ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ মার্চ ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ খুব চেনা শহর ঢাকা। চেনা যেমন, অচেনাও। কখনও কখনও এই শহরকে নির্দয়-নিষ্ঠুর মনে হয়। এখানে চুলোর গ্যাস পুড়িয়ে মারে গোটা একটি পরিবারকে। পূর্ব রামপুরার একটি বাসায় আগে থেকেই গ্যাস লাইন চালু ছিল। আর তার পর আগুনের স্পর্শ পেতেই লেলিহান শিখা। আগুনে ছটফট করতে করতে মারা যান একটি শিশু ছাড়া পরিবারের সব সদস্য। এই শহরে মা অভিযুক্ত হন শিশু হত্যার দায়ে। সর্বশেষ, অক্সিজেনের আশায় বাঁচিয়ে রাখা বৃক্ষটি বিষবৃক্ষে পরিবর্তিত হয়! ঘাতক হয়ে ওঠে অপরূপ সৌন্দর্যের কৃষ্ণচূড়া। ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ শিল্পীকে খুন করতে তার বাধে না। সে আত্মঘাতী হয়ে ওঠে! হৃদয় বিধারক ঘটনাটি গত সোমবারের। স্থান ধানম-ির চার নম্বর সড়ক। রিক্সা করে যাচ্ছেন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু। বহুদূর যাওয়ার ছিল তার। আরও অনেক দেয়ার ছিল দেশকে। না, তা সম্ভব হয়নি। তার আগেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেঙ্গে পড়ে তার ওপর। হাসপাতালে নেয়া হয় বটে। কিন্তু বাঁচানো সম্ভব হয় না। রং তুলিতে যে শিল্পী প্রিয় প্রকৃতিকে অহর্নিশ আঁকতেন, ভালবাসতেন, সেই প্রাণবন্ত মানুষটি আর নেই! কয়েকদিন হয়ে গেছে। এখনও শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা হতভম্ব! মানতে পারছেন না, খালিদ মাহমুদ মিঠু নেই। মানতে পারছেন না, এই শহরের কৃষ্ণচুড়া কারও প্রাণ নিতে পারে! বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় এমন গাছ আরও আছে। ঝড়ের কবলে পড়ে শেকড় দুর্বল হয়ে যাওয়া গাছের সংখ্যা কত? ক’টি গাছ যে কোন সময় পথচারীদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে? না, মিঠুর মৃত্যুর পরও প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেনি সিটি কর্পোরেশন। প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণেরও খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা শহরের যানজটও ভীষণ ভোগাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, এ দুর্ভোগ বাড়ছে কেবল। পরিত্রাণের কথা কেউ ভাবছেন নাÑ তা নয়। তবে সেই ভাবনায় বাইসাইকেল তেমন প্রাধান্য পাচ্ছে না। এ অবস্থায় রাজধানী শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বাইসাইকেলের জন্য পৃথক লেন দাবি করে আসছেন অনেকেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এমনটি করে সুফল পেয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকার রাস্তায়ও চাই পৃথক লেন। দাবিটি অনেক দিন ধরে করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। চারুকলা অনুষদের সামনের রাস্তায় সকালে এই কর্মসচী পালন করে বাংলাদেশ সাইকেল লেইন বাস্তবায়ন পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুসের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও গবেষণা পরিষদের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবুল কাশেম প্রমুখ। পৃথক লেনের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এখন কোটি কোটি টাকার জ্বালানি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে দেশের ক্ষতি। তেমনি যানজট ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে সাইকেল। এ জন্য সাইকেল ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। একই কারণে দাবি জানান পৃথক লেনের। আবুল কাশেম বলেন, সাইকেলে খরচ কম। ভাল ব্যায়াম হয়। আমিনুল ইসলাম টুব্বুস বলেন, বর্তমানে নির্বাচিত দুই মেয়র নির্বাচনের আগে সাইকেল লেন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শহরের ভালর জন্যই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিন দাবির পক্ষে স্বাক্ষরও সংগ্রহ করেন তারা। মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিনিধি দল সাইকেলে চড়ে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কার্যালয়ে। মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।
×