছেন কালপাগে। এমনও হচ্ছে, কোন কোন বল বোলিং ক্রিজের বাইরে পা রেখেও ছাড়ছেন কালপাগে। সেই বলগুলো আকাশে উড়িয়ে মারছেন মুশফিক। কিন্তু বার বার জালে আটকা পড়ে তার একটু সামনে থাকছে বল। ঠিক একইভাবে যেন ব্যর্থতার জালে আটকা পড়ে গেছেন মুশফিকও। তার ব্যাট থেকে যে টি২০তে রানই আসছে না। যতই শট খেলার চেষ্টা করছেন, রান নেয়ার চেষ্টা করছেন; কোন চেষ্টারই ফল মিলছে না। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটারটি মুশফিকই। হল্যান্ডের বিপক্ষেও রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড হয়ে গেলেন মুশফিক। তাই প্রশ্নও উঠে যাচ্ছে, ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাতি কী হারাচ্ছেন মুশফিক? ইএসপিএন-ক্রিকইনফোতে শেষ ১০ ম্যাচে ক্রিকেটাররা কী করেছেন, তা উল্লেখ থাকে। তাতে গিয়ে মুশফিক কী করেছেন দেখতে নিতে ভিমরিই খেতে হবে। শেষ ১০ ম্যাচে মুশফিকের কোন অর্ধশতক তো নেই-ই, একটিমাত্র ইনিংস আছে ত্রিশের ওপরে! কী হলো মুশফিকের? ব্যর্থতার পর ব্যর্থতাই তার কাছ থেকে মিলছে। যেহেতু টি২০ বিশ্বকাপ চলছে এবং দলের ক্রিকেটাররা গত বছর নবেম্বর থেকেই আছেন টি২০ খেলার মধ্যে; এত দিন তো ক্রিকেটারদের টি২০ স্প্যাশালিস্টই হয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে মুশফিকের তো আরও বেশি করে টি২০ রপ্ত করে ফেলার কথা। অথচ তিনিই হচ্ছেন সবচেয়ে ব্যর্থ। দলে এ মুহূর্তে ব্যর্থতা নিয়ে যদি হিসেব করতে বসা হয়, তাহলে মুশফিকের ব্যর্থতার বোঝা সবচেয়ে বেশি টানতে হবে। আন্তর্জাতিক টি২০তে ১৮ ম্যাচ ধরেই ব্যর্থতা সঙ্গী হচ্ছে মুশফিকের। সেই ২০১৩ সালের নবেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অর্ধশতক করেছিলেন। এরপর সেই খনির সন্ধান পাচ্ছেনই না এ উইকেটরক্ষক! এর বাইরে বিপিএল খেলেছেন। সিলেট সুপার স্টারসের হয়ে খেলে ৯ ম্যাচে ব্যাট করতে পেরে ২৬.১৬ গড়ে ১৫৭ রান করেছেন। সেখানেও অর্ধশতক মাত্র একটি। পিএসএলেও খেলেছেন মুশফিক। সেখানেও ব্যর্থতার ষোলো কলাই পূর্ণ করেছেন। করাচী কিংসের হয়ে ৩টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ১০, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ ও তৃতীয় ম্যাচে ৩৩ রান করেছেন। খুবই কঠিন সময় যাচ্ছে আন্তর্জাতিক টি২০তে ৫১ ম্যাচ খেলে ১৭.৮১ গড়ে ৬৫৯ রান করা মুশফিকের। শুধু কী টি২০তে, টেস্টেও তো মুশফিকের ব্যাট ইদানীং কোন কথাই বলছে না। যেন মুশফিকের সঙ্গে ‘রাগ’ করেছে। গত বছর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে যদিও ৬৫ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিক, কিন্তু এর আগে টানা ৬ ম্যাচের ১০ ইনিংসে নেই কোন অর্ধশতক। ২০১৪ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মুশফিকের ব্যাট থেকে অর্ধশতক মিলেছিল। এরপর মিলেছে গত বছর জুলাইয়ে। টি২০তে ‘যাচ্ছেতাই’ অবস্থা। টেস্টেও ৪৮ ম্যাচ খেলে ৩টি শতকসহ ৩২.৩১ গড়ে ২৬৫০ রান করা মুশফিকের ‘বেহাল’ দশা। তার চেয়ে অবশ্য ওয়ানডেতে ভাল ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে দুটি শতক করেছেন ১৫৮ ওয়ানডে খেলে ৪টি শতকসহ ৩১.৬১ গড়ে ৩৯২০ রান করা মুশফিক। তবে টি২০ নিয়েই এখন ভাবতে হচ্ছে। যেহেতু টি২০ খেলা হচ্ছে, সেই খেলাতে কী করছেন মুশফিক; সেটিই বিবেচনায় আসছে। তাতে ‘যানপরনাই’ ব্যর্থ মুশফিক। দিনের পর দিন দলে থাকার কারণ ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ হয়ে ওঠা। এ রকম বড় মাপের ক্রিকেটারের খারাপ সময় যায়। আবার ফিরেও আসে। আবার ফর্মে আসতে একটি ম্যাচে একটি বড় ইনিংসই যথেষ্ট। কিন্তু দিনের পর দিন সেই ইনিংসটিই যে মিলছে না। ওয়ানডেতে গত বছর নবেম্বরে সেঞ্চুরি, টেস্টে গত বছর জুলাইয়ে অর্ধশতক ও টি২০তে ২০১৩ সালের নবেম্বরে অর্ধশতক করেছেন মুশফিক। যে মুশফিক মিডলঅর্ডারের ‘রাজা’ ছিলেন, সেই মুশফিক এখন যেন মিডলঅর্ডারে ‘সমস্যা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যখন টপঅর্ডার ব্যর্থ হয়, তখন মুশফিকের হাল ধরার কথা। তা করতে পারছেন না। আবার টপঅর্ডার ভাল শুরু করে দিলেও মিডলঅর্ডারে মুশফিক সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন না। বার বার তার ব্যর্থতায় দল খেলায় সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে। অনেক আশা যে তার ওপর। কিন্তু সেই আশা পূরণ করতে পারছেন না মুশফিক। আবার উইকেটরক্ষকের পেছনেও এখন আর সেই ধার নেই। বুধবার যেমন বাংলাদেশ-হল্যান্ড ম্যাচে তার হাতের সামনে দিয়ে বল গেলেও ধরতে পারেননি। ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ এখন ‘মিস্টার প্রবলেমস’ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাতিই হারাতে যাচ্ছেন। তাই কী হচ্ছে সত্যি সত্যি!
×