ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিন ॥ বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১১ মার্চ ২০১৬

ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিন ॥ বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ধর্মীয় বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের উদ্বেগ দূর করে বহুমতের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা বিষয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ধর্মনিরেপক্ষতাকে প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বুধবার বাংলাদেশের ওপর এই প্রতিবেদন পেশ করা হয়। এতে বলা হয়, ধর্মীয় বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর ও ধারাবাহিক অবস্থান বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলার প্রেক্ষিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীরা নিজেদের বিপন্ন বোধ করায় তাদের উদ্বেগ দূর করে সক্রিয় নাগরিক সমাজ ও বহুমতের সমাজ সুরক্ষায় সরকারকে সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক আগে থেকেই আন্তঃধর্ম সহাবস্থানের পাশাপাশি সমাজের উদার মনোবৃত্তির দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূল আদর্শ হিসেবে ধরা হয়েছে, যা কারও প্রতি বৈষম্য না করে ধর্মীয় বহুমত ধারণের ক্ষেত্র করে দিয়েছে। মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকারের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রশংসা করে এই সংবিধানকে খুবই ইতিবাচক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী কমে এসেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৩ ভাগ ছিল হিন্দু। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা ৯ ভাগ। বিভিন্ন সময়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ ও তাদের সম্পদ দখলের অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে হিন্দু জনগোষ্ঠী হ্রাস পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার এলাকায় এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক বেশি। রোহিঙ্গা নাগরিকরা মুসলিম হওয়ার কারণে বাংলাদেশে বিয়ে করে স্থায়ী বাসিন্দা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সরকার থেকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বিয়ে ঠেকানোর বিষয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্লগার ও অনলাইন এ্যাকটিভিস্টদের বিষয়ে সরকার থেকে সীমা অতিক্রম না করার জন্য যে নির্দেশনা দেয়া হয় তার সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকজন অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নিহত হয়েছেন। তবে তারা নিহত হওয়ার পর সরকার থেকে অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের ওপর যে ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয় তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। কেননা সরকার অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের উদ্দেশে বলেছে, ধর্ম বিষয়ে লেখালেখি নিয়ে তারা যেন সীমা অতিক্রম না করে। তবে এই নির্দেশনার মধ্য দিয়ে সরকারের মনোভব এখনও পরিষ্কার নয়। এই নির্দেশনার ফলে জনমনে অস্বস্তি রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হচ্ছে। এসব বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতে আন্তঃধর্মীয় যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য সরকার কাজ করতে পারে। একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংলাপের আয়োজনে সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জাতিসংঘের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র?্যাপোর্টিয়ার হাইনার বিলেনফোল্ড এই প্রতিবেদন পেশ করেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত বছরের ৩১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করেন হাইনার বিলেনফোল্ড। ওই সময় তিনি সরকারী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ ও কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওই সফরের ভিত্তিতে তিনি বুধবার এই প্রতিবেদন পেশ করেন।
×