ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফাল্গুনের বিদায় লগ্নে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১১ মার্চ ২০১৬

ফাল্গুনের বিদায় লগ্নে

তৌফিক অপু ঝরাপাতার মড়মড় শব্দ, কোকিলের ডাক, হঠাৎ হঠাৎ ধুলো ঝড়-সব কিছুই যেন মনে করিয়ে দেয় বসন্তের উপস্থিতি। মানুষ তার কর্মব্যস্ত জীবনে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে, প্রকৃতির অমোঘ পরিবর্তন মাঝে মাঝেই চোখ এড়িয়ে যায়। তারপরও কিছু কিছু ঋতু না চাইলেও চোখের সামনে ধরা দেয় অপূর্ব শোভা নিয়ে। বসন্ত তেমনি এক ঋতু। হাঁটতে-চলতে এক ধরনের স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করা যায়। গাছে গাছে নতুন পাতা, পাখির কলতান সত্যিই এক মনোমুগ্ধকর ব্যাপার। অন্যরকম এক পরিবেশ বিরাজ করে চারদিকে। মন মাতানো আবহাওয়া। প্রকৃতি যেমন তার রূপ বদলায়। নতুন সাজে এবং রঙে যেভাবে উদ্ভাসিত হয় সেভাবেই মানুষ খাপ খাইয়ে নেয় প্রকৃতির সঙ্গে। ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতি সেজেছে বসন্তের ছোঁয়ায়। শেষ হয়ে আসছে এর আমেজ। অনাবিল আবেশে মন পুলকিত। ঋতুরাজের প্রতিটি মুহূর্ত যেন বর্ণিল হয়ে থাকে। মনে হয় রঙিন এক জগত। এ ঋতুরাজকে ঘিরেই রচিত হয়েছে বহু গান ও কবিতা। নগর-গ্রামে পথে-প্রান্তরে বসন্তের প্রভাব লক্ষণীয়। ফাল্গুনের শেষ প্রহরে চারদিক বিরাজ করছে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। শেষ হয়ে আসছে শীত। সময় হয়েছে শীতের মোটা কাপড় আলমিরাতে তুলে রাখার। তবে ঠা-ার আমেজ একেবারেই বিলীন হয়ে যায়নি বলে পাতলা কাপড়ের পোশাক ও মানানসই নয়। প্রকৃতি যেমন তার রূপ বদলায়, ঠিক সে রূপকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ফ্যাশন। নাতিশীতোষ্ণ এ আবহাওয়া ফ্যাশন জগতকেও নাড়া দিয়ে যায়। ফ্যাশন হাউসগুলোও এমন নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে বাজারে নিয়ে এসেছে বিভিন্ন ফ্যাশনেবল ড্রেস। মূলত ফুলসিøভ ড্রেস প্রাধান্য পেয়েছে এ ফ্যাশনে। এর মধ্যে হুডি শার্ট, ফুলশার্ট, হুডি ফতুয়া, ফুলসিøভ টি-শার্ট ও টপস, ফুলসিøভ সালোয়ার-কামিজ অন্যতম। ফতুয়ার সঙ্গে হুডি সংযোজন করায় ফ্যাশনে তা পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। তরুণ প্রজন্মের কাছেও হুডি ফ্যাশন বেশ জনপ্রিয়। এমনকি শার্টের সঙ্গেও হুডি সংযোজিত হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই পরিবর্তনশীল ফ্যাশনের নতুন ধারা। এ সম্পর্কে তরুণ ডিজাইনার রুবেল হাসনাত বলেন, প্রকৃতির অমোঘ পরিবর্তনে বর্তমান সময়ে বিরাজ করছে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। এ সময়টায় পোশাক কেনার প্রতি একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ মোটা কাপড় পরলে গরম লেগে যায় আবার পাতলা কাপড়ে ঠা-া অনুভূত হয়। তাছাড়া কাপড় এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। সে কারণে কাপড় বুঝে পোশাক কেনা উচিত। কাপড়ের ক্ষেত্রে নিপ কটন, খাদি, এ্যান্ডি কটন এবং জয়সিল্ককে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এসব কাপড়ের ড্রেস এই সময়টার বেশ আরামদায়ক এবং পোশাকগুলো অবশ্যই ফুলসিøভ। এছাড়াও ফুলসিøভ টি-শার্ট, পলো শার্ট অনায়েসেই মানিয়ে যায়। মানুষ যতই ফ্যাশন সচেতন হয়ে উঠছে, ততই বাড়ছে ফ্যাশন হাউসের সংখ্যা। যার ফলে হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে পছন্দসই পোশাক। ইচ্ছে হলেই যুগোপযোগী পোশাকে সাজানো যাবে নিজেকে। শীতের রেশ কাটিয়ে প্রতিটি ফ্যাশন হাউসেই চোখে পড়বে সময়োপযোগী পোশাক। দামও হাতের মুঠোয়। হুডি শার্ট পাওয়া যাবে ৬৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। হুডি ফতুয়া ৪৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে মিলবে। হুডি ট্রি-শার্ট ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা। ফ্লুলসিøভ টপস ৫৫০ টাকা থেকে থেকে ১২৫০ টাকা। সালোয়ার কামিজ জয়সিল্কের ১২৫০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা। হুডি পলোশার্ট ৪৫০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা। কর্মজীবী মানুষদের ক্ষেত্রে সাবধানতা একটু বেশি। যেহেতু তারা সারাদিনের জন্য বের হন; সে কারণে একটু বুঝে শুনে পোশাকটা সিলেক্ট করা উচিত। যেমন হাফসিøভ পোশাক না পরাই ভাল। এ সময়টায় ফুলসিøভ পোশাকই ডিমান্ড করে। ক্যাম্পাসে ফুলসিøভ টি-শার্ট কিংবা হুডি টি-শার্ট বেশ মানানসই। মেয়েদের ক্ষেত্রে নিপ কটন কিংবা জয়সিল্কের সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া অথবা টপস বেশ মানানসই। তাছাড়া শাড়ির ক্ষেত্রে তাঁত কোটা কাপড়, জামদানি বেশ কমফোর্টেবল। হাল্কা ঠা-াতেও যারা অভ্যস্ত নন, তারা রাতের পার্টির প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে নিতে পারেন। যেমন শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে ম্যাচ করা পাতলা চাদর (যা সহজেই ভাঁজ করা যায়) ব্যাগে রাখতে পারেন। ছেলেদের ক্ষেত্রে স্যুট কিংবা ক্যাজুয়াল ড্রেসের সঙ্গে মাফলার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর প্রয়োজন পড়ে না। কারণ এ আবহাওয়াটাই যেন উপভোগ করার মতো। মৃদুমন্দ নির্মল হাওয়া মনটা জুড়িয়ে দেয়। আরামদায়ক এ আবহাওয়ার সঙ্গে পোশাকটাও যদি আরামদায়ক হয় তাহলে তো কথাই নেই। ফ্যাশনের আমেজে বসন্তের শেষ প্রহরের স্নিগ্ধ বাতাস উপভোগ করার এই তো সময়। বসন্তের প্রতিটি ছোঁয়া যেন মনকে শিহরিত করে তোলে। শেষ প্রহরের বসন্তে এসেও মনে হয় সারা বছরই যদি এমন মন মাতানো আবহাওয়া থাকত? ঋতু বৈচিত্র্যের দেশে হয়ত তা ঘটবে না; তবে বসন্ত ঋতু মনে রাখা কিংবা উপভোগ করার মতো ঋতু। ছবি : আরিফ আহমেদ মডেল : নুসরাত ফারিয়া
×