ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

কুমিল্লায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে প্রবাসী স্বামীকে খুন করায় তাছলিমা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ মার্চ ২০১৬

কুমিল্লায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে প্রবাসী স্বামীকে খুন করায় তাছলিমা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১০ মার্চ ॥ কুমিল্লায় স্ত্রীর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে খুন করে লাশ অজ্ঞাত স্থানে গুম করে রেখেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার ফাহদ বিন আমীন চৌধুরীর ৮নং আমলী আদালতে স্ত্রী তাছলিমা বেগম এ চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। নিহত ময়নাল হোসেন মুরাদনগর উপজেলার আকাবপুর নোহাটি গ্রামের মৃত আবদুল কাদিরের ছেলে। সে গত বছরের ১ নবেম্বর গভীর রাতে মুরাদনগর উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রীর পরিকল্পনায় প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে অপহরণের পর খুন করা হয়। এদিকে প্রবাসী ময়নালকে হত্যার প্রায় চার মাস ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত নিহতের লাশ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার আকাবপুর নোহাটি গ্রামের মৃত আবদুল কাদিরের সৌদি প্রবাসী ছেলে ময়নাল হোসেনের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর আগে একই উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে তাছলিমা বেগমের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই সন্তান রয়েছে। সৌদি যাওয়ার পর ময়নাল উপার্জিত টাকা স্ত্রী তাছলিমার কাছে পাঠায়। কিন্তু বিদেশ থেকে পাঠানো ওই টাকায় স্ত্রী তার নামে পাঁচ বিঘা জমি খরিদ করে। এদিকে প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাছলিমা বেগম পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে- এমন খবর পেয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর ময়নাল হোসেন দেশে আসেন এবং শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বিদেশ থেকে তার পাঠানো টাকার হিসাব চান। একপর্যায়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা ও স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এতে তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে ছয় সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত বছরের ১ নবেম্বর গভীর রাতে ঘাতকরা প্রবাসী ময়নালকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলে। পরে তাছলিমা ৭ নবেম্বর মুরাদনগর থানায় স্বামী নিখোঁজের জিডি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তার স্বামী ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। মুরাদনগর থানা পুলিশ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলেও ঘটনার কূল-কিনারা খুঁজে পায়নি। পরে প্রবাসী ময়নালের মা আমেনা খাতুন তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে কুমিল্লার পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করলে তা তদন্তের জন্য জেলা ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ জানান, গত ৮ মার্চ তাছলিমাকে নগরীর ফৌজদারি মোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে তার স্বামী ময়নালকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীর মাধ্যমে হত্যার বর্ণনা দেয়। সে জানায়, বিদেশ থেকে পাঠানো স্বামীর অর্থ দিয়ে তার নামে কেনা সম্পত্তি এবং পরকীয়ার বিষয়ে সন্দেহ থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এর জের ধরে সে তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার দেয়া তথ্যমতে ডিবি পুলিশ তাছলিমার প্রেমিক শরিফুল ইসলামকেও গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার তাকে কুমিল্লার ফাহদ বিন আমীন চৌধুরীর ৮নং আমলী আদালতে হাজির করা হলে সে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে তাসলিমা জানায়, ১ নবেম্বর গভীর রাতে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে ছয়জন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করা হয়। এর মধ্যে রাতেই তিন লাখ টাকা পরিশোধ করার পর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা কৌশলে ওই প্রবাসীকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে বাড়ির অদূরে খালপাড়ে নিয়ে হত্যার পর লাশ অজ্ঞাত স্থানে গুম করে ফেলে। ঘটনার চার মাস ১০ দিন পরও প্রবাসী ময়নালের লাশের সন্ধান পায়নি পুলিশ। এদিকে ডিবি পুলিশ আদালতে দেয়া তাছলিমার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য ঘাতকদের আটক এবং নিহতের লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহ কামাল আকন্দ।
×