ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াইফাই সংযোগসহ থাকছে সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ॥ ভারত থেকে এ মাসেই প্রথম চালানে আসছে ৪০ কোচ

রেলে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক কোচ, ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ১২০ কিমি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ মার্চ ২০১৬

রেলে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক কোচ, ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ১২০ কিমি

মশিউর রহমান খান ॥ রেলপথে দেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন লিঙ্কে হফম্যান বুশ (এলএইচবি) ব্রডগেজ কোচ সংযুক্ত করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এ রেল কোচগুলো মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে যে কোন দিন ভারত থেকে বাংলাদেশে আনা হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন। সরকার ভারতের রেলওয়ে থেকে মোট ১২০টি এলএইচবি কোচ আনছে। ভারত সরকারের অর্থায়নে কোচগুলো আনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৭ কোটি রুপী বা ৪২৬ কোটি টাকা। ১২০টি কোচের মধ্যে প্রথম চালানে পাঠানো হবে ৪০টি কোচ। এটিই ভারতের রেলওয়ের এলএইচবি কোচের সবচেয়ে বড় রফতানি। বাকি ৮০টি কোচ আগামী বছরের মার্চের মধ্যে পাঠানো হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। আমদানি করা এসব এলএইচবি কোচে থাকবে ১৭টি প্রথম শ্রেণীর এসি, ১৭টি এসি, মালগাড়িসহ ৩৪টি নন-এসি চেয়ার ও প্রার্থনা কক্ষসহ ৩৩টি নন-এসি চেয়ারকোচ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী কোচগুলোয় কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। পাশাপাশি কোচের ভেতর ও বাইরের নান্দনিক উৎকর্ষের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের দেয়া চাহিদা অনুযায়ী কোচগুলোয় রং করা হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে এসব কোচে ওয়াইফাই সংযোগ দেয়া হবে। নতুন এসব কোচ বর্তমান কোচগুলোর তুলনায় কিছুটা চওড়া হবে। ফলে ভেতরে যাত্রীদের চলাচলে সুবিধা হবে। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এ কোচগুলো তুলনামূলকভাবে ওজনে কম বিধায় পরিবহন জ্বালানি অনেক কমবে। স্বাভাবিকভাবে বর্তমান ট্রেনগুলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারে। কিন্তু নতুন এসব কোচ সংযোজনের পর প্রাথমিকভাবেই প্রতিটি ট্রেন ন্যূনতম ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ও সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারবে। এতে করে যাত্রী পরিবহন ও চলাচলের বর্তমানের সময় অনেক কমে আসবে। তাছাড়া পরিবহন ও জ্বালানি ব্যয় কম হওয়ায় রেলওয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এ ছাড়া যাত্রীরা রেলপথে যাতায়াতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। বর্তমানে চলাচলকারী কোচগুলোর তাপমাত্রা ধারণের মাত্রা হচ্ছে ৪০০ ভোল্ট থেকে ৪৫০ ভোল্ট। নতুন আধুনিক এসব কোচের তাপমাত্রা ৭০০ ভোল্ট পর্যন্ত। ফলে ট্রেনের ভেতরে তুলনামূলকভাবে শীতল অনুভূত হবে। সূত্র আরও জানায়, এসব কোচের মধ্যে প্রতিটি এসি কোচের সঙ্গে ৩টি ও নন এসি কোচের দুই প্রান্তে ২টি করে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে একটি হাই কমোড ও অন্যটি প্লেন কমোডের টয়লেট থাকবে। অসুস্থ ও সাধারণ সব প্রকারের যাত্রীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে এ সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এসি কোচে যাতায়াতকারী যাত্রীদের অধিক সুবিধা দিতে ৩টি করে টয়লেট সংযোজন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানের সকল কোচের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ৩০ বছর হলেও এসব কোচের আয়ুষ্কাল কমপক্ষে ৪০ বছর। জানা গেছে, বাংলাদেশের জন্য স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এলএইচবি কোচগুলো বর্তমানে ভারতের কাপুরথালার রেলকোচ কারখানায় নির্মাণাধীন রয়েছে। এ কোচগুলো ব্রডগেজ লাইনের জন্য নির্মিত হচ্ছে। কাপুরথালার এ রেলকোচ নির্মাণ কারখানাটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি বাজারে বেশ দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এর আগেও এ কারখানার নির্মিত কোচ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ও আফ্রিকান বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছে। তবে সে সব দেশে রফতানিকৃত কোচগুলো ছিল মিটারগেজ লাইনের জন্য নির্মিত। জানা গেছে, গত বছরের ২১ জানুয়ারি ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাইটস (আরআইটিইএস) লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেলকোচ রফতানির চুক্তি সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চুক্তির ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের কাপুরথালার রেলকোচ নির্মাণ কারখানার সঙ্গে চুক্তি করে রাইটস। ওই চুক্তি মোতাবেকই কাপুরথালায় এ এলএইচবি কোচগুলো নির্মিত হচ্ছে। পরে গত জানুয়ারিতে রেল মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ফিরোজ সালাউদ্দিনসহ বাংলাদেশ ও ভারতের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ কাপুরথালার কারখানাটি পরিদর্শন করেন। এ সময় চলতি মাসে আসা প্রথম চালানে যে সব কোচ আসবে সেগুলোর গুণগত মান যাচাই করা হয় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, রেলপথে চলাচলে গতিশীলতা আনা, আধুনিকায়ন, যাত্রীদের রেলপথে চলাচলে আগ্রহী করা, যাতায়াত সময় বর্তমানের তুলনায় কমাতে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আমরা ভারত থেকে ১২০টি লিঙ্কে হফম্যান বুশ (এলএইচবি) ব্রডগেজ কোচ রেলে সংযোজন করতে যাচ্ছি। ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এর মধ্যে চলতি মাসের শেষের দিকে ভারত থেকে প্রথম চালানের ৪০টি কোচ আনা হবে। বাকি কোচগুলো আগামী ২০১৭ সালের প্রথমদিকে আনা হবে। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এসব কোচ হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধাসম্পন্ন। কোচে ওয়াইফাই প্রযুক্তির সুবিধা থাকবে। এসব কোচ স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক গতিতে চালানো সম্ভব হবে। যার সর্বনিম্ন গতি হবে ১২০ কিলোমিটার ও সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার। ফলে যাতায়াত সময় ও যাত্রীদের কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। এর মাধ্যমে রেলপথে যাত্রী চলাচলে আগ্রহ তৈরি হবে।
×