ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী তুমি কেমন আছ?

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১১ মার্চ ২০১৬

নারী তুমি কেমন আছ?

মাহবুবা সুলতানা মনি ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও এমনটাই বলে গেছেন আরও বহু বছর আগে। কিন্তু সভ্যতার এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সমাজকে যখন পুরুষ-নারীর সমঅধিকার চাই বলে মিটিং-মিছিল করতে হয়, তখন এই গ্লানি সত্যিই দুঃখজনক। প্রায়ই আমরা পত্রিকার পাতায় দেখি যৌতুকের দাবিতে একটি মেয়ের ওপর তার পুরো শ্বশুরবাড়ির সকল লোকজন অনীহা। গৃহবধূদের গরম রডের ছেঁকা দেয়া, এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া, এমনকি শ্বশুরমশাই পুত্রবধূর বাহুতে কামর দিতেও পিছপা হন না ইদানীং। আমাদের একসময়ের ধারণা ছিল এই বউ পেটানোটা গরিব বা যারা অশিক্ষিত তাদের ঘরেই বেশি হয়। কিন্তু আমরা তথাকথিত শিক্ষিতরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। অনেক শিক্ষিত পরিবারেও শিক্ষিত নারীরাও প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়ে আসছে দিনের পর দিন। তাদের নজিরও আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরকে নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি, যে কিনা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তাঁর দুটো চোখই হারিয়েছিলেন। কিংবা খুলনার সেই মেয়েটি যে কিনা ডাক্তার হতে পারত, কিন্তু পড়াশোনা করবার দায়ে প্রভাবশালী শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতে যাকে মরতে হলো। এরা তো শিক্ষিতই ছিল, তবে এরা কেন এতটা বর্বর? একবার ভাবুন তো, এদের নির্যাতন বা কষ্টের গল্পগুলো আমরা জানি তাই হয়ত বলতে পারছি। কে জানে, এমন হাজার রুমানা মঞ্জুর আপনার আমার চারপাশে কাঁদছে, আমরা জানি না। কিংবা কেউ জেনেও চুপ করে আছি শুধু লোকসমাজ আর মানসম্মানের ভয়ে। কারণ আমাদের মধ্যেই যারা আমরা প্রতিবাদ করি, তারা বেয়াদব, বেহায়া, চরিত্রহীন, সংসার করার ক্ষমতা নাই, কিংবা বাবা-মা ভাল কিছু শেখায় নাইÑ এসব অপবাদের শিকার হই। যদি একটু ভেবে দেখি তাহলে দেখা যাবে, নারী নির্যাতন কোন বিশেষ শ্রেণীতে সীমাবদ্ধ নয়। যে কোন সমাজেই এখনও মেয়েরা নির্যাতিত হচ্ছে। হোক সে নির্যাতন শারীরিক, কিংবা মানুসিক। একইসঙ্গে থেমে নেই মেয়েশিশু নির্যাতনও। সমঅধিকার হলেই এই সমস্যার সমাধান আসবে বলে অনেকেই মনে করেন না। এই অবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজন মানসিকতার উন্নয়ন। আর প্রয়োজন যার যার জায়গা থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির। আমাদের চারপাশে যেমন উদারমনের অনেক মানুষ আছেন তেমনি নিচ মানসিকতার মনের মানুষেরও অভাব কিন্তু নেই। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আর সেই সচেতনতার বীজটি ছোটবেলা থেকেই বুনতে হবে। ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি শিশুর মানসিক চর্চা শুরু করা উচিত। আমরা নিজেরা যদি সচেতন হই, সেই ক্ষেত্রেই আমরা গোটা সমাজ তথা দেশকে পালটে দিতে পারি। আমাদের সচেতনতা হয়ত বাঁচিয়ে দিতে পারে হাজারো মেয়েকে যে কিনা আপনার-আমার, আমাদের মতোই স্বাভাবিক জীবনের অধিকার রাখে।আমাদের সকলের সচেতনতাই হয়ত ভবিষ্যতে নারী নির্যাতনের মতো মানসিক বিকৃতি রুখে দিতে পারে। এখনই সময়, কে বলতে পারে, এখন আমরা সচেতন না হলে পরের কান্নাটা আমাদেরই কোন স্বজন কাঁদবে না?
×